
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যাত্রা শুরু করে ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর। এরপর থেকে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রধানত ৫টি সমস্যা মোকাবিলা করে। এগুলো হলো-ওভারহিট গাড়ি, চাকা পাংচার, জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়া, বিমানবন্দরের যাত্রীসেবা, দুর্ঘটনা ঘটা। এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর থেকে এ পর্যন্ত শুধু জানুয়ারি মাসে এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করা অবস্থায় ৯০টি গাড়ির ইঞ্জিনের সমস্যা দেখা দেয়। টায়ার ব্রাস্টের ঘটনা ঘটে ৫১টি, জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার ২০টি ঘটনা ঘটেছে। এর বাইরে এ পর্যন্ত বড় আকারের ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনার পেছনে রয়েছে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চলাচল। এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার আগে যে গাড়ির গতি ছিলো ১০ কিলোমিটার একই গাড়ির চালক এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠেই গতি তোলেন ১০০ কিলোমিটারের বেশি। এর ফলে ঘটে যায় দুর্ঘটনা। এই দুর্ঘটনা কমাতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে অধিক গতিতে চলাচল করলেই মামলা দিচ্ছে পুলিশ। গত রোববার ও গতকাল সোমবার ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। এসময় দ্রুত গতির গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়।
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠেই গাড়িতে গতির ঝড় তোলেন চালকরা। কর্তৃপক্ষের নির্ধারণ করে দেওয়া ৬০ কিলোমিটারের গতিবেগ টপকে ৮০, ৯০ এমনকি ১০০ কিলোমিটার গতিতেও গাড়ি চলে এই সড়কে। এরচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে এই সড়কে উঠেই চালকরা এমনকি ১৮০ থেকে ১৯০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালান। যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে এক্সপ্রেসওয়েতে স্পিড ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। পুলিশের হ্যন্ড ক্যামেরায়ও ধরা পড়ছে অধিক গতিতে চলা গাড়িগুলো। চলাচলের যোগ্য বাস, প্রাইভেটকার, ট্রাকসহ অন্য যানবাহনগুলোর জন্য সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। আর র্যাম্পে এ গতির সীমা সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার। তবে কর্তৃপক্ষের বেঁধে দেওয়া এই গতিবেগ কতজন চালক মেনে গাড়ি চালাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
গুলশান ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) জিয়াউর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ৬০ কিলোমিটারের গতিবেগ নির্ধারণ করা থাকলেও অনেকে এর চেয়ে বেশি গতিতে চলার চেষ্টা করেন। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির গতি বেশি থাকার কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য ট্রাফিক বিভাগ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানে অতিরিক্ত গতির গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
শুলশান ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট ইমরান হোসেন বলেন, অনেক গাড়ির চালকরা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে গতি বড়িয়ে দেন। কিন্তু আমরা ৮০ কিলোমিটারের নিচে থাকলে মামলা দিচ্ছি না। যেসব গাড়ি ৮০ কিলোমিটোরের বেশি গতিতে চলাচল করছে কেবল তাদেরকেই মামলা দিচ্ছি।
চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ৬০ কিলোমিটার গতি নির্ধারণ একটু কম হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। সর্বনি¤œ ৮০ করা হলে ভালো হতো। এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার পর নির্ধারিত গতি ৬০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে বেশিরভাগ গাড়িই ৮০-৯০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করে থাকে। এমনকি ফাঁকা থাকলে এ গতি ১০০ কিলোমিটারও পার হয়ে যায়। তবে আমরা মাঝেমধ্যে ৬৫ থেকে ৭০ আবার কখনও এর বেশি গতিতেও চালাই। যেহেতু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই যেতে পারছি, ফলে নির্ধারিত গতিতে যাওয়ায় ভালো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুর্ঘটনা এড়াতে এ বিষয়ে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। কীজন্য নির্ধারিত গতিতে চলতে হবে, ৭০ অথবা ৮০-তে গতি তোলা যাবে না, এ বিষয়ে চালকদের বোঝাতে হবে। উপরে ওভার স্পিডে গাড়ি চালালে কী কী সমস্যায় পড়তে হতে পারে, সে বিষয়গুলো নজরে আনতে হবে। টোল ফি দেওয়া সময় যখন একজন চালক ওভার স্পিডের কারণে জরিমানা গুণবেন, তখন তিনি সতর্ক হয়ে যাবেন। গতি কমিয়ে চালানোর পেছনের কারণগুলো চালকদের জানানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া টোল ফির সঙ্গে আইন অমান্য করার মামলার ফি যুক্ত করলে নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন না চালকরা।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অ্যাকসিডেন্ট রিসার্স ইনস্টিটিউটের (এআরআই) গবেষণা অনুযায়ী, যানজটের এই নগরীতে যানবাহনের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার। এই ধীরগতিতে দ্রুত চলাচলের জন্য নগরবাসীকে স্বস্তি দিয়েছে এক্সপ্রেসওয়ে। যদিও নিরাপদ চলাচলের জন্য গতির এই উড়াল সড়কে চলাচলকারীদের নিয়ম মেনে গাড়ি চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে শুরু থেকেই।
ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (অপারেশন ও মেইনটেনেন্স) কোম্পানি লিমিটেডের যানচলাচল, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক ক্যাপ্টেন (অব.) হাসিব হাসান খান বলেন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে ওভার স্পিডিংয়ের কারণে ভিডিও মামলা দেবে পুলিশ। ১০০ কিলোমিটারের বেশি গতিসীমা অতিক্রম করলে পুলিশকে মামলা দিতে বলবো। আমরা তাদের ওভারস্পিডিংসহ সব ধরনের অপরাধের ভিডিও সরবরাহ করবো। তারা ওই গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহন চলাচলে নিরাপদ ও দায়িত্বশীলতার জায়গা থেকে নীতিমালাগুলো ব্যবহারকারীদের মানতে হবে। মামলার তথ্যের উপর ভিত্তি করে একই গাড়ি তিন বারের বেশি গতিসীমা লঙ্ঘন করলে ভবিষ্যতে ওই গাড়ি এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।