
আর কয়েক দিনের মধ্যে আত্মপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দলের। তবে শুরুতেই দলের নেতৃত্ব নিয়ে শুরু হয়েছে টানাপোড়েন। তাই এখন নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখায় জোর দিচ্ছেন দলটির উদ্যোক্তারা।
জানা গেছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণ থেকে নতুন দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে। তবে দলের নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা ও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামই যে নতুন দলের আহ্বায়ক হচ্ছেন, তা মোটামুটি নিশ্চিত। তবে দলের শীর্ষ পদ ছয়টি নাকি নয়টি এ নিয়ে দলসংশ্লিষ্ট শীর্ষ নেতাদের মধ্যে আলোচনা এখনো চলছে। তাঁরা বলছেন, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সব পক্ষের নেতৃত্বকে সমন্বয় করে রাজনীতিতে ঐক্যের বার্তা দিতে চায় নতুন দল।
নতুন দল গঠনের সঙ্গে যুক্ত জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছেন, ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জাতীয় সংসদের সামনে অনুষ্ঠান করে নতুন দলের ঘোষণা দেওয়া হবে। এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে শতাধিক সদস্যের একটি প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি দুটি বৈঠক করে দলের আত্মপ্রকাশের সময়, অনুষ্ঠানের ধরন, শৃঙ্খলা, উপস্থিতিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেছে। দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র প্রণয়নের জন্যও একটি প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে।
দলসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, নতুন দলের আহ্বায়কের দায়িত্ব নিচ্ছেন নাহিদ ইসলাম। অন্য শীর্ষ পদগুলোর বিন্যাস এবং এগুলোতে কারা আসবে তা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া সব পক্ষকে সমন্বয়ের লক্ষ্যে শীর্ষ চার পদের ধারণা থেকে ছয় পদ তৈরি করা হয়েছে। তবে নেতারা বলছেন, তরুণ নেতৃত্বকে জাতীয় রাজনীতিতে জায়গা করে দেওয়ার লক্ষ্যে শীর্ষ আট, নয় বা দশ পদের বিন্যাস নিয়েও আলোচনা চলছে।
সূত্র বলছে, আজ রোববার উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তাঁর পদত্যাগের পরই দলের বাকিদের নাম চূড়ান্ত করা হবে।
দল গঠন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলের আহ্বায়ক, সদস্যসচিব, মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্রের সঙ্গে ‘সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক’ ও ‘সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব’ পদ তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও দুই থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ তৈরি করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। নেতারা বলছেন, ১৫১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হতে পারে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দল গঠনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকেই গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক নেতা;
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা এবং বামধারার বিভিন্ন সংগঠনের সাবেক নেতা ও মধ্যপন্থী নেতারা বিভক্ত হয়ে পড়েন। ছাত্রশিবিরের অংশটি আলী আহসান জোনায়েদকে সদস্যসচিব করার প্রস্তাব করলে এর বিরোধিতা করে অন্য দুই অংশ। এই দুই অংশ আখতারকেই সদস্যসচিব হিসেবে চাইছে। অন্য পদগুলো নিয়েও এই তিন পক্ষের মধ্যে মতানৈক্য দেখা গেছে। তবে একাধিক বৈঠকের পর এসব বিষয়ে অনেকটাই ঐকমত্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
সূত্র বলছে, দলের সদস্যসচিব পদ নিয়ে আখতার হোসেন ও আলী আহসান জুনায়েদকে নিয়ে মতানৈক্য তৈরি হলেও আখতার হোসেনই দলের সদস্যসচিব হচ্ছেন। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক পদে আলী আহসান জোনায়েদের ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব পদে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী আসতে পারেন। দলের মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র পদে আসতে পারেন সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহ। এ ছাড়া শীর্ষ ছয়টি পদের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ পদের আলোচনায় আছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, তাসনিম জারা, আরিফুল ইসলাম আদীব, যুগ্ম সদস্যসচিব অনিক রায়, মাহবুব আলম, অলিক মৃ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ।
নতুন দল ও নেতৃত্ব প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দলের আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলামের বিষয়ে সকলেই একমত। তবে অন্যান্য পদ নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের সব পক্ষের নেতাদের নতুন দলে সমন্বয়ের চেষ্টা চলছে। এ জন্য বিভিন্ন ধরন, বিন্যাস নিয়ে আলোচনা চলছে। শীর্ষ ছয় বা আট, দশ পদ নিয়েও আলোচনা চলছে।’
আখতার আরও বলেন, ‘অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সকল পক্ষই নতুন দলে ভূমিকা রাখতে চায়। নতুন দল যেহেতু অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রক্রিয়ায় এগোবে, তাই নেতৃত্বেও এর প্রতিফলন থাকবে। নেতৃত্বের আধিক্যের ফলে বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন হচ্ছে।’
দল গঠনকে কেন্দ্র করে নাগরিক কমিটির ডান, মধ্য ও বামপন্থী নেতাদের বিভক্ত হয়ে যাওয়া এবং সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে আখতার বলেন, ‘অভ্যুত্থানে সকলেই অংশ নিয়েছে। তারা তাদের অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরছে। এর সঙ্গে দলগঠন প্রক্রিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।’
শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ক নতুন একটি ছাত্রসংগঠনের আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন। ছাত্রসংগঠনটির নামও এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ছাত্রদের এই সংগঠনটি স্বতন্ত্র একটি ছাত্রসংগঠন হিসেবে কাজ করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, স্বতন্ত্র সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও কৌশলগতভাবে নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই এই নতুন ছাত্রসংগঠন তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
নতুন এই ছাত্রসংগঠন আত্মপ্রকাশের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে গঠনতন্ত্র প্রস্তুত করেছে। ছাত্রসংগঠনের কেন্দ্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ঘোষণার মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটবে সংগঠনটির। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির আহ্বায়ক হচ্ছেন আবু বাকের মজুমদার, সদস্যসচিব হিসেবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান ও তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরীর নাম আলোচনায় রয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক হচ্ছেন আবদুল কাদের। অন্যান্য পদ নিয়ে আলোচনা চলছে। তবে উভয় কমিটির মুখপাত্র পদে আন্দোলনের সামনে থাকা নারীরা নেতৃত্বে আসবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা।