![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/1e2e56797d13cd1aa79db03b36c6bab1.png)
ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আশ্বাস পাওয়ার পরও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখতে দেশব্যাপী সমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। তবে ভিন্ন অবস্থানে জামায়াতে ইসলামী। তারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর চাপ তৈরি করতে চায় না।
তবে সারাদেশে ফ্যাসিস্ট দল আওয়ামী লীগ নেতাদের স্থাপনায় দুদিন ধরে ভাঙচুরের ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে গত সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি নেতারা। সেই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের আশ্বাস পাওয়ার কথা জানান তারা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আশ্বাসে ভরসা বা বিশ্বাস রাখতে চান। কিন্তু বিএনপিতে সন্দেহও আছে। সেকারণে নির্বাচনের চাপ অব্যাহত রাখতে তারা মাঠের কর্মসূচি নিয়েছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি যে নতুন দল গঠন করছে, এর পেছনে সরকারের একটা অংশের সমর্থন রয়েছে বলে বিএনপি নেতাদের ধারণা। আর সেকারণে তারা মনে করেন, সরকারের ভেতরে কারও কারও নির্বাচন প্রলম্বিত করার চিন্তা থাকতে পারে।
ফলে সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না পাওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের সময় নিয়ে নিশ্চিত হতে পারছে না বিএনপি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেন, নির্বাচিত সরকার এলে দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সমস্যাসহ সব সঙ্কটের সমাধান সম্ভব। সেজন্য তারা প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চাইছেন।
নির্বাচন নিয়ে বিএনপির চাপের কারণে সরকারের সঙ্গে তাদের দূরত্ব আরও বাড়বে কি না- এই প্রশ্নও আসছে।
তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, তারা সরকারের সঙ্গে মুখোমুখি কোনো অবস্থানে যেতে চান না। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হবে, সরকারের এ আশ্বাসে তারা বিশ্বাস রাখতে চান।
নির্বাচনের সময় নিয়ে বিএনপির অবস্থানের প্রতি সমর্থন রয়েছে দলটির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোর।
তবে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামপন্থী কিছু দলের অবস্থান ভিন্ন। আগে এই দলগুলো সার্বিকভাবে সংস্কারের পর নির্বাচন করার পক্ষে ছিল। সে অবস্থান থেকে সরে এসে তারা এখন নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ভোট চাইছে। কিন্তু এখন বিএনপির সঙ্গে তাদের ভিন্নমত হচ্ছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে।
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা প্রয়োজন। এটাই তাদের দলীয় অবস্থান।
আর বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্য কোনো নির্বাচন মানবে না, দলের এই অবস্থান তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়ে দিয়েছে। সরকার দিক থেকে অবশ্য এখনও অবস্থান স্পষ্ট করা হয়নি।
আমার বাংলাদেশ পার্টি বা এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, সব দলের মতামত বিবেচনায় নিয়েই সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে কার লাভ কার ক্ষতি?
জাতীয় নির্বাচন আগে করার চিন্তার পেছনে যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, তৃণমূলের ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি করপোরেশন পর্যন্ত, স্থানীয় সরকারের কোনো স্তরেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই। ফলে জন্ম নিবন্ধন সনদ থেকে শুরু করে নাগরিক নানা সুবিধা পেতে সাধারণ মানুষকে ভেআগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এছাড়া স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে নতুন নির্বাচন কমিশন ও সরকারের জন্য অভিজ্ঞতা হবে। সেই অভিজ্ঞতা জাতীয় নির্বাচন করার ক্ষেত্র সহায়ক হবে। সরকারের দিক থেকে এ ধরনের যুক্তি এসেছে। একই বক্তব্য তুলে ধরছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। জামায়াতে ইসলামীও একই যুক্ত দেখিয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে চাইছে।
এ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিএনপিতে। দলটির নেতাদের অনেকে মনে করেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে হলে, সেই জনপ্রতিনিধিদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নতুন দল গঠনের ক্ষেত্রে তৃণমূলের ভিত্তি হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা হতে পারে। কারণ যেহেতু নতুন দল গঠনের সরকারের সহযোগিতা থাকতে পারে, এমন অভিযোগ রয়েছে।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। এই দুই সংগঠনের নেতাদের অনেকে অবশ্য সংস্কার শেষ করার পরই নির্বাচন করার ব্যাপারে বক্তব্য দিয়ে আসছেন।
কী হাল হবে সংস্কারের?
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ দলগুলো এখন নির্বাচনের জন্য ন্যূনতম সংস্কার করার ব্যাপারে একটা অভিন্ন অবস্থানে এসেছে।
সার্বিকভাবে সংস্কার ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের। তারা মনে করে, সংবিধানসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে সরকার করবে নির্বাচিত সরকার।
সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচারবিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ ও জনপ্রশাসন, এই ছয়টি ক্ষেত্রে সংস্কারের ছয় কমিশন তাদের সুপারিশ সরকারকে দিয়েছে। তারা তাদের প্রতিবেদন সমন্বয়ও করেছে।
এই ছয়টি সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করতে যাচ্ছে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি। সেদিন ওই অনুষ্ঠানে সক্রিয় সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে কমিশন তাদের সমন্বিত সুপারিশ ও কাজ সম্পর্কে অবহিত করা হবে। এরপর কমিশন দলগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে বৈঠকে করবে।
সরকারের একজন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, নির্বাচনের জন্য ন্যুনতম সংস্কার করা হবে। সার্বিকভাবে সংস্কারের কোন কোন বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর আলোচনায় একমত হয়, তা চূড়ান্ত করে নির্বাচিত সরকারের জন্য রাখা হবে। এ ব্যাপারে দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির চেষ্টা থাকবে।
সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর এই সংলাপ থেকেই নির্বাচনের রোডম্যাপ ঠিক করা সম্ভব হবে বলে সরকার মনে করছে। দলগুলো অবশ্য এখনও রোডম্যাপ ও সংলাপের জন্য অপেক্ষার কথা বলছে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা