![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/871f8c8f174ac48444b5c37989974550.png)
আর বছর পাঁচেকের মধ্যেই বিশ্বজুড়ে বদলে যাবে চাকরির বাজার। প্রযুক্তির দ্রুত বিকাশ, বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), বিগ ডেটা এবং সাইবার সিকিউরিটির মতো ক্ষেত্রে বিপুল কর্মসংস্থান তৈরি হবে। একইসঙ্গে কিছু প্রচলিত চাকরি বিলুপ্তির মুখে পড়বে।
‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম’ (WEF)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন, ‘ফিউচার অব জবস রিপোর্ট ২০২৫’, ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের রূপরেখা তুলে ধরেছে। বিশ্বের ১,০০০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠানের ১৪ মিলিয়ন কর্মীর উপর পরিচালিত এই সমীক্ষা দেখিয়েছে, আগামী দিনে তিনটি পেশার চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকবে— সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট প্রফেশনালস, এআই ও মেশিন লার্নিং স্পেশালিস্ট এবং বিগ ডেটা স্পেশালিস্ট।
কেন এত দ্রুত বদলাচ্ছে চাকরির বাজার?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে চাকরির বাজারে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আনবে এআই। বিশ্বব্যাপী এআই-সম্পর্কিত দক্ষতার চাহিদা বাড়ছে, বিশেষ করে ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানকার তরুণরা জেনারেটিভ এআই-প্রশিক্ষণের দিকে ঝুঁকছেন, যা ভবিষ্যতের চাকরির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সোপান হয়ে উঠছে। এমনকি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে শুধু ডিগ্রির উপর নির্ভর না করে দক্ষতার উপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
প্রযুক্তির পাশাপাশি আরও কোন খাতে বাড়বে চাকরি?
চাকরির বাজারে শুধুমাত্র প্রযুক্তি নয়, আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে বড় পরিবর্তন আসবে। কেয়ার, শিক্ষা, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির মতো খাতেও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার পরিকল্পনা করছে। তবে ৪১ শতাংশ নিয়োগকর্তার ধারণা, এআই-এর কারণে কিছু চাকরি কমেও যেতে পারে।
কোন কোন চাকরির সংখ্যা কমতে পারে?
গ্রাফিক ডিজাইন, প্রশাসনিক সহকারী (অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট) এবং কিছু রুটিন ভিত্তিক চাকরির চাহিদা ধীরে ধীরে কমবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তবে কৃষক, ডেলিভারি ড্রাইভার এবং শিক্ষকদের মতো মৌলিক পেশার চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। অর্থাৎ, প্রযুক্তি যতই অগ্রসর হোক, কিছু কিছু মানবিক ও মৌলিক পেশা অদূর ভবিষ্যতেও গুরুত্বপূর্ণ থেকে যাবে।
নতুন যুগে চাকরির জন্য কোন দক্ষতা প্রয়োজন?
WEF-এর মতে, ভবিষ্যতের চাকরির বাজারে টিকে থাকতে গেলে শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করলেই চলবে না, বরং মানবিক দক্ষতাও প্রয়োজন হবে। ধৈর্য, সহনশীলতা, সৃজনশীলতা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা— এসব গুণ আগামী দিনের কর্মীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কারণ, এআই বা মেশিন লার্নিং যতই উন্নত হোক না কেন, মানুষের আবেগ-অনুভূতি এবং সৃজনশীলতার বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি।
দক্ষতার ঘাটতি কীভাবে পূরণ করা সম্ভব?
রিপোর্টে জোর দেওয়া হয়েছে স্কিল ডেভেলপমেন্টের উপর। বিশ্বব্যাপী ৫৯ শতাংশ কর্মীর প্রয়োজন বিশেষ প্রশিক্ষণ, যাতে তারা নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন। অর্থাৎ, পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর জন্য এখনও বেশিরভাগ চাকরিপ্রার্থী প্রস্তুত নন। সরকার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতের কর্মশক্তি দক্ষতার সঙ্গে কাজের বাজারে প্রবেশ করতে পারে।
চাকরির বাজারের পরিবর্তনের মূল কারণ কী?
চাকরির বাজার শুধু প্রযুক্তিগত অগ্রগতির কারণে বদলাবে না, বরং রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের প্রভাবও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।
ভবিষ্যতের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত?
নতুন যুগের চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে কর্মীদের নিজেদের দক্ষতার উন্নয়ন করতে হবে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ শেখার পাশাপাশি মানবিক গুণাবলীর চর্চাও করতে হবে। শুধু চাকরি পাওয়াই নয়, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে টিকে থাকার কৌশল রপ্ত করাটাই হবে ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।