![Image description](https://content.bdtoday.net/files/img/202502/f13f297c637f39c73f4150e812abd9bc.png)
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশের দিনক্ষণ, নাম, গঠনতন্ত্র, ঘোষণাপত্র ও মূল নেতৃত্বে কারা থাকছেন, এ নিয়ে সব মহলে বাড়ছে কৌতূহল। বিষয়গুলো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভাব্য দলটির প্রায় দেড়শ সদস্য। তারা প্রতিনিয়ত দেশের প্রায় দুই ডজন সিনিয়র সিটিজেনের সঙ্গে যোগাযোগ ও পরামর্শ করেছেন। ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে এই দলের আত্মপ্রকাশ হতে পারে। এমনটাই জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক নেতা।
দল ঘোষণার দিনক্ষণ সম্পর্কে তারা বলছেন, আগামী ২০ অথবা ২২ ফেব্রুয়ারি আসতে পারে নতুন দলের ঘোষণা। আর দলের প্রধানের দায়িত্ব নিতে পারেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয় বরং শলাপরামর্শ পর্যায়ে আছে। প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে পরবর্তী সময়ে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ দল গঠন করা হবে। আহ্বায়ক কমিটিতে কাকে কোন পদে রাখা হবে, সেটি নিয়েও চলছে নানান আলোচনা ও পরামর্শ। একটি সূত্র জানিয়েছে, শুরুতে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হতে পারেন প্রায় ৩০ জন। পরে এর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে। দলের সদস্য সচিব হিসেবে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, আলী আহসান জোনায়েদ, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আব্দুল হান্নান মাসুদ, সামান্তা শারমিনসহ বেশ কয়েকজনের নাম আলোচনায় রয়েছে।
একাধিক সমন্বয়ক কালবেলাকে বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা এ দুই প্ল্যাটফর্মের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিল, তাদের সমন্বয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানান আলোচনা চলছে। দলের নাম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ, গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, কর্মপদ্ধতি নির্ধারণের কাজ করা হচ্ছে। তবে কাজ এখনো শেষ হয়নি। এসব কাজ এগিয়ে নিতে অঘোষিতভাবে একটি টিম গঠন কাজ করছে। এসব কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বে থাকা সদস্য ও সিনিয়র সিটিজেনসহ প্রায় দেড় শতাধিক সদস্য। একই সঙ্গে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে দেশের মানুষের কাছে দলের সম্ভাব্য নাম ও প্রতীক চেয়েছে। অনলাইন ফ্ল্যাটফর্মে দেওয়া ফরমে এসব মতামত চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশের মানুষের চিন্তা, প্রত্যাশা, পরামর্শ চেয়ে একটি গুগল ফরম ছেড়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। সেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানান, দেশের বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা বৈষম্যবিরোধীদের সমন্বয় দলের উপদেষ্টা পরিষদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলেও থাকবেন তারা। এসব ব্যক্তির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখ সারিতে থাকা নেতারা। তবে আহ্বায়ক কমিটির আগে গঠনতন্ত্র তৈরি না হলেও দলের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা হবে। পরে দলের গঠনতন্ত্র প্রকাশ করা হবে। দলের নাম, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ, গঠনতন্ত্র এবং ঘোষণাপত্র প্রণয়ন, কমিটি গঠন, কর্মপদ্ধতি নির্ধারণের কাজ সংগঠনের যে সদস্যরা যে বিষয়ে অভিজ্ঞ, তাদের সে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কাজের অগ্রগতি জানতে সংগঠনটির সম্মুখ সারির নেতারা নিয়মিত বৈঠক করেছেন। আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হলেও ঈদের পর কাউন্সিলের মাধ্যমে দলীয় কাঠামো ঠিক করা হবে। বৈষম্যবিরোধীদের ভাষ্যমতে, দলের আহ্বায়ক হিসেবে নাহিদ ইসলামের নাম অনেকটাই চূড়ান্ত হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের সামনে রেখেই নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার প্রস্তুতি চলছে। এ ছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির আখতার হোসেন, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, আলী আহসান জোনায়েদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ, আরিফ সোহেল, নাগরিক কমিটির সামান্তা শারমিন, সারজিস আলম, হান্নান মাসুদ, উমামা ফাতেমাসহ কয়েকজনের নাম রয়েছে আলোচনায়।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, মার্চের শুরুতেই রোজা। তার আগেই রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ হবে। আগামী ২০ বা ২২ তারিখে দল ঘোষণার দিনক্ষণ আসতে পারে। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টার মধ্যে থেকে কয়েকজন নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন। সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে পদত্যাগ করার প্রক্রিয়া চলছে। রাজনৈতিক দল গঠন করে পুরো রমজান মাস অর্থাৎ পুরো মার্চজুড়ে ইফতার মাহফিল, আলোচনা সভাসহ সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে নতুন দলের। প্রথমে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হলেও এবং ঈদের পর কাউন্সিলের মাধ্যমে দলীয় কাঠামো ঠিক করা হবে। আহ্বায়ক কমিটির পর নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা হবে।
আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে সংগঠনের শক্তি প্রদর্শন করতে চায় বৈষম্যবিরোধীরা। দল গঠনের পর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহত ও নিহতদের স্মরণে সভা-সেমিনারের আয়োজন করে মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম জোরদার করে আলোচনায় থাকবে। এসব সভা-সেমিনারে চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও সন্ত্রাসীদের ভোট না দিতে জনগণকে উৎসাহিত করা হবে। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অনিয়ম, লুটপাট এবং দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ভিন্ন নামে থাকলেও একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এ দেশের ফ্যাসিবাদ বিলোপ, পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতির ক্ষমতা থেকে জনগণকে মুক্তি দেওয়া, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনা ছড়িয়ে দেওয়া এবং সাংগঠনিক ভিত্তি শক্তিশালী করা—এসব এজেন্ডা সামনে রেখে সংগঠন দুটি কাজ করছে। নেতারা নিয়মিত বক্তব্য-বিবৃতির মাধ্যমে জনগণের আস্থা ধরে রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশ নিয়ে সক্রিয়তা প্রদর্শন করছেন।
বৈষম্যবিরোধীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠনের যেসব থানা ও জেলায় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে ও হবে তারাও নতুন রাজনৈতিক দলের ছায়ায় নির্বাচনের মাঠে থাকবে, এবং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে তারা।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব কালবেলাকে বলেন, বৈষম্যবিরোধীদের সমন্বয়ে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করা হচ্ছে। এই দলের ঘোষণাপত্র, গঠনতন্ত্র ও দলের নাম চূড়ান্তসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজে এখনো চলমান। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তথা এই দুই প্ল্যাটফর্মের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে জড়িত ছিল তাদের সমন্বয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করা হচ্ছে। দল গঠনে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শসহ নানান বিষয়ে দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তবে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে দল আত্মপ্রকাশে আসতে পারে। দলের বিভিন্ন দিক নিয়ে দেড় শতাধিক সদস্য কাজ করছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির দপ্তর সম্পাদক মনিরা শারমিন কালবেলাকে বলেন, দলের নাম এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। দলের গঠনতন্ত্র ও নাম চূড়ান্তের কাজ চলছে। ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে কাজ শেষ হলে দল আত্মপ্রকাশে আসতে পারে। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে অনলাইনে দেশের মানুষের কাছে দলের নাম, প্রতীক চেয়েছে এবং পাশাপাশি দেশের মানুষের মতামত চাওয়া হয়েছে। দলের বিভিন্ন দিক নিয়ে দেড় শতাধিক লোক কাজ করছে।