গুম, অপহরণ ও খুনের ধারাবাহিক ঘটনায় সারা দেশের মানুষ আজ ভীত ও আতঙ্কিত। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের মর্মান্তিক সাত খুনের তাণ্ডব দেশে জননিরাপত্তা বিধানে সরকারের সক্ষমতাকেই শুধু নয়, সিভিল রুলের কার্যকারিতাকেও জোরালো প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজনের লাশ উদ্ধারের পর নিহত নজরুলের শ্বশুরই প্রথম অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছিলেন লীগ সরকারের মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা ও র্যাব-১১'র অধিনায়ক লে. কর্নেল (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ আরও দুই র্যাব কর্মকর্তার দিকে। ইতিমধ্যে মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্য-উপাত্ত থেকে অভিযোগের সত্যতা বেরিয়ে আসছে। বোঝা যাচ্ছে, নৃশংস সেই ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্তদের সংশ্লিষ্টতা ছিল। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সাতজনকে অপহরণ, হত্যা এবং নানা ক্রিয়াকলাপ সম্পন্ন করে সাতটি লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ডুবিয়ে দেওয়ার দীর্ঘ নারকীয় কর্মযজ্ঞ কি ওই তিনজনই সম্পন্ন করেছে? না, বিশ্বাস হয় না। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকাই বা কি ছিল? হত্যা মামলার প্রধান আসামি ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন কোথায় আছে, কোথায় গেছে তা নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘটনার পরপরই বদলি হওয়া ও প্রাইজ পোস্টিং পাওয়া ডিসি ও এসপি জানে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সব জানা যাবে বলে নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম যে অভিযোগ করেছেন, তাতে মনে হয় ওই দুজনকেও সন্দেহের তালিকার বাইরে রাখা যায় না। কেননা, ভদ্রলোকের প্রথম অভিযোগ যখন সত্য বলেই ধরে নেওয়া যায় (সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর তিন র্যাব কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক অকালীন অবসর দেওয়া হয়েছে এবং তাদের সেনানিবাসের লগ এরিয়ায় নজরদারিতে রাখা হয়েছে) তার দ্বিতীয় ও তৃতীয় অভিযোগও হয়তো মিথ্যা নয়। তিনি তৃতীয় অভিযোগ করেছেন ঢাকা মহানগর লীগের সাধারণ সম্পাদক ও লীগ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রীর পুত্র দীপু চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তিনি বলেছেন, কর্নেল তারেকের সঙ্গে মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের সম্পর্ক গড়ে দেন দীপু এবং তার মাধ্যমেই টাকা লেনদেন হয়েছে। পাঠক, তাহলে সংঘটিত অপরাধের ব্যাপারে তদন্ত শুধু তিন সেনা ও নৌবাহিনী কর্মকর্তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলেই চলবে না। তদন্তের পরিধি আরও বিস্তৃত করতে হবে, হাত দিতে হবে উৎসে। খুঁজে বের করতে হবে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল স্বার্থ কার বা কাদের ছিল। যাদের প্রত্যক্ষ হত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, বোঝা যায় তারা শুধু টাকার বিনিময়ে কাজটি করে দিয়েছে এবং টাকাটা দিয়েছে তারাই- হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল স্বার্থ যাদের। নজরুলের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। অন্যরা প্রাণ হারালেন নজরুলের কারণে। তাহলে স্বার্থটা হতে পারে রাজনৈতিক, প্রভাব প্রতিপত্তির- যার মূল্য ছয় কোটি টাকার চেয়ে অনেক বেশি।
এমন একটি হৃদয়বিদারক ভয়ঙ্কর ঘটনায় সরকারের ভূমিকা প্রশ্নাতীত নয়। তারা কাজ দেখালেন র্যাব কর্মকর্তা, ডিসি, এসপিকে নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রত্যাহার করে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তাদেরই বাকি কাজ সম্পন্ন করতে বাধ্য করা উচিত ছিল। কেউ কেউ বলেন, বিভ্রান্তি ছড়িয়ে গণরোষ প্রশমনের জন্য তা ছিল সরকারের একটি চতুর কৌশল। কোনো কোনো অপরাধবিজ্ঞানীর মতে, এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সরকার যেন কাউকে না কাউকে আনুকূল্য দিতে চেয়েছে। ডিসি, এসপি তো সব দোষ র্যাবের তিন কর্মকর্তার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজেরা দায় মুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। ন্যায্য হতো ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের দুজনকেও শাসপেনশনে রাখা, নিদেনপক্ষে ওএসডি করে তাদের ওপরও নজরদারি চালানো। তাদের ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত না পাল্টালে এ জন্য আজ না হোক কাল, কাল না হোক পরশু লীগ সরকারকে মাশুল দিতে হতে পারে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য তো গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতো। এত বড় নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড নিয়ে সারা জাতি যখন ভীত, সন্ত্রস্ত, তখন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তার বক্তব্য তো সেই বিএনপি আমলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর 'আল্লাহর মাল আল্লায় নিছে' বক্তব্যেরই সমতুল্য। দেখেশুনে মনে হয়, এ যেন সেই 'রোম পোড়ে আর নীরো 'বাঁশি বাজায়'-এর মতো ঘটনা! আশ্চর্য! একমাত্র প্রবীণ রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছাড়া শাসকলীগ বা লীগ সরকারের কেউ তার বক্তব্যের কোনো বিরোধিতা বা সমালোচনা করলেন না, এমন উন্নাসিক বক্তব্যের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে বক্তব্য সংশোধনের জন্যও কেউ বললেন না। তবে কি ধরে নেব, সরকারের মনোভঙ্গিরই প্রকাশ ঘটেছে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। বিএনপি-জামায়াত জামানায় প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব নিজের কব্জায় রেখেছিলেন। তার পক্ষে মন্ত্রণালয় চালাতেন প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি একটু মিলিয়ে দেখবেন, এমন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় নিয়ে এ ধরনের অবিমৃশ্যকারিতার ফল কী হয়? আর এটা বুঝতে কি কারও খুব অসুবিধা হওয়ার কথা যে, ক্ষমতাসীন দলে প্রবীণ ও অভিজ্ঞ লোক থাকার পরও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর মন্ত্রণালয়ে বাবর সাহেব বা কামাল সাহেবদের কেন দায়িত্ব দেওয়া হয়? এই মন্ত্রণালয়টি দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করার কথা। মন্ত্রণালয়ের অধীন রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বও সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা। কিন্তু আমাদের খারাপ অভিজ্ঞতা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয় এসব বাহিনী এখতিয়ারবহিভর্ূত কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ে এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে-দলনে ক্ষমতাসীন সরকারের লেঠেল হিসেবে কাজ করে। সরকার যখন বাহিনী সদস্যদের দলীয় ক্যাডার হিসেবে যথেচ্ছ ব্যবহার করতে থাকে, কখনো অপারেশন ক্লিনহার্ট, কখনো অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট আবার কখনো বা ক্রসফায়ার-বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে তাদের ব্যবহার করে বা ব্যবহৃত হতে বাধ্য করে তখন তাদের মধ্যেও ব্যক্তিস্বার্থে অপরাধপ্রবণতা জন্ম নেয়। আত্দীয়স্বজন বা দলীয় অনুগত লোক বেছে বেছে যখন গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে পোস্টিং দেওয়া হয় তখন আত্দীয়তার বা দলীয় পরিচয়ের সূত্র তাদের অপরাধ সংঘটনে আরও বেশি বেপরোয়া করে তোলে। 'মামুর' জোরকে তারা অতিরিক্ত জোর হিসেবে কাজে লাগায়। মুষ্টিমেয় লোকের এ ধরনের খারাপ প্রবণতা বাহিনীগুলোর উজ্জ্বল ভাবমূর্তিকেও ম্লান করে দেয়।
এখন প্রায়শই মিডিয়ায় খবর আসে গুম, অপহরণ ও অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যকলাপে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যও জড়িয়ে পড়ছে। কোথাও বা তাদের নাকের ডগায় ঘটছে বড় বড় অপরাধ অথচ তারা দর্শক বা সাহায্যকারী। অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, কোথাও কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে মানুষের মনে একটা সন্দেহ জাগে যে, এর সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যুক্ত কিনা বা তাদের কোনো যোগসাজশ আছে কিনা। এমন সন্দেহ দূর করা যাচ্ছে না, বরং তা বাড়ছে। এটা কোনো ভালো কথা নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর থেকে এতে মানুষের আস্থা চলে যায়। সরকার নারায়ণগঞ্জ থেকে একসঙ্গে ৪০ জন এসআই আর ৩৯ জন এএসআইকে প্রত্যাহার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি শুধু নারায়ণগঞ্জবাসীরই নয়, দেশবাসীরও সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার বোঝাতে চেয়েছে প্রত্যাহৃত সব কর্মকর্তাই অপরাধ সংঘটনের সঙ্গে জড়িত। এই ওসি, এসআই, এএসআইরা আবার তো অন্য কোথাও পোস্টিং পাবেন। তারা যেখানে যাবেন সেখানকার মানুষ কি তাদের ওপর আস্থা রাখতে পারবে? জনগণের এই আস্থাহীনতা কিন্তু বিপজ্জনক। এক. অবিশ্বস্ততার কারণে জনগণ এই বাহিনীকে কোনো প্রকার আন্তরিক সহযোগিতা করে না, এরা বন্ধু হতে পারে ভাবতেই পারে না। এতে বাহিনীর মোরাল নষ্ট ও দুর্বল হয়ে যায়। লক্ষ্য অর্জনে সাহসী ভূমিকা রাখতে পারে না; বারবার ব্যর্থ হয়। দুই. রাষ্ট্র ও সমাজদ্রোহী অপকর্ম দমনে ও নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর্যুপরি ব্যর্থতায় ক্ষুব্ধ-আতঙ্কিত জনগণ দ্রোহী হয়ে ওঠে এবং তাদের মধ্যে আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার একটা বেপরোয়া অথচ ভয়ঙ্কর প্রবণতা জন্ম নেয়। জনগণ নিজেরাই নিজেদের জান-মাল-ইজ্জতের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নিলে সিভিল রুল তখন ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার আরেক বিপদ দেখা দেয়।
নারায়ণগঞ্জের ঘটনা নিয়ে নানা কথা বলা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে র্যাব-১১ এর তিন কর্মকর্তার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে। ওই তিন কর্মকর্তা র্যাবের না হয়ে পুলিশ-বিজিবিরও হতে পারত। তাহলে কি পুলিশ বাহিনী বা বিজিবি বিলুপ্ত করার কথা বলা যুক্তিযুক্ত হতো? অথচ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব র্যাব বিলুপ্তির কথাই বলেছেন প্রকারান্তরে। লীগ নেতা শামীম ওসমানও আঙ্গুল তুলেছেন র্যাবের দিকে। অথচ সমগ্র র্যাব প্রতিষ্ঠান এর সঙ্গে জড়িত নয়। এটা খুবই দুঃখজনক যে, ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ বিচার ও শাস্তির বিষয় নিশ্চিত করার ওপর চাপ দিচ্ছে না বিরোধী দল। চলছে ব্লেইম গেইম। প্রধানমন্ত্রী এবং তার সরকার ও দলীয় লোকজন বলছেন, বিএনপি-জামায়াত এর জন্য দায়ী, তারাই গুম-হত্যার রাজনীতি করে। অপরদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দলের নেতারাও সরকার ও সরকারি দলকে দায়ী করছেন। এতে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালে চলে যাচ্ছে কিনা তা ভাবছেন না কেউ। আসলে এটা আমাদের রাজনীতির দৈন্য বা রাজনীতির বর্তমান অসুস্থতা। এটা বোঝার জন্য অপরাধবিজ্ঞানী হওয়ার প্রয়োজন নেই যে, যারা সমাজে, রাষ্ট্রে বড় বড় অপরাধ সংঘটিত করে তারা যখন দেখে ও বোঝে যে, যারা অপরাধ ও অপরাধীদের দমন করবেন তারা অপরাধীদের চেয়ে দুর্বল বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরাধীদের ওপর নির্ভরশীল কিংবা দমনকারীর পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায় তখন তারা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সমাজে ও রাষ্ট্রে এমন অপহরণ, খুন-খারাবি, হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যাংক লুট (দমনকারী যখন বলেন চার সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই নয়), পদ্মা সেতু দুর্নীতির মতো বিশ্ব কাঁপানো দুর্নীতি তখনই সংঘটিত হতে পারে, চলতে পারে বিশেষ কোনো ভবনকেন্দ্রিক দুর্নীতি-লুণ্ঠনের মচ্ছপ।
চূড়ান্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ সব কিছুর পেছনে আমাদের দেশের নষ্ট রাজনীতির বা রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়নের একটা প্রচ্ছন্ন হাত আছে। তাই এখন আওয়াজ উঠেছে দেশকে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির হাত থেকে মুক্ত করার। দুই হাজার সাত সালের জুন মাসে বিএনপির সাবেক মহাসচিব যখন তার উত্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবে এই রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন নিমর্ূলের আওয়াজ তুলেছিলেন তখন অনেকে তা বাঁকা চোখে দেখেছিলেন। এটা আজ খুব জোরেই বলা হচ্ছে যে, রাজনীতির ওপর এখন প্রকৃত ও রাজনৈতিকভাবে সুশিক্ষিত রাজনীতিবিদের নিয়ন্ত্রণ নেই। ব্যবসায়ী, কালো টাকার মালিক, অস্ত্রবাজ ও অবসরপ্রাপ্ত সামরিক-বেসামরিক আমলাদের দখলে চলে গেছে রাজনীতি। রাজনৈতিক দলে ও রাষ্ট্র পর্যায়ে গণতন্ত্র, নীতি ও আদর্শের কোনো চর্চা নেই। নীতিবান ও আদর্শবাদীদের কোনো ঠাঁই নেই বড় বড় দলে। রাজনীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থকড়ি কামাই, বিত্তবৈভব গড়ে তোলার একটি অবলম্বন, সফল ও লাভজনক বিনিয়োগ। এই উদ্দেশ্যে এখানে লড়াই চলছে নির্বাচন ছাড়া, ভোটাভুটি ছাড়া ক্ষমতা কব্জায় রাখার অথবা যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা দখল করার জন্য। ক্ষমতায় যেতে পারলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী হয়ে যায় ক্ষমতাসীনদের দলীয় বাহিনী। মিলেমিশে চলে অনাচার। আর এই নষ্ট রাজনীতির কষ্ট ভোগ করে জনগণ। বর্তমানে আমরা একটি অস্বাভাবিক নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের শাসনে আছি। এটা সামরিক সরকারও নয়, প্রকৃত নির্বাচিত সরকারও নয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি ছিল নজিরবিহীন। ৩০০ আসনের ১৫৩টিতেই কোনো নির্বাচন, কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়নি। আর ওই রকম একটা নির্বাচন-নির্বাচন খেলায় বর্তমান শাসকদের ভরসা ছিল প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করে রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহারের সুযোগ নিয়েছে তারা। 'সার্ভিস চার্জ' এখন তারা তুলে নেবে না? গণরায়হীন দুর্বল সরকারের পক্ষে 'সেবাগ্রহীতা' হিসেবে প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় না। তাই সব অপরাধ-অপকর্ম রোধে প্রকৃত গণনির্বাচিত আস্থাশীল একটি সরকার গঠন জরুরি- হোক তা লীগ সরকার কিংবা বিএনপি সরকার অথবা আমজনতার সমর্থিত সরকার। তাতে জনগণের কষ্ট লাঘব হবে। তা না হলে নারায়ণগঞ্জের মতো নির্মম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে বারবার। কিছু দিন মিডিয়ায় হৈচৈ হবে, আবার আমিনবাজারের ছয় ছাত্র হত্যা অথবা সাগর-রুনি হত্যার ঘটনার মতো বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।
(বাংলাদেশ প্রতিদিন)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন