|
মুহাম্মদ রুহুল আমীন
|
|
ইউক্রেনীয় সংকটের নেপথ্যে
18 Mar, 2014
ইউক্রেনের অধীনে কৃষ্ণসাগরের স্বায়ত্তশাসিত এলাকা ক্রিমিয়ায় অবস্থিত রাশিয়ার নৌবহর (ইষধপশ ঝবধ ঋষববঃ ইধংব) রক্ষার অজুহাতে এবং ইউক্রেন ও ক্রিমিয়ায় বসবাসরত রুশ ভাষীদের নিরাপত্তা বিধানের কারণ দেখিয়ে ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার মাত্রাতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশকে কেন্দ্র করে ইউক্রেনীয় সংকট শুরু হয়। রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র পোল্যান্ডে ১২টি জঙ্গি বিমান মোতায়েন করেছে এবং তিন শতাধিক সামরিক অফিসার পাঠিয়েছে। পাশ্চাত্য সামরিক জোট ন্যাটো পোল্যান্ড, রুমানিয়াসহ কৃষ্ণসাগরের তীরবর্তী রাষ্ট্রগুলোতে গোয়েন্দা বিমান পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনি অবস্থায় অত্রাঞ্চলে একটি ভয়াবহ যুদ্ধের পূর্ববর্তী পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় এ ভয়াবহ সংকট থেকে পরিত্রাণের উপায় অন্বেষণ করতে হলে প্রথমেই ইউক্রেনীয় সংকটের নেপথ্য ঘটনাগুলোর চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হবে।
ইউক্রেনের আজকের সংকট একদিনে তৈরি হয়নি। এর পেছনে সক্রিয় রয়েছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক একগুচ্ছ কারণ। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ইউক্রেনের অর্থনৈতিক অনগ্রসরতা, বেকারত্ব, দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রভৃতি কারণ দেশটির রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে ত্বরান্বিত করেছে বলে অনেক বিশ্লেষণে উল্লেখ করা হয়েছে; কিন্তু এর চেয়েও বেশি যে ক্ষতিকর কারণ তা হলো দেশটিতে বহিঃরাষ্ট্রের নগ্ন হস্তক্ষেপের ঐতিহাসিক বাস্তবতা।
অভ্যন্তরীণ কারণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ যে বিষয়টি এর সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন করেছে তা হলো রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত হিসেবে জাতিত্ব (ঘধঃরড়হযড়ড়ফ) গঠনের ক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় নেতাদের ব্যর্থতা। বিশেষ করে কৃষ্ণসাগরের তীর ঘেঁষে যে ক্রিমীয় ভূখণ্ড, তা আর্থ-ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক নানাবিধ প্রশ্ন অনিষ্পন্ন রেখে বৃহৎ শক্তির ছত্রচ্ছায়ায় যেনতেনভাবে গঠিত হয়। ফলে ক্ষুদ্রতর পরিসরে (গরপৎড়-ংঁন ংুংঃবস) ক্রিমিয়া যেমন সুশৃঙ্খলিত, সুসংবদ্ধ ও সুসংগঠিত হতে পারেনি, তেমনি বৃহত্তর রাষ্ট্রিক পরিমণ্ডলে (গধপৎড়-ংঃধঃব ষবাবষ) ইউক্রেনও সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে দণ্ডায়মান হতে পারেনি।
যে নৃতাত্তি্বক কারণ দেখিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কৃষ্ণসাগরে বিশাল সৈন্য সমাবেশের হুকুম দিয়েছেন, সেই কারণটি সাম্প্রতিক ইতিহাসে হয়তো সত্য; কিন্তু ক্রিমিয়ার জনসাধারণের নৃতাত্তি্বক ইতিহাস সম্পূর্ণ ভিন্ন। আজ এথনিক রুশরা যে ক্রিমিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেই ক্রিমিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন মুসলিম তাতারস সম্প্রদায়। কিন্তু সোভিয়েত কমিউনিস্ট নেতা জোসেফ স্টালিনের নির্মম নির্যাতনের মুখে তাতারীয় মুসলিমরা ক্রিমিয়া ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়। মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের নাৎসি বাহিনীকে সহায়তা করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা পরাশক্তিদ্বয়ের যৌথ কৌশলে মুসলিম তাতারদের আপন ভূমি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এখানে আদি ইউক্রেনের জনসংখ্যা ২৪ শতাংশ, এথনিক রুশ ৫৮ শতাংশ, তাতারদের ১২ শতাংশ। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর তাতাররা আবার ক্রিমিয়ায় ফিরে আসতে থাকে, পুরনো স্মৃতি স্মরণ করে তাদের অনেকে অশ্রুসজল হয়ে ওঠে। এমন ভিন্নধর্মী, ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নৃতাত্তি্বক জনগোষ্ঠীর একত্রীকরণের (যড়সড়মবহরঃু) প্রয়োজনে যে সর্বজনীন ও দরদি নীতির প্রয়োজন ছিল, তা উপেক্ষা করা হয়েছে। আরো বেদনাদায়ক হলো, বিশ্বের বর্তমান বৃহৎ শক্তিবর্গের স্বার্থরক্ষার হীন লক্ষ্যকে সামনে রেখে বহুধা উপাদানে পরিপূর্ণ ইউক্রেনের জাতিসত্তার পুনর্বিন্যাস করে সুষ্ঠু ও সুস্থ জাতিত্ব গঠনের প্রয়োজন পূর্ণ করা হয়নি।
ইউক্রেনের বর্তমান সংকটের মূল এখানে প্রোথিত এবং ক্রিমিয়ার রণদামামায় তা স্পষ্ট গতি নির্ধারক। সে কারণে ক্রিমিয়ার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এখন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। রুশপন্থী আন্দোলনকারীরা ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়ার বিচ্ছিন্নতা (ংবপবংংরড়হ) দাবি করে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, তা জাতিত্ব গঠনের ব্যর্থতার কারণেই সংঘটিত হতে পারছে। ইউক্রেনের ডনেটস্ক নগরীতে লেনিন স্কোয়ারজুড়ে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী বিচ্ছিন্নতার প্রশ্নে গণভোটের (ংবপবংংরড়হ ৎবভবৎবহফঁস) দাবিও জানাচ্ছে। তারা ইউক্রেন থেকে বিভক্ত হয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে উপর্যুপরি স্লোগান দিচ্ছে। এমনকি ইউক্রেনের বর্তমান সরকার সমর্থকদের ওপর বিচ্ছিন্নতাবাদী রুশ-নৃগোষ্ঠীর আক্রমণ দিন দিন ইউক্রেনীয় সংকটকে আরো ঘনীভূত করছে।
ইউক্রেনীয় সংকটের নেপথ্যে কার্যকর উপরোক্ত অভ্যন্তরীণ কারণগুলোর চেয়েও অধিকতর শক্তিশালী নিয়ামক হলো ইউক্রেন নিয়ে বৃহৎ শক্তিবর্গের স্বার্থান্ধ পররাষ্ট্রনীতি। এ পর্যন্ত ইউক্রেনের সরকার ও নেতারা কখনো ইউরো-আমেরিকাপন্থী, আবার কখনো রাশিয়াপন্থী হিসেবে ভূমিকা পালন করেছেন। এভাবে পূর্ব ও পাশ্চাত্যের বৃহৎ শক্তিবর্গের স্বার্থের লড়াইয়ের উর্বর ভূমি হিসেবে ইউক্রেন ব্যবহৃত হয়েছে। বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো কখনো ইউক্রেনের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতা নিয়ে উদগ্রীবতা দেখায়নি, কেবল নিজেদের হীন জাতীয় স্বার্থে ইউক্রেনের পুতুল নেতাদের প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে।
স্নায়ুযুদ্ধাবসানের পর প্রায় তিন দশক অতিক্রান্ত হলেও ইউক্রেনের সরকার ও রাজনীতির প্রশ্নে ইউক্রেনীয় নেতারা এখনো স্নায়ুযুদ্ধকালীন পরাশক্তিদ্বয়ের তাঁবেদার নতজানু, অনুগত মনঃকাঠামো ভেঙে স্বাধীন, স্বকীয় ও সার্বভৌম মনোজগতে প্রবেশ করতে পারেননি। পাশ্চাত্যপন্থীরা তাই ইউরোপ, আমেরিকাসহ পাশ্চাত্য শক্তিবর্গের ইশারায় তাদের ইউক্রেনীয় নীতি প্রণয়ন করছে। আবার মস্কোপন্থীরাও রাশিয়ার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং বর্তমানের মতো রাশিয়ায় সৈন্য, অস্ত্র, অর্থের বলে মস্কোপন্থী নীতি বাস্তবায়নে বাহু প্রদর্শন করছে।
বর্তমানে ইউক্রেনীয় সংকটটি এমনি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সমীকরণের জটিল রসায়নে সংমিশ্রিত হয়ে আছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে সাবেক পরাশক্তির প্রণোদনা নিয়ে ইউক্রেনীয় নীতিনির্ধারণের ভ্রম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ইউক্রেনীয় জাতিত্ব ও জাতিসত্তার যে মৃত্যু ঘটেছে, যার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে তার পুনরাবর্তন আর হয়তো সম্ভব নয়; কিন্তু এখনকার ইউক্রেনের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের দীর্ঘজীবিতার লক্ষ্যে দুই বৃহৎ শক্তিসহ আন্তর্জাতিক সমাজের দায়বদ্ধতা প্রচুর।
দুই মাস আগে ইউক্রেনের মস্কোপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিকটর ইয়ানুকোভিচকে অপসারিত করার পেছনে ইউরোপ-আমেরিকার হাত রয়েছে বলে রাশিয়া অভিযোগ তুলেছে। সাবেক প্রেসিডেন্টের ক্ষমতাচ্যুতিকে 'সংবিধানবিরোধী ক্যু' হিসেবে অভিহিত করেন পুতিন। তিনি এখনো ইয়ানুকোভিচকে ইউক্রেনের 'বৈধ নেতা' বলে স্বীকৃতি দেন। বহির্বিশ্বে গণতন্ত্র, সংবিধান এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমুখী নীতি এখন বিশ্ববিদিত। ইরাক ও আফগানিস্তান আক্রমণের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি বিশ্বব্যাপী যে নেতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে ইউক্রেনের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা রক্ষায় স্ল্লোগান প্রদানে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। ইউক্রেন নিছক আফ্রো-এশিয়ার অথর্ব একটি মুসলিম দেশের মতো দুর্বলচিত্তের দেশ নয়, যাকে সাবেক দুটি পরাশক্তি দাবার ঘুঁটিতে পরিণত করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভূ-কৌশলগত বাস্তবতা অস্বীকার করলে বেমানান হবে। ইউক্রেন পরিবেষ্টিত রয়েছে সাবেক পরাশক্তি রাশিয়ার দ্বারা, আর ইউক্রেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল ক্রিমিয়ার কৃষ্ণসাগরে রয়েছে রাশিয়ার বিপুল সৈন্য, অস্ত্রশস্ত্র, পারমাণবিক স্থাপনা। রাশিয়ায় ঘরের দুয়ারে, নাগালের মধ্যে অবস্থিত ইউক্রেন নিয়ে একক পরাশক্তির রণহুংকার কেবল বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকেই বাধাগ্রস্ত করবে। স্নায়ুযুদ্ধোত্তরকালে ফুকুইয়ামার 'ইতিহাসের পরিসমাপ্তি' (বহফ ড়ভ যরংঃড়ৎু) তত্ত্বের জাদুতে আবেশিত হয়ে ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের দখলদারিত্ব বজায় রাখতে ইউক্রেনে শক্তি প্রয়োগ পাশ্চাত্যের মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। পূর্বেই উল্লেখ করেছি, ইউক্রেন ও ক্রিমিয়ায় বিস্তৃত বিচ্ছিন্নবাদী আন্দোলনের কথা। ক্রিমিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এবং ইউক্রেনের জনগণের একাংশও যদি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে পাগলপ্রায় হয়, তাহলে কৃষ্ণসাগর অববাহিকা ও পূর্ব ইউরোপে পাশ্চাত্যের সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থ বাধাগ্রস্ত হবে। গত ৬ মার্চ ক্রিমিয়ার পার্লামেন্টে সংসদ সদস্যরা রাশিয়া ফেডারেশনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অপরদিকে নৃতাত্তি্বক একাত্মতা, ভৌগোলিক নৈকট্য ও ভূ-কৌশলগত সুবিধার কারণে সাবেক পরাশক্তি রাশিয়ার নীতিনির্ধারণের হিসাব-নিকাশে এতটুকু ভুল হলে রক্ষা নেই। ২০০৮ সালে জর্জিয়ায় একইরূপ নীতি গ্রহণ করে রাশিয়াকে যে চরম মূল দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত ন্যাটোর সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে সেই ক্ষতি থেকে রাশিয়া রক্ষা পেয়েছিল। সত্যি সত্যি যদি যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও ন্যাটো রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করত, তাহলে বিশ্ববাসী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখতে পেত এবং তা পারমাণবিক যুদ্ধে পরিণত হয়ে এ বিশ্ব বৃহৎ শক্তিগুলোর কৃষ্ণগহব্বরের ধ্বংসকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হতো চিরদিনের জন্য। বিশ্বশক্তি রাশিয়ার নিজস্ব রাজনৈতিক, সামরিক এবং স্ট্র্যাটেজিক স্বার্থরক্ষার অধিকার রয়েছে। বিশেষত তার নিকটতম প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো। যাদের সঙ্গে তার সীমানা রয়েছে, তাদের সঙ্গে রাশিয়ার সহাবস্থান শক্তির জোরে নয়, বরং আন্তরাষ্ট্রিক হৃদ্যতার বন্ধনে মজবুত করার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে রাশিয়াকে। বর্তমান বিশ্বের একক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও পারমাণবিক বিশ্বশক্তি রাশিয়া উভয়কেই ইউক্রেনীয় সংকটের নেপথ্য বাস্তবতাসমূহ অনুধাবন করতে হবে। রাশিয়ার উচিত হবে না ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে স্বীয় স্বার্থ ও ইউক্রেনীয় রাশিয়ানদের নিরাপত্তা রক্ষার অজুুহাত প্রতিষ্ঠিত করা। যুক্তরাষ্ট্রেরও উচিত হবে না ইউক্রেনীয় রাশিয়ানদের নিরাপত্তা ও কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার সামরিক স্থাপনার নিরাপত্তা নিয়ে রাশিয়ার উদ্বেগকে অবমূল্যায়ন করা। স্বীয় স্বার্থে এ দুটি বৃহৎ শক্তি অন্য রাষ্ট্রে হস্তক্ষেপ করে এরই মধ্যে যে বৈশ্বিক বদনাম (বীঃবৎহধষ নধফ রসধমব) কুড়িয়েছে, তা বিশ্বময় তাদের অগ্রহণযোগ্যতাকে দিন দিন দুর্বার করে তুলছে। এ অবস্থায় দ্রুত তাদের সংলাপে বসে আন্তর্জাতি রীতিনীতি অনুযায়ী সব সমস্যার সমাধান করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইউক্রেনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়ে রাশিয়ানদের নিরাপত্তা নির্বিঘ্ন করার যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা রাশিয়ার নীতি-বিবেচনায় রাখা উচিত। অপরদিকে রাশিয়ায় রাজনৈতিক ও সামরিক নিরাপত্তার উদ্বিগ্নতার প্রতিও পাশ্চাত্যের সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। তবে সবচেয়ে প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো, ক্রিমিয়ার জনগণের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করা এবং ইউক্রেনের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সঙ্গে তার সুসামঞ্জস্য ও সুসমন্বয় ঘটানো। ইউক্রেনের জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ে তাদের মতামতের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়েই কেবল ইউক্রেন সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব। শেষ কথা হলো বৃহৎ শক্তিবর্গকে নির্মোহ, স্বচ্ছ ও প্রাগ্রসর ইউক্রেনীয় নীতি প্রণয়নে প্রতীজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে, যাতে কোনোভাবে ইউক্রেনের সমাজ ও রাজনীতি বৃহৎ শক্তির স্বার্থের লড়াইয়ে ব্যবহৃত না হয়।
লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
(কালের কণ্ঠ, ১৮/০৩/২০১৪)
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন