মাহমুদুর রহমান
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর আমি বুয়েটের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলাম। তখন শেরে বাংলা হলের উত্তর ব্লকের ৩১০ নম্বর ঘরে আমার তিন বছরের আবাস। মনে পড়ছে ৬ নভেম্বর রাতে আমাদের ঘুমানো সম্ভব হয়নি। মধ্যরাত থেকেই ঢাকা সেনানিবাসের দিক থেকে প্রচণ্ড গোলাগুলির আওয়াজ পাচ্ছিলাম।
তার আগে ৩ নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ তৎকালীন সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে তার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সরকারি বাসায় সপরিবারে বন্দি করে আওয়ামী লীগ ও ভারতের সমর্থনে প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। সেই ক্যুদেতার সমর্থনে ৪ তারিখ সকালে মতিয়া চৌধুরীসহ কয়েকশ বাকশাল নেতাকর্মী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শোকমিছিল নিয়ে ফ্যাসিস্টদের মন্দির ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে হাজির হয়েছিলেন।
সেই মিছিলে খালেদ মোশাররফের মা এবং ভাই যোগ দিয়ে বিদ্রোহী ব্রিগেডিয়ারের আওয়ামী ও ভারত কানেকশন প্রমাণ করেছিলেন। সাকুল্যে ৭২ ঘণ্টার মেয়াদে ক্ষমতাসীন থাকাকালে খালেদ মোশাররফ নিজেকে মেজর জেনারেল পদে প্রমোশনও দিয়েছিলেন। তৎকালীন বিমান এবং নৌবাহিনী প্রধান খালেদ মোশাররফকে মেজর জেনারেলের ব্যাজ পরিয়ে দিচ্ছেন এমন একটি বিশাল ছবি সে সময় সব পত্রিকার প্রথম পাতায় কয়েক কলামজুড়ে ছাপা হয়েছিল।
৬ নভেম্বর রাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে প্রধানত সৈনিকরা ভারতীয় দালালদের উপরোক্ত ক্যুদেতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করলে রাজধানীর লাখ লাখ মানুষ সৈনিকদের সমর্থনে রাস্তায় নেমে এলে খালেদ মোশাররফের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। আমি মনে করি, বাংলাদেশের ইতিহাসে ৭ নভেম্বর ভারতীয় হেজেমনির বিরুদ্ধে জনতা-সেনাবাহিনী সমন্বয়ে প্রথম সফল বিদ্রোহের দিন। গত বছর ৫ আগস্ট বিপ্লবে আমার প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করতে না পারার বেদনা থাকলেও ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জনতা এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রাস্তায় নামার সৌভাগ্য হয়েছিল।
সকালে বুয়েট থেকে আমরা ক্যান্টনমেন্টের দিকে রওনা হয়েছিলাম। সেদিনের কথা আজ লিখতে বসে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আমার দুই সহপাঠী বন্ধু বিদ্যুৎ আর মুকুলের কথা মনে পড়ছে। আমরা তিন বুড়ো এখনো এই শহরে জীবিত আছি। বুড়ো বলার জন্য বন্ধুরা রাগ করলেও করতে পারে। সেই তরুণ বয়সে আমাদের সবার হিরো ছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। ৭ নভেম্বর ভোর থেকেই সারা শহর ‘জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ’ স্লোগানে প্রকম্পিত ছিল। ১৯৭১ সালে মেজর জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জনগণের কাছে পরিচিতি লাভ করলেও তার রাজনীতির প্রকৃত উত্থান হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর। সেদিন সকালে শাহবাগের মোড়ে ট্যাংকের ওপর দাঁড়িয়ে দেশপ্রেমিক এক বীর সেনাসদস্যের বক্তৃতা করার দৃশ্য আজও চোখের সামনে ভাসছে।
ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে সৎ এবং জনপ্রিয় শাসক জিয়াউর রহমান মাত্র পাঁচ বছর ছয় মাস এবং ২৩ দিন দায়িত্ব পালন করতে পেরেছিলেন। সেই স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি বাংলাদেশের গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা বুঝতে পেরে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালি মুসলমান জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়ের নতুন বয়ান হাজির করেছিলেন। সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এবং ‘আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও ঈমান’ সংযুক্ত করে তিনি আমাদের হাজার বছরের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে সমুন্নত করেছিলেন। আগ্রাসী ভারতকে মোকাবিলা করার জন্য জিয়াউর রহমান তৎকালীন ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার আলোকে সফল পররাষ্ট্রবিষয়ক কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন।
সে জন্যই অনেক আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ১৯৮১ সালে তার হত্যার পেছনে ভারতীয় ডিপ স্টেটের ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করেন। একটি থিওরি প্রচলিত আছে যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই (১৯৭৭-১৯৭৯)-এর কাছে দেশটির বিতর্কিত গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ প্রেসিডেন্ট জিয়াকে হত্যা কিংবা ক্ষমতাচ্যুত করার একটি প্রস্তাব নিয়ে গেলে তিনি বেশ বিরক্ত হয়ে সেই ফাইল বন্ধ করে দিয়েছিলেন। মোরারজি দেশাই নাকি বলেছিলেন, কোনো প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ তিনি সমর্থন করেন না। এরপর ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করলে তিনি পুনরায় দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি প্রয়োগে মনোনিবেশ করেন।
ইন্দিরা গান্ধী মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন যে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কোনো ছোট রাষ্ট্র স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার রাখে না। ‘ইন্দিরা ডকট্রিন’ অনুযায়ী ভারতের সঙ্গে কোনো প্রতিবেশী দেশের বিরোধ দেখা দিলে সেটি কেবল দ্বিপক্ষীয় আলোচনার ভিত্তিতেই সমাধান করতে হবে, যাতে দিল্লির ইচ্ছাই প্রাধান্য পায়। স্বাধীনচেতা জিয়া ‘ইন্দিরা ডকট্রিন’ মানতে সম্মত হননি। উল্লেখ্য, জেনারেল জিয়া নিহত হওয়ার অল্প কিছুদিন আগে বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা দ্বীপ দক্ষিণ তালপট্টির মালিকানা নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিরোধ চরমে পৌঁছেছিল। ১৯৮১ সালের ৮ জুন, দি নিউ ইয়র্ক টাইমসে ‘Zia assassination reverberates through South Asia’ শিরোনামের লেখায় ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং তালপট্টির বিরোধ নিয়ে নিম্নোক্ত মন্তব্য ছাপা হয় :
“Relations with India have not been particularly good since then (assassination of Sheikh Mujib) and, as it happens, the weeks immediately preceding President Zia’s assassination by a group of army rebels marked an especially hostile period, at least in the words flowing back and forth between here and New Delhi.
The immediate point of contentions is a tiny island formed recently by silt deposits in the mouth of the Ganges, along the common border. Both countries claim the island, and the claim is more important than the island because it also affects sovereignty over a wide region of ocean and seabed to the south. Indians occupy the island. Early last month, a Bangladeshi patrol boat discovered two Indian Navy warships at the island and found that Indian troops had set up a flag and a radio station on the brown, muddy shore. Bangladesh was incensed. Angry diplomatic notes flew back and forth, and Prime Minister Indira Gandhi was burned in effigy at protest demonstrations here.” (William Borders, The New York Times, June 8, 1981, https://www.nytimes.com)
মোদ্দা কথা, প্রেসিডেন্ট জিয়ার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে কখনোই প্রীতির সম্পর্ক ছিল না এবং বাংলাদেশের জনগণের এক উল্লেখযোগ্য অংশ চট্টগ্রামে ১৯৮১ সালে জেনারেল জিয়াকে হত্যার ষড়যন্ত্রে ভারতের ডিপ স্টেটের গভীর ভূমিকা রয়েছে বলে সন্দেহ করে। বিএনপি প্রতিষ্ঠার মাত্র চার বছরের মাথায় প্রেসিডেন্ট জিয়া নিহত হলেও দলটি বাংলাদেশের বৃ্হত্তম দলে পরিণত হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো দলের প্রতিষ্ঠাতার অসামান্য জনপ্রিয়তা। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো শাসক জিয়াউর রহমানের মতো ক্ষমতায় থেকে এভাবে ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি।
১৯৭২ সালের জানুয়ারিতে শেখ মুজিব আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা নিয়ে পাকিস্তানের কারাগার থেকে স্বদেশে ফিরে এসে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ভয়াবহ অপশাসনের কারণে সেই জনপ্রিয়তায় অকল্পনীয় ধস নামিয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের আগস্টে তার একদলীয় সরকারের পতন এবং তিনি নিহত হলে রাজধানীর সব মিষ্টির দোকানের মিষ্টি শেষ হয়ে গিয়েছিল। জেনারেল এরশাদ এবং শেখ হাসিনা যথাক্রমে রংপুর এবং গোপালগঞ্জের বাইরে কোনোদিনই সেই অর্থে সাধারণ মানুষের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন না। শেখ হাসিনা তার পিতাকে দ্বিতীয়বার হত্যাও করে গেছেন। জিয়াউর রহমানের পর একমাত্র বেগম খালেদা জিয়ার দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও, তারও ক্ষমতায় আগমন এবং নির্গমনের সময় (১৯৯১-১৯৯৬, ২০০১-২০০৬) জনপ্রিয়তার মাত্রায় যথেষ্ট ফারাক ছিল। প্রেসিডেন্ট জিয়ার সংক্ষিপ্ত জীবনের (১৯৩৬-১৯৮১) নির্মম পরিসমাপ্তি হলেও রাজনীতিবিদ ও শাসক হিসেবে তিনি ভাগ্যের বরপুত্র ছিলেন। তার শাহাদাতের পর সারা দেশে যে শোকের মাতম হয়েছিল, তার তুলনা হয় না।
শহীদ জিয়ার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের শক্তিশালী বয়ান এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদকে ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য দিয়ে মোকাবিলার সফল কৌশল থেকে বিএনপি ২০১৫ সালের আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ার পর থেকেই একটু একটু করে সরতে শুরু করে। দলটির নীতিনির্ধারকদের মধ্যে এমন একটি ভ্রান্ত ধারণার জন্ম হয় যে, ভারতকে যদি বোঝানো যায়, একটি ‘নতুন, পরিশুদ্ধ ও সেক্যুলার বিএনপি’ ভারতের স্বার্থরক্ষা করেই রাজনীতি করবে তাহলে দিল্লির একতরফা আওয়ামীপ্রীতির অবসান ঘটবে এবং বাংলাদেশে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ভারতীয় শাসককুল শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ করবে। মুজিবপ্রেমী সেক্যুলার ড. কামাল হোসেনের কাছে ছুটে গিয়ে জোটের নেতৃত্ব সঁপে দিয়ে বিএনপি নেতৃত্বের ২০১৮ সালের রাতের ভোটের নির্বাচনে অংশগ্রহণ ছিল সেই ভ্রান্ত ধারণারই পরিণতি।
সেই কথিত নির্বাচনের আগে বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা দিল্লিতে গিয়ে বিজেপির মন গলানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে বিএনপি আরো একটি আজব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যে জামায়াতের গন্ধ দূর করার জন্য বিএনপি ড. কামালের জোটে ইসলামি দলটিকে রাখেনি, সেই জামায়াতকেই আবার নির্বাচনে তারা ২২টি আসন ধানের শীষের মার্কা সমেত ছেড়ে দিয়েছিল। নিজেদের মার্কা না থাকা সত্ত্বেও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা দাঁড়িপাল্লার পরিবর্তে বিএনপির মার্কায় নির্বাচনি তামাশায় যোগদান করে নির্বুদ্ধিতা ও রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতার প্রমাণ দিয়েছিলেন। এই অনর্থক সিট ভাগাভাগি নিয়ে মন কষাকষির প্রেক্ষাপটে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল। যাহোক, ২০২৪ সালের ‘আমি ও ডামি’ নির্বাচন বয়কটের সাহস দেখিয়ে বিএনপি অবশ্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমরা ধারণা করেছিলাম বিএনপি জিয়াউর রহমান এবং বেগম খালেদা জিয়ার সঠিক রাজনীতিতে ফিরে এসেছে।
দুর্ভাগ্যবশত দলটির নেতারা মহান জুলাই বিপ্লবের পর আবার ভুলের ফাঁদে পড়লেন। এই বিপ্লবের চরিত্র যে কেবল একজন শাসক বদলের সংকীর্ণ রাজনীতির ছিল না, সেটা তারা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। রাজনৈতিক মতাদর্শ, সাংস্কৃতিক চেতনা, বাঙালি মুসলমানের ধর্মীয় আত্মপরিচয় এবং মানবসত্তার জন্মগত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার মিশ্রণ জুলাই বিপ্লবকে যে এক অনন্যবৈশিষ্ট্যে সংজ্ঞায়িত করেছে, সেটি ৭ নভেম্বরের মহানায়ক শহীদ জিয়ার দলের বুঝতে না পারাটা বিস্ময়কর। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব আজকের বাংলাদেশের যে সংগ্রামকে যথাক্রমে মৌলবাদ ও দক্ষিণপন্থা বলেছেন তা যে প্রকৃতপক্ষে দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়ের গর্বিত বহিঃপ্রকাশ এবং ভারতের হেজেমনির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গ, সে বিষয়টি এখন পর্যন্ত বিএনপি নেতারা ধরতে পেরেছেন বলে তাদের আচরণে মনে হচ্ছে না। বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে মূল প্রতিপক্ষ জামায়াতে ইসলামীকে মোকাবিলা করতে গিয়ে বিএনপি নেতারা ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ঢাকার রাজপথের লক্ষ-কোটি জনতার গগনবিদারী সব স্লোগান ভুলে গেছেন।
সেদিন রাস্তায় স্লোগান ছিলÑ ‘সিপাহি-জনতা ভাই ভাই’, ‘জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ’, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ নিপাত যাক’, ‘ভারতীয় দালাল খালেদ মোশাররফ মুর্দাবাদ’ এবং ‘নারায়ে তকবির আল্লাহু আকবর’। ৭ নভেম্বরের সেসব স্লোগানের সঙ্গে জুলাই বিপ্লবের সব স্লোগান যেমনÑ ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা-ঢাকা, ‘মোদির পোষা হাসিনা, তোমায় ভালোবাসি না’, ‘সীমান্তে মানুষ মরে, বিজিবি কী করে’, ‘তোমার আমার জান নিতে, খুনি এখন দিল্লিতে’ এবং ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’কে পাশাপাশি রাখলে পাঠক কি দুটোর মধ্যে কোনো আদর্শ অথবা চরিত্রগত পার্থক্য খুঁজে পাচ্ছেন? ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের গণবিস্ফোরণে আমরা যদি কোনো মৌলবাদ ও দক্ষিণপন্থার উত্থান খুঁজে না পেয়ে থাকি তাহলে জুলাই বিপ্লবে সেটা কেন খুঁজতে যাব? নাকি বিএনপির নীতিনির্ধারকরা শহীদ জিয়ার নেতৃত্বে ৭ নভেম্বরের বিপ্লবকেও দক্ষিণপন্থা ও মৌলবাদের বিদ্রোহ আখ্যা দিয়ে ভারতীয় হেজেমনির বিরুদ্ধে প্রথম সফল বিপ্লবের উত্তরাধিকারকে এখন অস্বীকার করবেন? তারা কি দল বেঁধে ৭ নভেম্বর জিয়ার কবরে ফুল দিতে যাবেন না? আমার ধারণা, বিএনপির মূল নেতা দীর্ঘদিন দেশে না থাকায় তিনি বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের আত্মপরিচয়ের গৌরব ও তাদের আকাঙ্ক্ষা এবং জুলাই বিপ্লবের মূল প্রেরণাকে বুঝতে ভুল করেছেন। আমি আশা করি, দেশে ফিরে এসে মাঠের পরিস্থিতি দেখলে তার ভুল নিশ্চয়ই ভেঙে যাবে। যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষেই জনমতকে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। কেবল দখলদার বিদেশি শক্তির সমর্থনে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হলে শেখ হাসিনাকে তস্করের মতো পালিয়ে প্রভুর চরণে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকে ভুয়া তর্জনগর্জন করতে হতো না।
আমার কাছে ৭ নভেম্বর এবং জুলাই বিপ্লবের মধ্যে কোনো আদর্শগত বিরোধ নেই বিধায় উভয় বিপ্লবের নেতারা আমার হিরো। আমি প্রত্যাশা করি, দলমত নির্বিশেষে জুলাই বিপ্লবের তরুণ নেতৃবৃন্দ এ বছর ৭ নভেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি সম্মিলিতভাবে শ্রদ্ধা জানাবেন। সাহস, দেশপ্রেম, ধার্মিকতা, রাষ্ট্র পরিচালনায় দক্ষতা এবং অসামান্য সততার মিশ্রণে বাংলাদেশে কোনো দ্বিতীয় জিয়াউর রহমান আমরা আজ পর্যন্ত খুঁজে পাইনি। মহান আল্লাহতায়ালা তার বেহেশত নসিব করুন।