Image description

এইচএসসির ফলাফল সব শিক্ষার্থীর জীবনে এক বিশেষ মুহূর্ত। কেউ আনন্দে ভাসেন, কেউ আবার হতাশায় ডুবে যান। কিন্তু খারাপ ফল মানেই জীবনের সমাপ্তি নয় বরং এটি হতে পারে এক নতুন শুরু। যারা খারাপ ফল করেছেন, তারা এখন নিজেদের পুনর্গঠিত করতে পারেন, কোন অভ্যাসগুলো বদলাতে হবে এবং কীভাবে সামনে এগোতে হবে তা আপনাকেই ঠিক করতে হবে। তবে জীবনজগতে অভিজ্ঞ হিসেবে আপনাদের জন্য কিছু পরামর্শ দিতেই পারি।

১. এটি একটি সংকেত: সাবধান হোন

পরীক্ষায় খারাপ ফল একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত। এটি জানাচ্ছে, আপনার কোথাও না কোথাও সমস্যা আছে যা ভালো ফল করতে দেয়নি। হতে পারে পড়াশোনায় অবহেলা, অন্য কিছুতে বেশি মনোযোগ দেওয়া, রুটিন না মানা বা সময় নষ্ট করা। এখনই সেই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করুন এবং সমাধান বের করুন। না হলে পরের পরীক্ষাতেও একই ভুল হবে এটা নিশ্চিত।

 

২. সমস্যা উতরান

প্রথমেই বোঝার চেষ্টা করেন, আপনার সমস্যাটা ঠিক কী। তারপর তার সমাধান বের করুন। সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সমস্যাগুলো লিখে রাখা। তারপর কোনটি কবে নাগাদ সমাধান করবেন, তার সময়সূচি তৈরি করুন। কঠোরভাবে সেই টাইমলাইন মেনে একে একে সমস্যাগুলোকে বিদায় দিন। এভাবেই আপনি নিজের দুর্বলতা জয় করতে পারবেন।

 

৩. অজুহাত খুঁজবেন না

খারাপ রেজাল্টের জন্য অজুহাত দাঁড় করাবেন না। যেমন ‘প্রশ্ন কঠিন ছিল’, ‘খাতা খুব কড়াকড়ি করে কাটা হয়েছে’, বা ‘ভাগ্য খারাপ ছিল’। এসব অজুহাত দিয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দিলে কোনো লাভ নেই। বরং ভেবে দেখুন, আপনি নিজে কোথায় ভুল করেছেন এবং সেটি ঠিক করুন।

৪. অন্যকে দোষ দেবেন না

অজুহাত যেমন দেবেন না, তেমনি অন্যকেও দোষ দেবেন না। কলেজে ভালোভাবে পড়ায়নি, শিক্ষক ঠিকমতো পড়াননি—এসব অভিযোগ বন্ধ করুন। কারণ যারা ভালো করেছেন, তাদেরও একই পরিবেশে পড়তে হয়েছে। দায়টা নিজের ওপর নিন। যারা নিজেকে দোষ দিতে পারেন, তারাই ভবিষ্যতে সফল হয়।

৫. লক্ষ্য ঠিক করুন

এখন আপনার করণীয় কী, সেটা স্পষ্টভাবে ঠিক করুন। ফেল করলে আবার পরীক্ষা দিতে হবে, আর আশানুরূপ রেজাল্ট না করলে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাজাতে হবে। কোথায় ভর্তি হবেন, কোন বিষয়ে পড়বেন—এগুলো ঠিক করুন এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিন। এ ক্ষতি পূরণযোগ্য, যদি আপনি চেষ্টা করেন।

৬. খাওয়াদাওয়া ঠিকভাবে করুন

নিশ্চয়ই আপনার খাওয়াদাওয়া নিয়মমাফিক ছিল না। কখনো দেরিতে খেয়েছেন, কখনো একেবারেই না খেয়ে থেকেছেন। এতে শরীর দুর্বল হয়েছে, মস্তিষ্কও সঠিকভাবে কাজ করতে পারেনি। ঠিকভাবে খাওয়াদাওয়া করুন। কারণ দুর্বল শরীর দিয়ে পরীক্ষার মাঠে গোল করা যায় না।

৭. ঘুমান

রাতজাগা আপনার বড় শত্রু। নিয়মিত ঘুম না হলে মনোযোগ নষ্ট হয়, স্মৃতিশক্তি কমে যায়। ভালোভাবে ঘুমান—রাতে জেগে দিনে ঘুমিয়ে কিছু হবে না। পর্যাপ্ত ও সঠিক সময়ে ঘুমই আপনার মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ রাখবে।

৮. মোবাইল ছাড়ুন

একবার হিসেব করে দেখুন, মোবাইল বা ইন্টারনেটে আপনি দিনে কত সময় দিচ্ছেন। চমকে যাবেন নিজেই। সামনে ভালো করতে হলে এই সময় নষ্ট কমাতে হবে। মোবাইল ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনাই সফলতার প্রথম শর্ত।

৯. খারাপ সঙ্গ ছাড়ুন

ভেবে দেখুন, আপনার কারও সঙ্গ কি পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে? যদি ঘটায়, তাকে এখনই বিদায় দিন। আজ আপনার খারাপ ফলাফলের দায় তিনি নিচ্ছেন না, ক্ষতিটা হচ্ছে আপনারই। তাই এখন সঙ্গ বাছাইয়ে সাবধান হোন। খারাপ সঙ্গ আজই ছাড়ুন।

১০. শৃঙ্খলা মেনে চলুন

শৃঙ্খলা ছাড়া সফলতা অসম্ভব। রাজাও শৃঙ্খলা না মানলে রাজত্ব হারায়। আপনার খারাপ ফলের কারণ যদি শৃঙ্খলাহীনতা হয়, তবে এখনই তা কাটিয়ে ওঠুন। সময়মতো ঘুম, খাওয়া, পড়াশোনা—সব কিছু নিয়ম মেনে চললে সফলতা নিশ্চিত।

১১. হাওয়াই সান্ত্বনাকে পাত্তা দেবেন না

অনেকে বলবেন, বিল গেটস ফেল করেছেন, স্টিভ জবস ফেল করেছেন—আপনিও পারবেন। কিন্তু মনে রাখবেন, তারা ব্যতিক্রম। বাস্তবতা হলো, সামনে ভালো না করলে আপনার ভবিষ্যৎ অন্ধকার। বাস্তবতাকে মেনে নিন, তাহলেই লড়াইয়ের ইচ্ছে জাগবে।

একটি কঠিন সত্য হলো এইচএসসি জীবনের শেষ পরীক্ষা নয়। এই পরীক্ষায় খারাপ করেও অনেকে পরে দুনিয়া জয় করেছেন। আপনিও পারবেন, দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিন এবং আবার নতুন করে পড়াশোনা শুরু করুন।

পাদটীকা: অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ সন্তানকে বকা দেবেন না, হতাশ করবেন না। এ লেখার শেষ কথাগুলো আপনাদের জন্যও প্রযোজ্য। আপনার সন্তানও সামনে ভালো করবে, যদি এখন তাকে বোঝার ও পাশে থাকার সুযোগ দেন।

বাদল সৈয়দ: কথাসাহিত্যিক ও সরকারি কর্মকর্তা