Image description

সম্প্রতি ইসলামি ব্যাংকের নিয়োগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা অব্যহতিপত্র ভাইরাল হয়েছে। সেখানে যাকে চাকুরি থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে তিনি লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ, ম্যানেজার সাহেব আপনার সাথে হাশরের ময়দানে দেখা হবে। 

লেখাটি আবেগঘন। কারণ যেকোনো মানুষের জীবিকায় আঘাত করা মানবিকতার সর্ব্বোচ্চ লঙ্ঘন। তাই এখানে সর্ব্বোচ্চ সর্তকতা গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু এখানে প্রশ্ন থাকে, হাশরের মাঠে আসলে কে কার সাথে দেখা করবে? মেধা থাকা সত্ত্বেও জেলা/পটিয়া কোটা না থাকায় যারা নিয়োগ পায়নি অথবা নিয়োগের একটা পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়নি, তারা কার সাথে হাশরের মাঠে দেখা করবে? 

এটা মোটামুটি সবারই জানা বিগত সরকারের আমলে একটা বিশেষ শ্রেণিকে চাকুরিতে সুবিধা দিতে নানা রকম কারসাজি হতো। এমন ছবিও সামাজিক মাধ্যমে এসেছে যেখানে দেখা যায় একটি নির্দ্দিষ্ট এলাকার মানুষের জন্য আলাদা বক্সে সিভি নেওয়া হতো। অনেক সময় যথাযথ যোগ্যতা না থাকলেও ভুয়া যোগ্যতার সার্টিফিকেট তৈরি করে নিয়োগ পেয়েছেন অনেকে। এতে প্রতিষ্ঠানের মেধাবী ও দক্ষ কর্মী তৈরি হয়নি। যা প্রতিষ্ঠানের সেবার মানে প্রভাব ফেলেছে।

তাই একটা সমাধান হওয়া উচিত। এটা করার আগে অবশ্যই যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে। যারা মেধায় নিয়োগ পেয়েছে তাদের সাথে কোনোভানেই অন্যায় করা উচিত হবে না। আবার অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়াদের বাদ দিতে গিয়ে তাদের মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। একই সাথে শুধু নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা কেন শাস্তি পাবে? নিয়োগকারী ব্যক্তি বা কর্মকর্তাদেরও অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। 

আবার পুরাতনদের বাদ দিয়ে যদি পুনঃরায় দলীয়ভাবে বা আলাদা কোনো মর্তাদর্শে নিয়োগ দেওয়া হয় সেটাও চরম অন্যায় হবে। এক্ষেত্রে নতুন নিয়োগে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশের সকল প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের সংস্কৃতি পরিবর্তন করা উচিত। দলীয় কোটায় নিয়োগ একেবারেই বন্ধ করা উচিত। একদল আসবে, একদল যাবে আর ভেড়ার পালের মত নিয়োগ বানিজ্য হবে এই সংস্কৃতি বন্ধ হওয়া দরকার। শুধু ইসলামী ব্যাংক নয়, সকল প্রতিষ্ঠানের উচিত দলীয় নিয়োগ বন্ধ করে মেধায় জোর দেওয়া দরকার। দেশের স্বার্থে অর্থনীতির স্বার্থে এটা জরুরী। দলীয়ভাবে নিয়োগ প্রাপ্তরা সর্ব্বোচ্চ দলকানা বা দলদাস হবে। আর এর পরিণাম কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা জুলাই-আগষ্টে নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণে সবাই দেখেছেন। অন্যদিকে মেধাবীদের নিয়োগ দিলে তারা দ্রুত দক্ষতা অর্জন করতে পারবে এবং দেশের সম্পদ হবে। এদের মধ্যে দলের চাইতেও দেশ প্রেম বেশি থাকবে। 

 

Dr. Martin Luther King Jr. বলেছিলেন,  ‌'Injustice anywhere is a threat to justice everywhere.' তাই কোনো পর্যায়েই কোনো ক্ষেত্রে অন্যায় হতে দেওয়া যাবে না। তাহলে একসময় সেটা সব ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়বে। 

আর হাশরের মাঠের ন্যায় অন্যায় বিশ্লেষণ করার দায়িত্ব না হয় সৃষ্টিকর্তা হাতেই থাকল।

লেখক : এম এ মাসুদ, চাকুরীজীবী