
ভূমধ্যসাগর থেকে গাজা উপকূলের দিকে মানবিক সহায়তা নিয়ে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক নৌবহর গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা বর্তমানে তীব্র আন্তর্জাতিক ও রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের নেতৃত্বে পরিচালিত এই নৌবহরটি সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী গাজার উপকূল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। নৌবহরের প্রতিটি জাহাজে খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি সামগ্রী রয়েছে, যা গাজার অবরুদ্ধ জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তারা এগিয়ে চলেছে।
যদিও নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অংশগ্রহণকারীরা আশঙ্কা করছেন, ইসরায়েলি বাহিনী যেকোনো মুহূর্তে নৌবহরকে থামাতে বা আটকাতে পারে। তবে, নৌবহরের নেতা ও অংশগ্রহণকারীরা জোর দিয়ে বলেছেন, এই অভিযান শুধু মানবিক সহায়তা বহন করছে। আগামী কয়েক দিন নৌবহর গাজার উপকূলে পৌঁছানোর জন্য এগোবে, যেখানে মানবিক সহায়তা বিতরণ করা হবে।
গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা কী?
‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ হলো একটি আন্তর্জাতিক নৌবহর যা বিভিন্ন দেশ থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবী, মানবাধিকারকর্মী এবং পরিবেশকর্মী নিয়ে গঠিত। এর মূল লক্ষ্য হলো ইসরায়েলি অবরোধের শিকার গাজার অবরুদ্ধ জনগণের কাছে সরাসরি মানবিক সহায়তা (যেমন— খাদ্য, ওষুধ ও জরুরি সামগ্রী) পৌঁছে দেওয়া। এছাড়া এটি গাজার মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ আকর্ষণ করতেও যাত্রা করে।
কেন এত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু?গাজার অবরুদ্ধ অবস্থা এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা এই নৌবহরকে সরাসরি আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত করেছে। মূল কারণগুলো হলো-
১. ইসরায়েলি হস্তক্ষেপ ও সামরিক হুমকি: ইসরায়েল সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছে যে এই নৌবহরকে গাজায় ভিড়তে দেওয়া হবে না এবং এটিকে 'বিপৎসীমা' হিসেবে চিহ্নিত করেছে। নৌবাহিনী জোরপূর্বক নৌবহরটি আটক করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং আশদোদ বন্দরে প্রায় ৬০০ পুলিশ কর্মকর্তাকে মোতায়েন করা হয়েছে, যা সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
বিজ্ঞাপন
২. আন্তর্জাতিক আইন ও বৈধতার প্রশ্ন: ক্রোয়েশিয়ার আইনজীবী মোরানা মিলজানোভিচের মতো আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, নৌবহরটি কেবল মানবিক সহায়তা বহন করায় আন্তর্জাতিক জলসীমায় বা ইসরায়েলের আঞ্চলিক জলসীমায় বেসামরিক জাহাজ আটকানোর বৈধ অধিকার ইসরায়েলের নেই, যদি না এটি অপরাধ সংঘটন বা সরাসরি নিরাপত্তা হুমকির প্রমাণ হয়। এই ফ্লোটিলা আটক করা হলে তা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের একটি গুরুতর দৃষ্টান্ত হতে পারে।
৩. উচ্চ পর্যায়ের অংশগ্রহণ ও প্রতীকী তাৎপর্য: পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবং বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যসহ আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বদের অংশগ্রহণ এই ফ্লোটিলার গুরুত্ব বাড়িয়েছে। এটি গাজার অবরোধের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করছে। ফ্লোটিলাটি গাজার ওপর চলা অবরোধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক চাপ ও মানবিক সংকট—উভয়ের সমন্বয় ঘটাচ্ছে।
৪. অংশগ্রহণকারীদের অনমনীয়তা: ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আশদোদ বন্দরে পণ্য খালাস করার প্রস্তাব দেওয়া হলেও, ফ্লোটিলার কর্মীরা তা প্রত্যাখ্যান করে সরাসরি গাজায় পৌঁছানোর বিষয়ে দৃঢ়তা দেখাচ্ছেন। এই অনমনীয় অবস্থান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।