Image description

ড. মো. আদনান আরিফ সালিম

 

বাংলাদেশের শিক্ষার্থী-জনতার দুর্বিনীত দ্রোহ আর সম্মিলিত প্রতিরোধ বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল ২০২৪-এর জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে। তাদের এই আন্দোলন পরিণতি পায় শতাব্দীর ভয়াবহতম ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন এবং সরকার প্রধানের পলায়নের মাধ্যমে। অনেক বিশ্লেষকের মতে এই জনজোয়ার মূলত বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ক্রমিক অবিচার এবং অপশাসনের বিরুদ্ধে জনগণের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। তাদের হিসেবে পূর্ব নির্ধারিত কোনো তাত্ত্বিক ভিত্তি, মেনিফেস্টো কিংবা লক্ষ্যমাত্রা না থাকায় এখানে নাকি কোনো বিপ্লব ঘটেনি। তবে জুলাইতে বাংলাদেশে যা হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট গণবিষ্ফোরণ। এখানে অনেক শ্রেণি পেশার মানুষের না পাওয়ার বেদনা একই সরলরেখায় কেন্দ্রীভূত হয়ে অনুনাদ সৃষ্টি করেছে দ্রোহ-বিপ্লবের পটভূমি তৈরিতে। 

শুরু থেকে ধরতে গেলে বাংলাদেশের নাম কাগজে কলমে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ হলেও বর্তমান প্রজন্মের বেশিরভাগ প্রতিনিধি বিগত দেড়যুগে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। তাদের অনেকে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগে সংশ্লিষ্টতার সূত্র ধরে হয়তো একাই বিশ থেকে দুইশত জনের ভোট দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগের ক্ষেত্রে ঘটেছে উল্টোটা। তারা অনেক আশা নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গেলে সেখানে দেখেছে পেঙ্গুইনের মতো কালো কোট পরা একদল লোক দাঁত মুখ খিঁচে তাদের ধাওয়া করছে। তারা তাদের মেরে-কেটে ভোট কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দিতে চাইছে। কিংবা তারা সরাসরি বলছে ‘আপনার ভোট দেওয়া হয়ে গেছে, আপনি বাড়ি চলে যান’। একটি জাতীয় দৈনিকের ভাষ্যে চট্টগ্রামে একটি ভোটকেন্দ্রে খোদ পোলিং অফিসারই ভোটারদের বলেছে “আপনার ভোট হয়ে গেছে। আর ভোট দেওয়ার সুযোগ নেই।”

বেশিরভাগ সাধারণ মানুষ বাজারে গিয়ে ব্যাগে পণ্য না এনে চোখে পানি নিয়ে ঘরে ফিরেছেন। যেকোনো চাকুরিতে যোগ্যদের থেকে অযোগ্যদের দাপট ছিল বেশি। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো চলে গিয়েছিল অথর্ব দলদাসদের দখলে। সবখানে বঞ্চিত, অবহেলিত, অপমানিত গণমানুষ যখন তার কষ্টের কথাগুলো অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলার চেষ্টা করেছে, সেখানেও প্রতিবন্ধক। তাদের ঘাড়ের উপর ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল সর্বনাশা ডিজিটাল সিক্যুরিটি অ্যাক্টের খড়্গ। এমনি পরিস্থিতিতে কোটা সংস্কারের ন্যায্য দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ শুরু করেছিল। 

তাদের দাবিকে তুচ্ছজ্ঞান করে উল্টো ‘রাজাকারের নাতি পুতি! রাজাকারের বাচ্চা’ বলে গালি দেওয়া হয়েছে। এমনি সময় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ শুরু হলে দেশের প্রতিটি মানুষ তার উপর হওয়া অবিচারের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে। শুরুতে তারা শিক্ষার্থীদের নৈতিক দাবির প্রতি মৌন সমর্থন দিয়েছে। পরে সেই সমর্থন সক্রিয় সমর্থনে পরিণত হয়েছে। অবশেষে দেশের মুক্তিকামী প্রতিটি মানুষ শিক্ষার্থীদের দাবিকে নিজের দাবি মনে করে তাদের সঙ্গে মাঠে নেমেছে। তারাও একটা সময় বুক পেতে পুলিশের গুলি খেয়েছে, ওখানেই মারা গেছে তাও  রাজপথ ছেড়ে পালায়নি। 

নারায়ণগঞ্জের ডিআইটি রোডে পুলিশ গুলি করে মেরে ফেলেছিল রাসেলকে। তার বাবা পিন্টু রহমান যন্ত্রণা সেইতে না পেরে গণমাধ্যমের সামনে বলেছিলেন, ‘চার দিন ধরে হাসপাতালের বেডে কষ্টে কাতরাইছে। মৃত্যুর মুখোমুখি হওছে ভ্যানেও ছেলের পাশে থাকতে পারিনি। কতই না কষ্ট প্যায়ে মারা গেছে। কতই না আর্তনাদ করিছে। ওরা হামার ছেলের বুকোত গুলি মারলো ক্যা। আল্লাহ হামার ছেলেরে ফিরাইয়া দাও। এমন কষ্ট আল্লাহ য্যান আর কাউকে না দেয়।’

প্রতিটি শহীদ কিংবা আহতের পরিবার যখন এমন যন্ত্রণাদগ্ধ হৃদয়ে বিপ্লবের স্মৃতিচারণ করছেন তখন দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘অভ্যুত্থান ঘটেছে, বিপ্লব নয়’ শিরোনামে একটি লেখা লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তত্ত্বচিন্তা হিসেবে অনেক তর্কের সুযোগ থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশের বাস্তবতা বিচারে অধ্যাপক চৌধুরীর এই লেখা নিঃসন্দেহে অবিবেচনাপ্রসূত। তিনি ইতিহাসের পাতা থেকে মুখস্থ কিছু ঐন্দ্রজালিকতাকে সামনে রেখে মনের মাধুরি মিশিয়ে যা ইচ্ছা তাই লিখে গিয়েছেন। ‘ফরাসি বিপ্লব’ কিংবা ‘রুশ বিপ্লব’ তাঁর চোখে যেভাবে একটা টিনের চশমা হিসেবে চেপে রয়েছে সেটাকে তিনি চোখ থেকে সরাতে পারেননি। হয়তোবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তিনি তার চোখ থেকে সেই ‘টিনের চশমাটা’ সরাতে পারেননি। 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর চোখে এঁটে থাকা টিনের চশমায় সাধারণীকরণের মাধ্যমে জুলাই নিয়ে ঢালাও একটা বক্তব্য রেখেছেন ‘বিপ্লব সহজ ব্যাপার নয়, যখন-তখন ঘটে না। আর যে বিপ্লবের আশায় আমরা আছি, তা হচ্ছে সামাজিক বিপ্লব। সেটি ঘটেনি। রাজনৈতিক বিপ্লব ঘটেছে, এই সীমিত অর্থে যে চরম ফ্যাসিবাদী একটি সরকার বিদায় নিয়েছে, কিন্তু রাষ্ট্রের অন্তর্গত চরিত্র ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছে।’ কিন্তু তিনি অনেকটা সচেতনভাবেই এড়িয়ে গেছেন এই সামাজিক বিপ্লবের জন্য রাজনৈতিক পরিবর্তন তথা বৈপ্লবিক রদবদল কতটা অনিবার্য ছিল। 

তিনি সাতচল্লিশের সামাজিক কাঠামোর আঙ্গিকে কোনো বদল না ঘটার যে  রোমান্টিকতা সেটিকে কেন্দ্রে রেখে বাংলা থেকে বাংলাদেশের সামাজিক কোনো রূপান্তর চোখে দেখছেন না। এমনিক ‘পূর্ব পাকিস্তান’ থেকে বাংলাদেশ হয়ে একাত্তরেও  যে বদল ঘটেছে তা একেবারে দেখতে পাচ্ছেন তিনি। ‘সমাজে মানুষে-মানুষে অধিকার ও সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার’ ফাঁপা বুলি সামনে রেখে তিনি ফ্যাসিবাদী সরকার কাঠামোর পতনের অনিবার্যতা অস্বীকার করেছেন সুকৌশলে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ উত্তরকালের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বহুদলীয় সরকার কাঠামোর প্রবর্তন এবং কয়েকটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক বিকাশের যে সুযোগকে বিগত ফ্যাসিবাদ গলা টিপে মেরে ফেলেছে সেটা সুকৌশলে এড়িয়ে গিয়েছেন। তাত্ত্বিক দিক থেকে ধরলেও এটা এক ধরনের চূড়ান্ত রকমের অসততা। 

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে ১৯ দফা কর্মসূচি প্রণয়ন করেছিলেন তার বাস্তব প্রয়োগ সম্ভব হলে দেশের পরিস্থিতি কেমন হতে পারত তা সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার। তিনি অনর্থক আর্তনাদের চেষ্টা করেছেন ‘রাষ্ট্র সেই আগের মতোই পুঁজিবাদী-আমলাতান্ত্রিক রয়ে গেছে। আগের শাসকরা ছিল বিদেশি, বাংলাদেশের যে শাসকরা শাসন করে যাচ্ছে, তারা চেহারায় স্বদেশি বটে, কিন্তু স্বভাবে তারা আগের শাসকদের মতোই।’ টাইপের কথা বলে। তিনি তত্ত্বকথার আড়ালে বিগত ফ্যাসিবাদী আমলের ভোট ডাকাতি, লুঠপাট, ব্যাংক গিলে খাওয়া কিংবা উন্নয়নের ফাঁপা বুলির আড়ালে চোরাচালানের চূড়ান্ত নীলনকশাকে ধামাচাপা দেওয়ার সূক্ষ্ম চেষ্টা করেছেন এখানে। 

১৯ দফার ৩ নং থেকে শুরু করে ১৪ নং পর্যন্ত খেয়াল করলে দেখা যায় সেখানে রয়েছে ‘সর্ব উপায়ে নিজেদেরকে একটি আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে গড়ে তোলা। প্রশাসনের সর্বস্তরে, উন্নয়ন কার্যক্রম এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে জনসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ তথা জাতীয় অর্থনীতিকে জোরদার করা। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পুর্ণ করা এবং কেউ যেন ভুখা না থাকে তার ব্যবস্থা করা। দেশে কাপড়ের উৎপাদন বাড়িয়ে সকলের জন্য অন্তত মোটা কাপড় সরবরাহ নিশ্চিত করা। কোন নাগরিক গৃহহীন না থাকে তার যথাসম্ভব ব্যবস্থা করা। দেশকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত করা। সকল দেশবাসীর জন্য ন্যূনতম চিকিৎসার বন্দোবস্ত করা। সমাজে নারীর যথাযোগ্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা এবং যুব সমাজকে সুসংগত করে জাতি গঠনে উদ্বুদ্ধ করা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি খাতে প্রয়োজনীয় উৎসাহ দান। শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি সাধন এবং উৎপাদন বৃদ্ধির স্বার্থে সুস্থ শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক গড়ে তোলা। এবং সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে জনসেবা ও দেশ গঠনের মনোবৃত্তিতে উৎসাহিত করা এবং তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করা’।

এই ধারাগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন নিয়ে কথা হতে পারে। আর সেগুলো বাস্তবায়ন প্রচেষ্টার প্রাথমিক পর্বেই দেখা গিয়েছে কীভাবে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটছে। পাশাপাশি দেশের প্রশাসনের সর্বস্তরে প্রকৃত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জবাবদিহিসম্পন্ন নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু সেগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হয় এরশাদের সামরিক শাসনের মধ্য দিয়ে। পুরো লেখায় নানা বিষয় উপস্থিত থাকলেও এই কথাগুলো ভুল করেও বলেননি সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। 

তবে হ্যাঁ এই লেখায় তিনি একটি নির্মম সত্য স্বীকার করেছেন অকপটে যা বাংলাদেশের অন্য তাত্ত্বিক কিংবা গবেষকরা করার সৎসাহস দেখান না। তিনি বলেছেন ‘পুলিশের জন্য দেশটি ছিল উন্মুক্ত; রাজত্ব ছিল তাদেরই, তারা ঘুষ খেয়েছে, জবরদখল করেছে, বাণিজ্য করেছে গ্রেপ্তারের। পুলিশের বড় দায়িত্ব ছিল বিরোধীদের দমন করা। সে কাজ তারা কেমন দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে তার প্রমাণ রেখে গেছে অভ্যুত্থানের আগমুহূর্তে। জনগণের টাকায় লালিত-পালিত একটি বাহিনী নির্বিচারে এভাবে দেশের মানুষের বুকে গুলি চালাতে পারে, সেটি ছিল কল্পনাতীত’। কিন্তু এই শক্তিশালী বাহিনীর বিরুদ্ধে যারা প্রাণভয় উপেক্ষা করে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাতে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে গেল তাদের অর্জনকে তিনি বিপ্লব বলতে একেবারেই নারাজ। এমনকি তিনি এটাকে গণঅভ্যুত্থান হিসেবেও স্বীকার করতে কার্পণ্য করেছেন ক্ষেত্রবিশেষে। 

জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর এই বক্তব্যকে আমার পুরোপুরি পক্ষপাতদুষ্ট বাছাই তথা চেরি পিকিং (Cherry picking) বলে মনে হয়েছে। বিভিন্ন রকম সাক্ষ্যপ্রমাণ, উপাত্ত বা সম্ভাবনা থেকে শুধুমাত্র নিজের অনুকূলে বা পক্ষে যায় এরকম উপাত্ত তিনি বেছে নিয়েছেন। তিনি ঠিক সেটাই প্রমাণের চেষ্টা করেছেন যা তাঁর পছন্দ। কিন্তু সেই পছন্দসই সম্ভাবনাকেই বাছাই বা নির্বাচন করেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। এখানে বিগত ফ্যাসিবাদের ক্ষমতায় টিকে থাকার খায়েশ এবং রাষ্ট্রকে নিজেদের পারিবারিক সম্পত্তিতে পরিণত করার যে প্রচেষ্টা তার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ পুরোপুরি অনুপস্থিত। জুলাইয়ের অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের উপর সংঘবদ্ধ সন্ত্রাস চালানো শক্তিকে আড়াল করতে গিয়ে তিনি সরাসরি পুলিশ কিংবা বিজিবির নাম ব্যবহার করতে লজ্জা পেয়েছেন। চিরচেনা অভ্যাস অনুযায়ী তিনি সেই মুখস্থ শব্দগুলোই ব্যবহার করেছেন। সেখানে খুনিদের আড়াল করা হয়েছে ‘বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী, আদালত, আমলাতন্ত্র, ব্যবসায়ী, দলীয় ক্যাডার এবং বিদেশি শক্তি’ শীর্ষক শব্দবন্ধের সহায়তায়।

জুলাই অভ্যুত্থানকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী  উদাহরণ টেনেছেন আমাদের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের। এর ধারাবাহিকতায় তিনি উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের উদাহরণ দিতে গিয়ে শহীদ আসাদুজ্জামানকে অনেক বড় করে দেখিয়েছেন এজন্য যে ‘তিনি কর্মী ছিলেন কমিউনিস্ট ধারার’। তাহলে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে আমার প্রশ্ন চট্টগ্রামে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হওয়া ওয়াসিম আকরাম বিএনপির ছাত্র সংগঠন তথা ‘ছাত্রদল’ করতেন। গণঅভ্যুত্থানের তথা জুলাই বিপ্লবের প্রতীক আবু সাঈদও যাই হোক কমিউনিস্ট ধারার নন। 

একইভাবে শহীদ শাইখ আহসাবুল ইয়ামিন, মীর মুগ্ধ, ফারহান ফাইয়াজ এরাও কেউ কমিউনিস্ট ধারার নন। এরা পুঁজিবাদী ঘরানার নাকি সমাজতান্ত্রিক ঘরানার সরকারের বিরুদ্ধে লড়ছে এসব চিন্তা করে আন্দোলন করেনি। তারা দুর্দমনীয় ফ্যাসিবাদ মোকাবেলা করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। তাদের আত্মত্যাগ যেহেতু আপনার হিসেবে সরাসরি ঘোষণা দিয়ে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই নয় তাদের কী আপনি বিপ্লবী বলবেন না? আমি মনে করি এটা নিয়ে প্রদত্ত অভিমত আপনার একান্ত ব্যক্তিগত। তবে এই অভিমত নিয়ে আমার বক্তব্য জানিয়ে গেলাম। 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যারের বক্তব্য আমাদের বিপ্লবী প্রজন্মকে হতাশ করতে পারে। কারণ এখনকার প্রজন্ম আর কিছু না হোক প্রতিবাদ করতে জানে। এভাবে তত্ত্বচিন্তার ঘেরাটোপে আপনি তাদের বিপ্লবকে স্বীকার করবেন না, এমনকি তাকে গণঅভ্যুত্থানের মর্যাদা দিতেও বিবিধ তর্ক তুলবেন তখন আমি অনেক ভয় পাচ্ছি। কবে এই প্রজন্ম আপনাকে কিছু প্রশ্ন করে বসে কে জানে। যেমন ধরেন- ‘আপনি কে আমাদের এই বিপ্লব নিয়ে প্রশ্ন করার? যখন দিনের বেলার সংসদ নির্বাচন মধ্যরাতের ভোটডাকাতিতে শেষ হয়েছিল তখন আপনি কোথায় ছিলেন? পুলিশ যখন আমার ভাইবোনদের গুলি করে মারছিল কোথায় ছিল আপনার তত্ত্বচিন্তা? বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ যখন চুরি হয়ে গেল তখন কোথায় ছিল আপনার বিপ্লব?-