Image description

আমি কোনো সাহিত্যবোদ্ধা নই। তবে বাল্যকাল থেকে প্রকৌশলী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেও বাংলা সাহিত্য পড়তে শুরু করেছিলাম সেই বাল্যেই। ষাটের দশকে সব শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি পরিবারেই বাংলা কবিতা, গল্প, উপন্যাস প্রভৃতি পড়া স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। আমাদের পুরোনো ঢাকার গেন্ডারিয়ার বাসাও তার ব্যতিক্রম ছিল না।

আমার নানা এক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রধান হিসাবরক্ষকের চাকরি করতেন। কর্মস্থল থেকে বিকালে বাসায় ফিরে বই পড়াটাই তার প্রধান বিনোদন ছিল। বাড়ির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল পাড়ার গ্রন্থাগার থেকে স্নেহশীল নানার জন্য চাহিদামতো বই নিয়ে আসা। মাস চারেক আগে বহু বছর পর গেন্ডারিয়ায় বেড়াতে গিয়ে সেই ‘সীমান্ত গ্রন্থাগারের’ সামনে দাঁড়িয়ে জীবনের পড়ন্ত লগ্নে আমার বালকবেলা খুঁজে পেয়ে ভীষণ রকম নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। দুই বাল্যবন্ধুর মাঝখানে দাঁড়িয়ে স্মৃতির মেঘে ঝাপসা হয়ে যাওয়া চশমার কাচ মুছেছিলাম অনেকক্ষণ ধরে।

নানার জন্য নিয়মিত বই আনতে গিয়ে স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর আগেই আমার সাহিত্যচর্চা খানিকটা পাকামিতে পরিণত হয়েছিল। অষ্টম শ্রেণিতে উঠেই সেই বয়সের তুলনায় বেশকিছু নিষিদ্ধ বই, যেমন শরৎচন্দ্রের ‘গৃহদাহ’, ড. নীহাররঞ্জনের ‘হাসপাতাল’, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ প্রভৃতি লুকিয়ে পাঠ সমাপ্ত করেছিলাম। তখন আমার বয়স সবে ১২ পার হয়েছে। আমি কবিতা পড়তে এবং আবৃত্তি করতেও খুব পছন্দ করতাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা ও ছোটগল্প পড়ে কৈশোরেই সব বাঙালির মতো আমিও মুগ্ধ হয়েছিলাম। মনে পড়ে মহান কবির সেইসব অসাধারণ পঙ্‌ক্তি—

‘ছোট প্রাণ, ছোট ব্যথা,

ছোট ছোট দুঃখকথা,

নিতান্ত সহজ-সরল,

সহস্র বিস্মৃতিরাশি

প্রত্যহ যেতেছে ভাসি

তার দু-চারিটি অশ্রুজল।’

১৯৬৫ সালের পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের পর পাকিস্তানি শাসকশ্রেণি কী মনে করে গাড়লের মতো বেতারে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার সীমিত অথবা বন্ধ করে দিয়েছিল। আর যায় কোথায়! তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাছে রবীন্দ্রনাথ একজন বিশ্বনন্দিত সাহিত্যিক থেকে রীতিমতো দেবতায় পরিণত হলেন। শ্মশ্রুমণ্ডিত ‘ঋষি’র ছোট ছোট মূর্তি ও ছবিতে সবার বৈঠকখানা ভরে যেতে লাগল। রবিঠাকুরের সেই যে দেবত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো, এ দেশে আজও তার অবসান হলো না। গত সপ্তাহে ড. ইউনূস সরকার কত কালের সাক্ষী বর্ষাকালে অথই পানির পাবনার চলন বিলের বারোটা বাজিয়ে সেখানে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে ঠাকুর পরিবারের জমিদারির অন্তর্গত ১ হাজার ৩০০ একর জমির মধ্য থেকে ১০০ একর জমি নিয়ে চলন বিল ভরাট করে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের প্রকল্প এখন বাস্তবায়িত হবে। বিশেষ করে রবীন্দ্র অধ্যয়ন করার জন্য ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করে গিয়েছিলেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের সব সরকারের প্রবল রবীন্দ্রপ্রেমের ধারাবাহিকতা জনগণের করের টাকায় রক্ষা করছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৌভাগ্য প্রকৃতই ঈর্ষণীয়। আমার এই মন্তব্যের খানিকটা ব্যাখ্যা দেওয়া আবশ্যক।

পূর্ববাংলা অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল শুধু জমিদার বনাম প্রজার। তিনি এই অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী নিপীড়িত বাঙালি মুসলমানদের কোনোদিন চেনাজানার চেষ্টা করেছেন বলে আমার জানা নেই। তার চিঠিপত্রে আমাদের দেশের কৃষিকাজ নিয়ে বেশ উৎসাহ প্রকাশ পেলেও সেখানে মাটি আছে, কিন্তু মানুষ অনুপস্থিত। আসলে তথাকথিত অভিজাত ঠাকুর পরিবারের মতো মূলত কলকাতা নিবাসী হিন্দু জমিদারদের কাছে পূর্ব বাংলার মুসলমান শ্রেণি খাজনা দিতে বাধ্য একদল অশিক্ষিত ও অস্পৃশ্য কৃষক ব্যতীত আর কোনো পরিচয় কখনো বহন করেনি।

যদিও কলকাতার বাবুদের ফুর্তির অর্থ যেত পূর্ববঙ্গের কাদামাটিতে সেই কৃষকদের উদয়াস্ত পরিশ্রম থেকেই। সিরাজগঞ্জ কিংবা শিলাইদহে ঠাকুর পরিবারের যেসব কুঠিবাড়ি নিয়ে বাংলাদেশের সব সুশীল আবেগে আপ্লুত হন, সেসব বাড়িতে সাধারণ মুসলমানদের প্রবেশাধিকার ছিল না। যে কয়েকজন ভাগ্যবান মুসলমান রবিঠাকুরের জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করতে পারতেন, তাদের অচ্ছুত হয়ে মাটিতে বসতে হতো, অথবা জাজিম গোটানো চৌকিতে স্থান হতো। রবীন্দ্রনাথের লেখা থেকেই আমাদের পূর্বপুরুষদের দুর্দশার চিত্র উদ্ধৃত করছি—‘আমি যখন প্রথম আমার জমিদারি কাজে প্রবৃত্ত হয়েছিলুম তখন দেখেছিলুম, কাছারিতে মুসলমান প্রজাকে বসতে দিতে হলে জাজিমের একপ্রান্ত তুলে দিয়ে সেইখানে তাকে স্থান দেওয়া হতো।’ (হিন্দু-মুসলমান)

হিন্দুর উপরোক্ত আচারকে দুই ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠীর পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপনে বিরাট বাধা বলে স্বীকার করে নিলেও জমিদার রবীন্দ্রনাথ কোনোদিন এই অসভ্যতা বন্ধ করতে চেয়েছেন, তার কোনো প্রমাণ মেলে না। অথচ তিনি এই বঙ্গে নিয়মিত আসতেন, পদ্মা নদীতে বজরায় ভেসে বেড়াতেন, কবিতা ও গল্প লিখতেন, বজরা থেকে তার প্রিয় ভাতিজি ইন্দ্রানী দেবীকে চিঠি লিখতেন এবং অবশ্যই খাজনা তুলতে ভুলতেন না। তার পদযুগল স্পর্শ করে দরিদ্র মুসলমান কৃষক হাড়ভাঙা খাটুনির টাকা নজরানা দিয়ে কৃতার্থ হচ্ছে, এমন বর্ণনা রবীন্দ্রনাথের লেখাতেই পড়েছি।

আজ হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রবীন্দ্রনাথের নামে চলন বিলে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, কিন্তু তিনি বা তার পরিবার কখনো সিরাজগঞ্জে মুসলমানদের শিক্ষাবিস্তারের জন্য খাজনার একটি টাকাও খরচ করেননি। বরং অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে কলকাতার হিন্দু বাবুরা ১৯১২ সালে যে তুমুল আন্দোলন করেছিলেন, সেই আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথেরও সমর্থন ছিল।

সেই সময় কলকাতার বিখ্যাত গড়ের মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-বিরোধীরা এক জনসভার আয়োজন করেছিল। সেই সভায় সভাপতিত্ব স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ করেছিলেন, এমন একটি প্রচারণা থাকলেও প্রয়াত অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মতো চিহ্নিত ভারতপন্থি বুদ্ধিজীবীরা দাবিটি সঠিক নয় বলে তাদের বিভিন্ন লেখায় মত দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ গড়ের মাঠের জনসভায় সভাপতিত্ব করেছিলেন কি না, এ নিয়ে বিতর্ক আজ পর্যন্ত থাকলেও তিনি অথবা তার পরিবার যে আমাদের অঞ্চলের শিক্ষার প্রসারে কোনো ভূমিকা রাখেননি, এ নিয়ে অবশ্য কোনো মতদ্বৈধ নেই। কাজেই তার নামে এ দেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে কোনো যুক্তি খুঁজে পাচ্ছি না।

রবীন্দ্রনাথের যে গানটি আমাদের জাতীয় সংগীত, সেটি নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রেক্ষাপটে গানটি লেখা হয়েছিল। প্রায় ১৫০ বছর ঔপনিবেশিক শাসন চালানোর পর বিলম্বে হলেও ব্রিটিশরা উপলব্ধি করেছিল, পূর্ববঙ্গের জনগণের ওপর সুদীর্ঘকাল অবিচার করা হয়েছে। কেবল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গের জন্য শস্য ও কাঁচামাল তৈরির ‘হিন্টারল্যান্ড’ বানিয়ে রাখার ফলে অঞ্চলটি সার্বিকভাবে অনুন্নত এবং এর অধিকাংশ মানুষ দুর্দশাগ্রস্ত ছিল। তৎকালীন বড়লাট লর্ড কার্জন বাংলার পশ্চাৎপদ অংশের উন্নতিকল্পে ‘বঙ্গ প্রেসিডেন্সি’ দুই ভাগ করে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গ এবং আসামকে একত্র করে একটি নতুন প্রদেশ গঠনের প্রস্তাব করলেন, যার রাজধানী নির্বাচিত হয়েছিল ঢাকা। হিন্দুরা এই প্রস্তাবের ভয়ানকভাবে বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করলে সেটা ক্রমেই সশস্ত্র রূপ পরিগ্রহ করে।

বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে গড়ে ওঠা বাঙালি হিন্দুদের জঙ্গি স্বদেশি আন্দোলন প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে কোনো স্বাধীনতার আন্দোলন ছিল না। এটা ছিল পূর্ববঙ্গের মুসলমান জনগণের বিরুদ্ধে ‘ভদ্রলোক’ হিন্দু ও জমিদার শ্রেণির স্বার্থরক্ষার আন্দোলন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গভঙ্গের বিরোধিতা করে লিখলেন—‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ কলকাতার হিন্দু জমিদারগোষ্ঠী পূর্ববঙ্গে তাদের অন্যায়ভাবে প্রাপ্ত জমিদারি হারানোর ভয় থেকেই বঙ্গভঙ্গের এমন প্রবল বিরোধিতা করেছিলেন। অতএব যে গানটি রচিত হয়েছিল পূর্ববঙ্গের জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার অর্জন বাধাগ্রস্ত করার একান্ত স্বার্থপর আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করার জন্য, সেই গান সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশের জাতীয় সংগীতের মর্যাদা পাওয়াটা ইতিহাসের সঙ্গে এক ধরনের তামাশার মতোই লাগে।

শেখ মুজিব সম্ভবত রবীন্দ্রনাথের বিশেষ উদ্দেশ্যে লেখা গানটির ইতিহাস সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলেন বলেই স্রেফ আবেগবশত ‘আমার সোনার বাংলা’কে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বানিয়েছিলেন। বাঙালি মুসলমানের মতো ইতিহাস-অসচেতন জাতির কপালে সর্বদা এমন দুর্ভোগই লেখা থাকে। প্রসঙ্গক্রমে আরেকটি তথ্য উল্লেখ করা জরুরি মনে করছি। যে বাঙালি হিন্দুরা ১৯০৫ সালে রীতিমতো খুনোখুনি করে বঙ্গভঙ্গ রদ করেছিলেন, সেই হিন্দুরাই ১৯৪৭ সালে আবারও খুনোখুনি করে বাংলা ভাগ করেছিলেন। দুবারই তারা কেবল নিজেদের সাম্প্রদায়িক স্বার্থ দেখেছিলেন।

শুধু নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হওয়ার জন্যই নয়, বিভিন্ন কারণে সেই ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের চূড়ায় অবস্থান করলেও তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সুদীর্ঘ সাহিত্যিক জীবনে প্রায় মৌনতা অবলম্বন করে গেছেন। তিনি মারাঠা, শিখ, পৌরাণিক হিন্দু শাসক ও বীরদের জয়গান করলেও ভারতের হাজার বছরের ইতিহাসে কোনো মুসলমান বীর খুঁজে পাননি। তিনি শিবাজীর গুণগান করেছেন, অথচ মারাঠি দস্যুরা বাংলায় এক আতঙ্কের নাম ছিল।

বাংলার মায়েরা অবাধ্য সন্তানদের ঘুম পাড়ানোর জন্য মারাঠি বর্গিদের ভয় দেখাতেন। রবীন্দ্রনাথের গল্প ও উপন্যাসে যেখানে মুসলমান শাসকদের প্রসঙ্গ এসেছে, সেখানে তাদের ভিলেন হিসেবেই চিত্রিত করা হয়েছে। কেবল ‘শাজাহান’ কবিতায় তিনি তাজমহলের সৌন্দর্যের কথা বলতে গিয়ে সম্রাটের প্রেমিক রূপটাকে সামনে এনেছেন। বাংলা ভাষার উন্নয়নে শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ-পরবর্তী বাংলার স্বাধীন সুলতানদের বিপুল অবদানের কথা হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সব ঐতিহাসিকদের বইয়ে থাকলেও রবীন্দ্রনাথের কোনো লেখায় তার স্বীকৃতি আমি অন্তত খুঁজে পাইনি। কেউ খুঁজে দিতে পারলে উপকৃত হব।

এমনকি ড. রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতো মুসলমানবিদ্বেষী ঐতিহাসিকও রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে লিখেছিলেন—‘তার কবিতা কেবল শিখ, রাজপুত ও মারাঠা বীরদের গৌরব ও মাহাত্ম্য দ্বারা অনুপ্রাণিত, কোনো মুসলমান বীরের মহিমা নিয়ে তিনি কখনো একচ্ছত্রও লেখেননি। যদিও ভারতে অসংখ্য মুসলমান বীরের আবির্ভাব হয়েছিল।’ (History of Bengal)

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বলতম নক্ষত্রের নাম নিঃসন্দেহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার গান, কবিতা ও গল্প সেই কৈশোর থেকে আমাকে মুগ্ধ করেছে। এখনো সময় পেলেই তার ‘পুরস্কার’ কবিতাটা আমি পড়তে ভালোবাসি। ওই কবিতায় তিনি মহাভারতের কাহিনি ব্যবহার করেছেন। কঠিন বাংলা শব্দ কতখানি গীতিময় হতে পারে, কবিতাটি তার এক অত্যাশ্চর্য উদাহরণ।

মুসলমান সমাজের প্রতি উদাসীন হলেও রবিঠাকুরের লেখা যেকোনো প্রাসঙ্গিক গান বা কবিতা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হতেও কোনো বাধা নেই। কিন্তু ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি ১৯০৫ সালে যে প্রেক্ষাপটে রচিত হয়েছিল, সেটি বিবেচনায় নিলে ওই বিশেষ গানটিকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে যারা নির্বাচন করেছিলেন তাদের মূর্খতা সীমাহীন। আর একটি কথা।

রবীন্দ্রনাথকে কেবল একজন সাহিত্যিক হিসেবেই মূল্যায়ন করা উচিত। সেই ষাটের দশক থেকে ভারতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের অন্যতম হাতিয়ার রূপে রবীন্দ্রনাথকে বাংলাদেশে দেবতা বানানোর যে প্রয়াস চলছে, তার অবসান হওয়া জরুরি। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সব ধরনের ব্যক্তিপূজা আমাদের পরিহার করা উচিত। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ব্যক্তিপূজার কুফল আমাদের হাতেকলমে দেখিয়ে গেছেন।