Image description

ড. কামরুল হাসান মামুন

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ বায়োটেকনোলজি নামের এই প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। শুধু এটি নয় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনও একই মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এইরকম আরো কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান মন্ত্রণালয়ের অধীনে। সেই ইনস্টিটিউটের একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিচিং/রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পিএইচডি কোর্সে ভর্তি হওয়ার অফার পেয়েছেন। আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশ এবং বিশ্বের সকল দেশের ছেলেমেয়েরা যারা আমেরিকায় পিএইচডি করতে যায় সাধারণত এই অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ অফারের বিপরীতেই শিক্ষা ছুটি নিয়ে আমেরিকায় পিএইচডি করতে যান। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এটাই নিয়ম। কিন্তু আলোচ্য ক্ষেত্রে ওই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছুটির জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলে মন্ত্রণালয় তাকে জানায় যে, ওই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা T/A বা টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ  প্রাপ্ত হয়েছেন যা "পূর্ণ বৃত্তি নয়" (কমেন্ট থ্রেডে চিঠির কপি দিলাম)! আহাম্মকি আর কাকে বলে। 

দুনিয়ায় উচ্চ শিক্ষা সম্বন্ধে কত স্বল্প ধারণা নিয়ে এরা বাংলাদেশের আমলা হয়ে দেশটার সর্বনাশ করছে। যেহেতু ওটা পূর্ণ বৃত্তি না সেহেতু তাকে ছুটি মঞ্জুর করেনি। অথচ অনেক বছর ধরে দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় প্রধানমন্ত্রী স্কলারশিপ নামক এক ফেলোশিপের আওতায় কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশে পিএইচডি বা মাস্টার্স করতে গিয়েছে। আর এই ক্ষেত্রে ওই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিজ যোগ্যতা প্রমাণ করে T/A বা টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পেয়েছেন ফলে দেশের মানুষের ট্যাক্সের একটি টাকাও খরচ না করে বরং সে বৈদেশিক মুদ্রা জমিয়ে দেশে পাঠানোর সম্ভবনা আছে এবং একই সাথে পিএইচডি করে দেশে আসবে তাকে ছুটি দেয়নি। এরা নিজের যোগ্যতায় একটা টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পেয়ে দেখাক। পারেতো কেবল মানুষের ট্যাক্সের টাকায় যেতে। 

কিছুদিন আগে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের একজন বিজ্ঞানী আমেরিকায় পোস্ট-ডক করার জন্য ফুল-ব্রাইট স্কলারশিপ পেয়েছিল তাকেও ছুটি দেয়নি। সেই বিজ্ঞানী এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোর্টে গিয়েছিল। সেখানে তারা কি বলেছে? বলেছে পোস্ট-ডক কোন ডিগ্রি না তাই বিধিমোতাবেক ছুটি দেওয়া যায় না। পোস্ট-ডক যে শুধু ডিগ্রি না ডিগ্রির আব্বা যাদের সেই জ্ঞান নাই তারাই বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক হয়ে বসে আছে। 

বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা হলো পিএইচডি সাথে পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতা থাকলে সোনায় সোহাগ। মানে পোস্ট-ডক অফার পাওয়ার অর্থ হলো তার পিএইচডি ডিগ্রিকে সার্টিফাই করেছে। একটা ভালো পিএইচডি হলেই কেবল কেউ পোস্ট -ডকের অফার পায়। এই দেশ তাহলে কীভাবে উন্নত হবে? কল্পনা করুনতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যদি মন্ত্রণালয়ের অধীনে হতো তাহলে কত শত ছেলেমেয়ের বিদেশে পিএইচডি করতে যাওয়া আটকে যেত। তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশের পিএইচডি থাকতো না। এটিই প্রমাণ করে কোন বৈজ্ঞানিক বা গবেষণা প্রতিষ্ঠান কোন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকতে পারে না। ক্ষমতা যখন যোগ্যতাকে ছাড়িয়ে যায় সেটা বিষাক্ত হয়ে উঠে। কেবল মাস্টার্স পাশ আমলারা কীভাবে পিএইচডি এবং ক্ষেত্র বিশেষে পোস্ট-ডক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন বিজ্ঞানীদের ছুটি পাবে কি পাবে না, প্রমোশন পাবে কি পাবে না এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার পায়? সম্ভব হলে আগামীকালের মধ্যে বাংলাদেশের সকল গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে মন্ত্রণালয় মুক্ত করে এদের একটা স্বাধীন কমিশনের অধীনে নিয়ে আসুন। বিজ্ঞানীদের শৃঙ্খল মুক্ত করুন। শৃঙ্খলে আবদ্ধ থেকে মুক্ত চিন্তা করা যায় না। আর মুক্ত চিন্তা করতে না পারলে গবেষণা বা সৃষ্টিশীল কাজ অসম্ভব।

লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়