Image description

মালদ্বীপে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে ড. মো. নাজমুল ইসলামের নিয়োগ নিয়ে কূটনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা। ৩৩ বছর বয়সী এই কর্মকর্তার নিয়োগকে অনেকেই অভিহিত করছেন "নজিরবিহীন" হিসেবে। তার বয়স, অভিজ্ঞতা এবং পেশাগত পটভূমি—সবকিছু মিলিয়ে এই নিয়োগকে ব্যতিক্রম বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সাধারণত, রাষ্ট্রদূতের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর পদে নিয়োগ পেতে হলে পেশাদার কূটনীতিক হিসেবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা থাকা আবশ্যক। অথচ ড. নাজমুল ইসলামের কূটনৈতিক অঙ্গনে পূর্ব কোনো সরাসরি অভিজ্ঞতা নেই। তিনি তুরস্কে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এ ছাড়া দেশটির পার্লামেন্টে উপদেষ্টা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর স্ত্রী তুরস্কের নাগরিক ও সরকারি চাকরিজীবী।

নিয়োগ নিয়ে বিতর্কের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু—তাঁর বিদেশে বসবাস, অপর একটি দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা এসব বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।

তবে, ড. নাজমুল ইসলাম দাবি করেছেন যে, তাঁর নিয়োগে কোনো অনৈতিক প্রভাব বা লেনদেন ছিল না। গণমাধ্যমে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান, তাঁর স্ত্রী তুরস্কে চাকরি ছাড়ছেন এবং তিনি নিজেও দেশের স্বার্থে সর্বোচ্চ নিষ্ঠায় দায়িত্ব পালনের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

অন্যদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারের নির্বাহী সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রদূতের পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে—এই নিয়োগের ক্ষেত্রে সেই ‘বিশেষ বিবেচনা’টি কী ছিল? কারণ, ৩৩ বছর বয়সে নিয়োগ পাওয়া একজন পেশাদার কূটনীতিক সাধারণত সিনিয়র সহকারী সচিব পদে থাকেন; রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে আরও একাধিক ধাপ পেরোতে হয়।

সূত্র জানায়, শুরুতে ড. ইসলামকে তুরস্কে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব করা হলেও সেখানে নিযুক্ত পেশাদার কূটনীতিককে সরানো না যাওয়ায় তাকে মালদ্বীপে পাঠানো হচ্ছে। গত ২৭ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন এবং ৩ আগস্ট পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।

নিয়োগে অনৈতিক লেনদেন তথা অন্তর্বর্তী সরকারের একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টাকে ম্যানেজ করতে তুরস্ক সফরকালে তার বাসায় নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে ড. নাজমুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

যদিও উপদেষ্টার প্রটোকল ভেঙে তার বাড়িতে যাওয়া কিংবা নিজের সখ্যতাকে পুরোপুরি অসত্য বলে দাবি করেন তিনি।

অনেকের মতে, এই ধরনের ব্যতিক্রমধর্মী নিয়োগ অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কেউ কেউ একে 'পুরস্কারভিত্তিক নিয়োগ' বলেও মন্তব্য করেছেন।

নাজমুল ইসলামের জন্ম নোয়াখালীতে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর এবং পরে তুরস্কের ইলদিরিম বেয়াজিট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা সত্ত্বেও কূটনৈতিক পরিসরে তার প্রত্যক্ষ অবদান বা অভিজ্ঞতা নাই।

রাষ্ট্রদূতের পদে এমন নিয়োগ ভবিষ্যতে কী বার্তা দেয়—তা নিয়ে চিন্তিত দেশের কূটনৈতিক মহল। তারা মনে করেন, পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে গঠিত একটি কূটনৈতিক কাঠামো রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

শীর্ষনিউজ