
সদ্য শেষ হওয়া পবিত্র ঈদুল আজহার পরিপ্রেক্ষিতে এবারের মন্তব্য প্রতিবেদনে বর্তমান বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের হাল-হকিকত, বিবেক, ঈমান, সাহস, স্বার্থপরতা প্রভৃতি বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।
গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্য সফর করে গেলেন। সেই সফরে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে মেজবান মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো চোখধাঁধানো অভ্যর্থনা জানিয়েছে। সৌদি আরব, আমিরাত ও কাতারের মধ্যে ট্রাম্পের মনোরঞ্জনের জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলেছে। ধারণা করছি, সেসব বর্ণাঢ্য আয়োজনে তিন দেশের সরকারের বিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় হয়েছে। কাতারের আমির প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে একটি ‘বোয়িং ৭৪৭ জেটলাইনার’ উপহার দিয়েছেন।
সেই উপহারের বিমানটি মার্কিন সরকার তাদের প্রেসিডেন্টের বিমান বহরে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে ডেমোক্র্যাট নেতারা ট্রাম্পের উপহার নেওয়ার সমালোচনা করে বলছেন, বিমানটিকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যবহারের জন্য উপযোগী করে তুলতে নাকি আরো এক বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। আমি নিশ্চিত, বাইডেন এখন প্রেসিডেন্ট পদে থাকলে ডেমোক্র্যাটরা কাতারের আমিরের উপহার নিয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতেন না, তখন হয়তো রিপাবলিকানরা সমালোচনা করতেন। এই পাল্টাপাল্টি বাগ্যুদ্ধ অবশ্য একেবারেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়। এসবে আমাদের মতো আদার ব্যাপারীর মাথা না ঘামালেও চলবে। আমার হতাশার জায়গাটা ভিন্ন।
যখন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে আত্মসম্মানজ্ঞানহীন আরবদের নির্লজ্জ মাতামাতি চলছে, ঠিক সেই সময় মার্কিন অস্ত্র ও অর্থে বলীয়ান বর্বর ইসরাইলি দখলদার বাহিনী গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। জায়নিস্ট সেনারা অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের আরো ভূমি কেড়ে নিয়ে তাদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দিচ্ছে এবং নির্বিচারে শিশু, নারী, ও পুরুষদের হত্যা করছে। শুধু তাই নয়, গাজার ২০ লক্ষাধিক মানুষকে অনাহারে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে উদ্ধত ইসরাইল ছোট্ট ভূখণ্ডটির চারদিকে অবরোধ সৃষ্টি করে রেখেছে। জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস এই নির্মমতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করার অব্যাহত চেষ্টা করে গেলেও তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভেটো ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে ইসরাইলের যাবতীয় অন্যায়কে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে। শুধু কূটনৈতিক সমর্থনই নয়, গাজায় প্রতিদিন যে হত্যাযজ্ঞ চলছে তার যাবতীয় রসদ খোদ আমেরিকাই জোগাচ্ছে। ইসরাইল যে আন্তর্জাতিক আইনে একটি ভয়ানক অপরাধী রাষ্ট্র, সেই সত্য মার্কিনিরাও জানে। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বাইডেনের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সম্প্রতি স্কাই নিউজের পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেছেন, ইসরাইল গাজায় যুদ্ধাপরাধ করেছে। সরকারে থাকতে কেন তিনি সেই যুদ্ধাপরাধের পক্ষে ওকালতি করেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ম্যাথু মিলার বলেছেন, ‘আপনি যখন প্রেসিডেন্ট বা প্রশাসনের মুখপাত্র হবেন, তখন আপনাকে প্রশাসনের অবস্থান তুলে ধরতে হবে।
যখন প্রশাসনে থাকবেন না, তখনই কেবল নিজস্ব মতামত দিতে পারবেন।’ অর্থাৎ, ম্যাথু মিলার অকপটে স্বীকার করে নিলেন, তিনি সরকারে থাকতে মিথ্যা বলেছেন এবং ফিলিস্তিনি শিশু, নারী ও পুরুষদের পাইকারিভাবে হত্যা করতে ওয়াশিংটন প্রশাসনের কোনোরকম বিবেক কখনো জাগ্রত হয় না। ইসরাইলকে অন্ধভাবে সমর্থন করাই ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারকদের ভূ-রাজনৈতিক কৌশল। গত ২০ মাসের অব্যাহত গণহত্যাকালে ওয়াশিংটন এ পর্যন্ত পাঁচবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে, যাতে ইসরাইল বর্বরতা চালিয়ে যেতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অন্ধ ও বিবেকহীন ভূমিকা মুসলিম বিশ্বকে মেনে নিয়েই ২০০ কোটি মানুষের অধিকার আদায় করার জন্য লড়াই করতে হবে। বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন হলো—আদৌ কি আজকের মুসলমানদের জুলুমের বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো ঈমানি শক্তি রয়েছে?
আমরা যতই মুসলিম বিশ্ব কিংবা উম্মাহর কথা বলি না কেন, বাস্তবে তার যে কোনো অস্তিত্ব নেই সেটা গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় পেট্রোডলার-সমৃদ্ধ দেশগুলো আবারও প্রমাণ করে দিয়েছে। শুরুতেই বলেছি, ট্রাম্পের সফরের সময় সৌদি আরব, আমিরাত ও কাতার যখন তাকে খুশি করতে বিলিয়ন ডলারের ওপর ব্যয় করছে, ঠিক সেই সময়, প্রতিদিন ইসরাইলি বোমা হামলায় নিহত হওয়া ছাড়াও পানি ও খাদ্যের অভাবে ফিলিস্তিনের হাজার হাজার শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। সেই মাসুম শিশুদের কঙ্কালসার দেহ দেখে আমাদের চোখের পানি আটকানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু আরব দুনিয়া নির্বিকারভাবে ইসরাইলের পদলেহন করে চলেছে।
পাঠক, আপনারা কি জানেন, যে তিনটি দেশ এবার ট্রাম্পের এক সফরে বিলিয়ন ডলারের অধিক খরচ করল, তারা ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য বছরে কত ডলার অনুদান দেয়? সৌদি আরব, আমিরাত ও কাতার মিলে বছরে সর্বোচ্চ ১২৫ মিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ কাতার যে বিমানটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উপহার দিয়েছে, তার মূল্যের চার ভাগের এক ভাগ বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত মুসলমান জনগোষ্ঠীর জন্য তথাকথিত মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে ধনী তিন দেশের সম্মিলিত বরাদ্দ! কাহিনির এখানেই শেষ নয়। এই আরব দেশগুলো গণহত্যাকারী জায়নিস্ট ইসরাইলের অস্ত্রের অন্যতম বৃহৎ বাজার। তারা সম্মিলিতভাবে বছরে ইসরাইলের কাছ থেকে প্রায় দুই বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র কেনে। অর্থাৎ ফিলিস্তিনের জনগণকে হত্যা করতে ইসরাইলের যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তারও একটি উল্লেখযোগ্য অংশ আরবরাই মেটাচ্ছে। গাজায় ২০ মাস ধরে চলমান ইসরাইলি গণহত্যায় মুসলিম বিশ্ব কী করেছে এবং অন্যান্য ধর্মের মানুষের দেশগুলো কী করেছে, সেই তুলনামূলক চিত্রটা এবার খানিকটা দেখার চেষ্টা করি।
মুসলিম বিশ্বের মধ্যে কাতার যুক্তরাষ্ট্রকে না চটিয়ে অনেকটা লোকদেখানো যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চালাচ্ছে এবং ন্যাটো সদস্য তুরস্ক কড়া কথার মধ্যে তার ভূমিকা সীমিত রেখেছে। মিসর বহু আগেই ইসরাইলের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। বলা হয়ে থাকে, ইসলামি জাতীয়তাবাদী মুরসিকে হটিয়ে মিসরে সিসির ক্ষমতা দখলে সৌদি আরব, ইসরাইল ও আরব আমিরাতের যৌথ ভূমিকা ছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আগের মেয়াদে আমিরাত, বাহরাইন ও মরক্কো তথাকথিত ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’-এর নামে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের প্রভুত্বকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নিয়েছে।
মক্কায় পবিত্র বাইতুল্লাহ ও মদিনায় মসজিদ-এ-নববির তত্ত্বাবধায়কের দাবিদার সৌদি আরব লোকলজ্জার ভয়ে প্রকাশ্যে ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ড’-এ স্বাক্ষর না করলেও অপ্রকাশ্যে নেতানিয়াহুর সব নির্দেশ নতমস্তকে মেনে চলছে। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশ ইন্দোনেশিয়া বিশ্ব ভূরাজনীতিতে বরাবরই নির্লিপ্ত। সে দেশের জনগণ কিংবা রাজনৈতিক নেতাদের ফিলিস্তিন নিয়ে তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। ২৮ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে গাজায় চলমান গণহত্যার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য বিক্ষোভ সংঘটিত হয়নি। অথচ ছয় কোটি জনসংখ্যার ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের দেশ ইতালিতে গত শনিবার তিন লাখ মানুষ ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। মুসলমান ও আরবদের দুই সংগঠন ওআইসি ও আরব লিগ নিয়ে যেকোনো আলোচনাই অর্থহীন। এরা সবার কাছে হাসি-তামাশার বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
ইসরাইলের গণহত্যার বিরুদ্ধে যে দেশটি সবচেয়ে সোচ্চার ও সাহসী ভূমিকা পালন করেছে, সে দেশটির নাম দক্ষিণ আফ্রিকা, যেখানে মুসলমানের সংখ্যা মাত্র দুই শতাংশ। নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টধর্ম পালন করে। ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার দায়ে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে মামলা দায়ের করেছে এই দক্ষিণ আফ্রিকা। ইউরোপে আয়ারল্যান্ড ও স্পেন অসহায় ফিলিস্তিনি নাগরিকদের গণহত্যার শুরু থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে। স্পেনে ৫৫ শতাংশ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান, ৪০ শতাংশ নাস্তিক, এগনস্টিক, অথবা ধর্মহীন এবং মাত্র পাঁচ শতাংশ ইসলামসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
আয়ারল্যান্ডে ৭৫ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী, যাদের মধ্যে ৯০ শতাংশ ক্যাথলিক। দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা অনুল্লেখ্য। গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে বেলিজ, বলিভিয়া, কলোম্বিয়া ও নিকারাগুয়া ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে। ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান এই চারটি দেশের কোনোটিতেই উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা বসবাস করে না। চারটি দেশেই খ্রিষ্টান ধর্মের মানুষ বিপুলভাবে সংখ্যাগুরু। জাতিসংঘের বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল আন্তোনিও গুতেরেস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চোখরাঙানি সত্ত্বেও অব্যাহতভাবে ইসরাইলি আগ্রাসনের কঠোর নিন্দা করে প্রায় প্রতিদিন যুদ্ধবিরতির জন্য দাবি জানিয়ে চলেছেন।
মানবতার পক্ষের এই সাহসী মানুষটি পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং ধর্মবিশ্বাসে খ্রিষ্টান। জাতিসংঘের আরো একজন বিশ্ববিবেক জাগ্রত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন, যার নাম ফ্রানসেসকা এলবানিজ। তিনি ইতালির নাগরিক এবং খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী। এলবানিজ ইসরাইল দ্বারা অধিকৃত ফিলিস্তিনের অধিকৃত এলাকার জন্য জাতিসংঘ নিযুক্ত বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার হিসেবে কর্মরত আছেন। মুসলমানদের তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না।
গাজার জনগণের পাশে দাঁড়ানোর ব্যর্থতার জন্য বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মুসলমানের লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাওয়া উচিত। নানা ইস্যুতে মুসলমানদের এই ধরনের ভীরুতা, স্বার্থপরতা ও মোনাফেকি দুর্ভাগ্যজনকভাবে সর্বত্র দৃশ্যমান। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট আমলে বাংলাদেশের একশ্রেণির কথিত আলেমগোষ্ঠীর মধ্যেও একই ধরনের দুর্বলতা লক্ষ করা গেছে। শাপলা চত্বরে যে ব্যক্তির নির্দেশে আলেমদের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল, তাকেই ‘কওমি জননী’ খেতাব দিতে এই তথাকথিত আলেমদের বিবেক বিন্দুমাত্র পীড়িত হয়নি। মাদরাসা-পড়ুয়াদের কী এক সনদ দেওয়ার জন্য নাকি এক ভয়াবহ হত্যাকারী, দখলদার ও ভারতীয় দালাল শাসককে উপরোক্ত খেতাব দেওয়া হয়েছিল! মাদরাসার সব ছাত্র-শিক্ষকদের কাছে আমার প্রশ্ন—ওই সনদপ্রাপ্তিতে আপনাদের কী উপকার সাধিত হয়েছে? ওই সনদ দিয়ে এযাবৎ আপনারা কত চাকরি পেয়েছেন? কারো ঈমানের প্রশ্ন তোলার ধৃষ্টতা আমার নেই।
সেটা সর্বশক্তিমান আল্লাহ বিচার করবেন। তবে কত অল্প মূল্যেই না আপনারা বিবেক বেচে দিলেন! যেসব মুসলিম দেশের শাসকরা নিজেদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য আজ ফিলিস্তিনের জনগণের রক্তের সঙ্গে সওদা করছেন, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ওই আলেমদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই যারা শাপলার রক্তের বিনিময়ে খুনি হাসিনার সঙ্গে সেদিন সওদা করেছিলেন। শুধু কোরআন ও হাদিস বর্ণনা করলে কিংবা ওয়াজ করলেই যদি ইসলাম কায়েম হতো, তাহলে আমাদের রাসুলকে (সা. আ.) ওহোদের যুদ্ধক্ষেত্রে রক্ত ঝরাতে হতো না, তাঁর দন্তমোবারকও শহীদ হতো না।
মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা. আ.)-এর সেই রক্তাক্ত চেহারা কল্পনা করুন, যখন মুশরিক কুরাইশদের তরবারির আঘাতে শিরস্ত্রাণ ভেঙে তাঁর মাথায় প্রোথিত হয়েছিল। রক্তাক্ত অবস্থাতেও তিনি অসীম সাহসে প্রকৃত সেনাপতির সব কর্তব্য পালন করেছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ওহোদের বিপর্যয়ের পর কোনোরকম বিচলিত না হয়ে আমাদের রাসুল (সা. আ.) মদিনা শহর রক্ষার জন্য আহত অবস্থায় সাহাবিদের নিয়ে কুরাইশদের পেছনে ধাওয়া করেছিলেন। আজকের কাপুরুষ ও দুর্বল ঈমানের মুসলমান কি সেই রাসুলের (সা. আ.) উম্মত হিসেবে নিজেদের দাবি করতে পারেন?
এই কদিন আগে লাখ লাখ ভাগ্যবান মুসলমান হজ করেছেন, আমরা কোরবানি দিয়েছি। সর্বশক্তিমান আল্লাহর নির্দেশে হজরত ইবরাহিম (আ.) তার পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। মহান আল্লাহ তায়ালার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.) এর পরিবর্তে সেদিন বেহেশত থেকে প্রেরিত পশু কোরবানি দেওয়া হয়েছিল।
আমরা সাধ্যমতো প্রতি বছর হজরত ইবরাহীমের (আ.) সুন্নত পালনের চেষ্টা করি। আজ গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনের বাবা-মায়েরা প্রতিদিন তাদের সন্তানদের হজরত ইবরাহিমের (আ.) মতো কোরবানি দিচ্ছেন। তাহলে আল্লাহর দরবারে কি আমাদের কোরবানি গৃহীত হবে, নাকি ফিলিস্তিনের মুসলমানদের? ধর্ম সম্পর্কে আমার জ্ঞান অতি সীমিত। তবে আমার বিবেক বলে আমরা নই, ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীই প্রকৃত মুসলমান। আল্লাহ তাদের সকল ত্যাগের জন্য যেন উত্তম পুরস্কার দান করেন।