
ইংল্যান্ডের ফুটবল ইতিহাসে সর্বকালের সেরাদের তালিকায় ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুটের অধিকারী গ্যারি লিনেকার নিশ্চয়ই বেশ ওপরের দিকেই থাকবেন। তিনি ২৫ বছর ধরে বিবিসির একটি ফুটবলবিষয়ক খুবই জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের হোস্ট ছিলেন। গাজার গণহত্যা ও ব্রিটেনে অভিবাসীদের অধিকার নিয়ে লিনেকারের মানবিক অবস্থানের কারণে তাকে সম্প্রতি বিবিসি ছাড়তে হয়েছে।
গ্যারি লিনেকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত সাংবাদিক মেহেদি হাসানের সঙ্গে গত বছর এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, গাজার নির্মম গণহত্যার চিত্র তাকে অনবরত কাঁদায়। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, গাজার প্রতিদিনের গণহত্যার মর্মবিদারক চিত্র একজন প্রকৃত মানবিক মানুষ গ্যারি লিনেকারকে কাঁদালেও তথাকথিত মুসলিম উম্মাহ একেবারে নির্বিকার। ফিলিস্তিনের অসহায় শিশুদের এক বেলা আহার না জুটলেও মুসলিম বিশ্বের ধনী দেশগুলো বিলাসব্যসনে মত্ত। মনে হচ্ছে, বিশ্বের ২০০ কোটি মুসলমান সব ধরনের মানবিকতা, সহমর্মিতা, সংবেদনশীলতা ও বোধবুদ্ধি হারিয়ে এক বিশাল জোম্বি গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে।
গাজার গণহত্যা হিটলারের নৃশংসতাকে অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে। সেখানে জায়নিস্ট ইসরাইলি বাহিনীর দেড় বছরব্যাপী ভয়াবহ নির্মমতা বিগত দুই হাজার বছরের মানব ইতিহাসে কেবল ১২ ও ১৩ শতকের চেঙ্গিস খান ও হালাকু খানের মোঙ্গল সেনাবাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের সঙ্গে তুলনীয়। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জোসেফ সন্ডার্স মোঙ্গলদের সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, ‘The most notorious practitioners of genocide.’ সংক্ষেপে বাংলায় বললে, সর্বনিকৃষ্ট গণহত্যাকারী। সন্ডার্স ১৯৭২ সালে মারা গেছেন। আজ ইসরাইলি গণহত্যা দেখার জন্য বেঁচে থাকলে সন্ডার্স নিশ্চয়ই তার মত বদলে লিখতেন, ‘জায়নিস্টদের নৃশংসতার তুলনায় মোঙ্গলরা নিতান্তই শান্তিবাদী ছিল।’
মনে রাখবেন, ১২৫৮ সালে হালাকু খান যখন বাগদাদ নগরী ধ্বংস করেছিলেন, তখন পৃথিবীতে ক্যামেরা ছিল না, টেলিভিশন ছিল না, মিডিয়া ছিল না, মোবাইল ফোন ছিল না। বাগদাদে মোঙ্গলদের গণহত্যা এবং সেখানকার বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ও পাঠাগার পুড়িয়ে দেওয়ার কাহিনি পরবর্তী কালের মানুষ কেবল ইতিহাসের বইতে পড়েই শিউরে উঠেছে। আর আজ গাজার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বোমা ও মিসাইল নিক্ষেপ করে উড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য আমরা প্রতিদিন ইউটিউব চালালেই দেখতে পাচ্ছি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত বেশুমার হাজার পাউন্ডের বোমার বিস্ফোরণে নারী ও শিশুর ছিন্নভিন্ন লাশ আকাশে উড়তে দেখছি। হাত-পা হারানো হাজারো নিষ্পাপ শিশুর কান্নাভরা মুখ টেলিভিশনে দেখে কষ্টে বুক ভেঙে যাচ্ছে। আপনারা কি আদৌ ধারণা করতে পারেন, গাজায় মার্কিন, ব্রিটিশ ও জার্মানির মদতে বর্বর জায়নিস্টরা কতটা ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে? আমি একেবারে সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করছি। আমি নিশ্চিত, প্রকৃত পরিস্থিতি আমার পরিসংখ্যাননির্ভর বর্ণনার চেয়ে অনেক বেশি মর্মান্তিক।
গাজায় এ পর্যন্ত ৯২ শতাংশ বাসস্থান, ৯০ শতাংশ স্কুল এবং সব স্থাপনার ৭০ শতাংশ ধ্বংস করেছে ইসরাইলি বাহিনী। সেখানে এমন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও অবশিষ্ট নেই যেখানে বোমা ফেলা হয়নি। ফিলিস্তিনের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের এই অবিশ্বাস্য চিত্র দেখে বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে সেই ধ্বংসকাণ্ড বর্ণনার জন্য এক নতুন ইংরেজি শব্দ ‘Scholasticide’ অর্থাৎ ‘শিক্ষার গণহত্যা’ আবিষ্কার করতে হয়েছে। এভাবে একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের চিন্তা মধ্যযুগে বর্বর মোঙ্গল হালাকু খানের মাথায়ও আসেনি। অবিশ্রান্ত বোমাবর্ষণে গুরুতর আহত ফিলিস্তিনিরা যেন বিনা চিকিৎসায় মারা যায়, সেজন্য গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থাকেও শেষ করে দিয়েছে ইসরাইলের দানব বাহিনী।
গত ১৩ এপ্রিল গাজার শেষ ব্যবহারযোগ্য হাসপাতাল ‘আল আহলি আরব হাসপাতাল’-এর একটি বড় অংশ মিসাইল ও বোমা নিক্ষেপ করে ধ্বংস করেছে জায়নিস্টরা। মিডল ইস্ট আইতে কর্মরত ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড হার্স্ট মন্তব্য করেছেন: ‘I suggest you look at Israel’s meticulously planned, premeditated assault on Gaza’s 36 hospitals, its paramedics, its ambulances. Israel coldly calculates that if it dismantles the health system to make the strip uninhabitable for the two million people.’ (আমি ইসরাইলের সূক্ষ্ম পরিকল্পনার সঙ্গে গাজার ৩৬টি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকর্মী ও অ্যামবুলেন্সের ওপর সুনির্দিষ্ট আক্রমণের দিকে লক্ষ করতে পরামর্শ দিচ্ছি।
ইসরাইল ঠান্ডা মাথায় হিসেব করে দেখেছে, তারা যদি স্বাস্থ্যব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে, তা হলে গাজায় ২০ লাখ মানুষের পক্ষে আর বসবাস করা সম্ভব হবে না।) প্রকৃতপক্ষে ইসরাইল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জায়নিস্টরা (ইহুদি ও খ্রিষ্টান) আন্তর্জাতিক আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে ফিলিস্তিনের অধিবাসীদের জাতিগতভাবে নিধন করছে। এবার ইসরাইলের হামলায় হতাহতের সংখ্যাটা একটু বোঝার চেষ্টা করুন।
গাজায় গত দেড় বছরের অব্যাহত আক্রমণে জায়নিস্ট বাহিনী সেই ছোট ভূখণ্ডে বসবাসকারী দুই মিলিয়ন ফিলিস্তিনির মধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার জন, অর্থাৎ ৯ শতাংশ মানুষকে হতাহত করেছে। ঢাকা শহরের প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যা বিবেচনা করলে এ ধরনের হামলায় এখানে ১৮ লাখ মানুষ হতাহত হতো। গাজায় আজ যেমন এমন কোনো পরিবার নেই যাদের কোনো সদস্য আহত কিংবা নিহত হয়নি, তেমনি ঢাকাতেও একই রকম শোকের আবহ তৈরি হতো। এমন নির্বিচার হত্যাকাণ্ডেও ইসরাইলের মিডিয়া কিন্তু পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারছে না। তাদের আরো লাশ, আরো রক্ত প্রয়োজন।
সে দেশের টেলিভিশনের রক্তপিপাসু সাংবাদিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা ফিলিস্তিনের সব শিশু, নারী, এমনকি গর্ভবতীদেরও হত্যা করার জন্য প্রতিদিন জনমত তৈরি করে চলেছে। তাদের সেই প্রচেষ্টা অনেকাংশে সফলও হয়েছে। একটা দেশের অধিকাংশ মানুষ কী পরিমাণে বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন দানব হয়ে উঠতে পারে, সেটা বোঝার জন্য ইসরাইলের মিডিয়ার প্রচারণা শোনা আবশ্যক। ইসরাইল টেলিভিশনের প্রতিদিনের আলোচনা শুনে যে কারো মনে হবে, জায়নিস্টরা সবাই গণহত্যা ম্যানিয়ায় (Genocide Mania) আক্রান্ত হয়েছে। (উদাহরণ: Channel 13 Israel)।
পাঠকদের মনে হতে পারে, পশ্চিমা মিডিয়া নিশ্চয়ই ইসরাইলিদের মতো বীভৎস গণহত্যা ম্যানিয়ায় আক্রান্ত হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ইসলামোফোবিয়ার মাত্রায় ইসরাইলের মিডিয়া এবং পশ্চিমের মূলধারার মিডিয়ার মধ্যে তেমন কোনো চরিত্রগত তফাত নেই। মানবাধিকারের ধ্বজাধারী পশ্চিমা মিডিয়া তাদের প্রচারে খানিকটা সভ্যতার ভড়ং দেখায় মাত্র।
আমার উপরোক্ত মন্তব্য প্রমাণের জন্য একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অভ্যন্তরে হামাসের আকস্মিক আক্রমণের পর পশ্চিমা জগৎজুড়ে ফিলিস্তিনের নাগরিকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণের স্পৃহা তীব্র হয়ে ওঠে। সেই প্রতিশোধ স্পৃহাকে আরো উসকে দেওয়ার জন্য ইসরাইলের প্রোপাগান্ডা মেশিন পশ্চিমের মূল ধারার মিডিয়াকে ব্যবহার করে। হামাসের সন্ত্রাসীরা ৪০ ইসরাইলি শিশুকে গলা কেটে হত্যা করেছে, এমন একটি সম্পূর্ণ ভুয়া গল্প ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর অফিস থেকে পশ্চিমা মিডিয়াকে গেলানো হয়।
সিএনএনের রিপোর্টার সারা সিডনার তথ্যের কোনো রকম যাচাইবাছাই ছাড়াই নেতানিয়াহুর মুখপাত্রের বরাতে লাইভ অনুষ্ঠানে সেই ভয়াবহ মিথ্যা প্রচার করা হয়। ফক্স নিউজ, ডেইলি মেইল, মেট্রো ও অন্যান্য পশ্চিমা মিডিয়াও সিএনএনের সঙ্গে সোৎসাহে মিথ্যা প্রচারণায় যোগ দেয়। এই বীভৎস মিথ্যাচার কেবল মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনও ইসরাইলি শিশুদের শিরশ্ছেদের ভুয়া গল্প প্রচারে নিজেই নেমে পড়েন।
সত্য প্রকাশ পেলে ১২ অক্টোবর সিএনএন সারা সিডনার মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করলেও ইসরাইলি প্রোপাগান্ডার উদ্দেশ্য ততক্ষণে সফল হয়ে গিয়েছিল। আশ্চর্যজনকভাবে স্বঘোষিত খ্রিষ্টান জায়নিস্ট প্রেসিডেন্ট বাইডেন ১২ ডিসেম্বর আবারও কর্তিত মস্তক ইসরাইলি শিশুদের ছবি নিজে দেখার ডাহা মিথ্যা দাবি উত্থাপন করেন। এবার অবশ্য ‘দি ইন্টারসেপ্ট’ বাইডেনের মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করে (Scahill, Jeremy 14 December 2023, ‘Joe Biden keeps repeating his false claim that he saw pictures of beheaded babies,’ The Intercept)। শেষ পর্যন্ত ২০২৪ সালের এপ্রিলে খোদ ইসরাইলিরাই ফরাসি মিডিয়া লা মন্ডের কাছে স্বীকার করে, এ ধরনের শিশু শিরশ্ছেদের কোনো ঘটনা আদৌ ঘটেনি। হামাসকে দানব প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যে পুরো ব্যাপারটাই বানানো ছিল।
তাবৎ পশ্চিমা মিডিয়া হামাস কর্তৃক ৪০ ইসরাইলি শিশুর শিরশ্ছেদের সেই বানানো গল্পে কেঁদে বুক ভাসিয়েছে, অথচ প্রায় ২০ হাজার ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা করা হলেও সেই একই ধরনের বিষয়ে পশ্চিমা মিডিয়া ভ্রুক্ষেপও করেনি। কারণ তাদের কাছে ফিলিস্তিনের জনগণের জীবনের কোনোরকম মূল্য নেই। পশ্চিমা মনোজগতে ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে অমানবিকীকরণ (Dehumanization) এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, একজন ফিলিস্তিনি শিশু পশ্চিমা জায়নিস্টদের কাছে কোনো মানবপ্রাণ নয়, নাম-পরিচয়হীন কেবল একটি সংখ্যা মাত্র।
এজন্যই ছয় বছরের একাকী হিন্দ রাজাবকে ইসরাইলি সৈন্যরা মনের আনন্দে টার্গেট করে হত্যা করলেও তাদের প্রতি কোনো নিন্দাসূচক মন্তব্য কোনো পশ্চিমা মিডিয়ায় শুনতে পাবেন না। বিমান ও ড্রোন থেকে বোমাবর্ষণ, ট্যাংকের গোলা ও স্নাইপার দিয়ে গণহত্যার পর এখন জায়নিস্ট ইসরাইল গাজায় অবরোধ আরোপের মাধ্যমে খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে লাখ লাখ শিশুকে অনাহারে মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য করলেও পশ্চিমের মূলধারার মিডিয়া নীরবতা পালন করে যাচ্ছে।
গাজায় বিশ্ব মানবতাবোধের এই অধঃপতনে ব্যথিত হয়ে পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের রাষ্ট্র ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আমেরি ব্রাউন চরম আক্ষেপের সঙ্গে জাতিসংঘে বলেছেন, ‘The question remains if innocent civilians including women, children, and United Nations staff were being killed at this record rate in the developed world how would the world’s big powers have reacted?’ (আজ প্রশ্ন উঠবে, উন্নত বিশ্বের কোথাও নিরপরাধ নারী, শিশু ও জাতিসংঘের কর্মীদের যদি এই রেকর্ড হারে হত্যা করা হতো, তা হলে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিরা কী করত?)
পশ্চিমা মিডিয়া কীভাবে ন্যারেটিভ তৈরি করে, তার আরেকটি চিত্তাকর্ষক উদাহরণ বিখ্যাত নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ের হত্যার সংবাদের শিরোনাম। ইসমাইল হানিয়েকে তেহরানে ইসরাইলি এজেন্ট বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ২০২৪ সালের ৩১ জুলাই হত্যা করেছিল। হামাস নেতা বিস্ফোরণে নিহত হলেও নিউ ইয়র্ক টাইমসের বিস্ময়কর শিরোনাম ছিল—‘Ismail Haniyeh, a Top Hamas leader, is dead at 62’, অর্থাৎ ‘হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়ের ৬২ বছর বয়সে মৃত্যু!’ (Ref : The New York Times, Jul 31, 2024 www.nytimes.com)। এই শিরোনাম পড়ে যেকোনো পাঠক মনে করবেন, ইসমাইল হানিয়ে রোগে ভুগে অকালে ৬২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন।
একই নিউ ইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় নির্দেশনা অনুযায়ী সংবাদকর্মীদের ইসরাইল ও ফিলিস্তিন-সম্পর্কিত সংবাদ পরিবেশনায় ‘occupation’ ও ‘genocide’ শব্দ দুটি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। (Ref: 1 year of Gaza genocide: Media ‘complicit’ with US and Israeli governments, Dilara Hamit, Anadolu, 6.102024)। আরো অবাক করার মতো তথ্য হলো পশ্চিমা দুনিয়ায় এই নিউ ইয়র্ক টাইমস ও সিএনএন’কে অপেক্ষাকৃত লিবারেল মিডিয়া হিসেবে গণ্য করা হয়।
মুখে মিডিয়ার স্বাধীনতার কথা বললেও অধিকাংশ পশ্চিমা মিডিয়ার সাংবাদিকরা, প্রকৃত সাংবাদিকের কর্তব্য অনুযায়ী, ইসরাইলি গণহত্যার জন্য বিশ্বের ঘৃণ্যতম বর্ণবাদী দেশটির এবং গণহত্যায় সহায়তাকারী মার্কিন সরকারের মুখপাত্রদের কঠিন প্রশ্ন করার পরিবর্তে যেকোনো কর্তৃত্ববাদী সরকারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের একজন স্টেনোগ্রাফার অথবা টাইপিস্টের ভূমিকা পালন করে চলেছে। আইসিসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলে এত দিনে পশ্চিমা বিশ্বের সব মিডিয়া করপোরেট হাউসকে গাজার গণহত্যার সহায়তাকারী হিসেবে হেগে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতো। দুর্ভাগ্যবশত আমরা নৈতিক অথবা আইনানুগভাবে বিশুদ্ধ কোনো পৃথিবীতে বসবাস করছি না।
প্রায়ই নিজেকে প্রশ্ন করি, বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মুসলমানও কি গাজার মানুষের কষ্ট ও অসহায়ত্ব প্রকৃতভাবেই অনুধাবন করছে? এটা ঠিক, কিছুদিন আগেই আমরা ফিলিস্তিনের সমর্থনে এক বিশাল ‘মার্চ ফর গাজা’ প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। সেদিন ফিলিস্তিনের পতাকায় সমস্ত রাজধানী ছেয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তার পরই সবাই নিজেদের জীবন ও দেশের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। এমনকি আমার ধারণা, আজকের মন্তব্য-প্রতিবেদনটাও পাঠকরা তেমন মনোযোগ দিয়ে পড়বেন না।
বিষয়টা তাদের ভালো লাগবে না। অনেকেই পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চটাতে চান না। স্বার্থ বড় বালাই। গাজা ও কাশ্মীরের চরম নিপীড়িত মুসলমানদের দুঃখ হয়তো আমাদের সেভাবে আলোড়িত করে না। আমিও হয়তো এভাবে লেখালেখি করতাম না যদি আমারও পশ্চিমা জায়নিস্ট সমর্থক দেশগুলোয় ভিসা কিংবা ব্যবসার প্রয়োজন থাকত। পবিত্র কোরআন শরিফে আল্লাহ তায়ালা বলেই দিয়েছেন—‘মানুষ মাত্রই স্বার্থপর।’