Image description

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন

 

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বাদ দিলাম। বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটগুলো দেখলে একটা পার্থক্য, যেইটা দেখামাত্র আপনার মনে স্ট্রাইক করবে, সেটা হলো- বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট হলো ভিসি আর প্রোভিসিময়। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা অফিসিয়াললি তাদের নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু এটাই যথেষ্ট না।

এইটা দৃশ্যমান হতে হবে, ঠিক যেমনি বিটিভিকে প্রধানমন্ত্রীময় করে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী যে দেশের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী সেটা জানান দেন। আশা করেছিলাম, ৫ আগস্টের পর এসব আর দেখতে হবে না। শুধু ওয়েবসাইট না।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা পত্রিকা বের হয়, যার নাম ‘ডিইউ বার্তা’! এখনকার সেই পত্রিকা আর ৫ আগস্টের আগের পত্রিকাগুলো যদি দেখেন, কোনও পার্থক্য পাবেন না। এই পত্রিকাকে ‘ডিইউ বার্তা’ না বলে ‘ভিসি বার্তা’ বললে বেশি মানানসই হতো।

গতকাল একটি ভাইরাল পোস্ট দেখলাম। এক ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে দিয়ে বিদেশি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা ইমেইল করাতে পারলো না। আমরা জানি আমাদের শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত ট্রান্সক্রিপ্ট বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠাতে কি কষ্ট করতে হয়। অথচ এই সার্ভিসগুলো পাওয়ার তাদের অধিকার। এই হয়রানিই পরবর্তীতে রেপ্লিকেটেড হয় রাষ্ট্রের অফিসে আদালতে।

আমাদের ছাত্ররা এইরকম হয়রানির শিকার নিজে হয় এবং অন্যকে হয়রানি হতে দেখে। তারা শিক্ষকদের ধান্দাবাজি ও অনৈতিকতা দেখে। এরা আবার যখন কর্মজীবনে যায় যেগুলো ছাত্রজীবনে দেখেছে, সেগুলোই বাস্তবায়ন করে। ছাত্রনেতারাও তাই। ছাত্র রাজনীতি করার সময় যেই ছিনতাই, মাস্তানি, চাঁদাবাজি, ফাও খাওয়া ছাত্র জীবনে শিখেছে, সেটা পরবর্তীতে এমপি মন্ত্রী বা যেটাই হউক না কেন, সেখানেই আরও বড় স্কেলে সেগুলো করে।

এজন্যই রাষ্ট্রকে ঠিক করে সেটা টেকসই করতে হলে আগে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে ঠিক করতে হবে। আমরা এখন রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে অনেক কথা বলি। কই? কেউতো বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কার নিয়ে কোন কথা বলে না। এই ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই আমাদের সকলের আসার কেন্দ্রে। সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন সংস্কার দেখেছেন? 

‘ডিইউ বার্তা’ থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট সেই আগের মতোই। এইটাতো প্রত্যাশিত ছিল না। বর্তমান প্রশাসনের কাছে আমার অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সেগুলো এখন কর্পূরের মত বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে। শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশন থেকে শুরু করে কোন কিছুতেই তেমন কোন পরিবর্তন নেই।

অথচ ‘ডিইউ বার্তা’ হওয়া উচিত ছিল ছাত্রময়। বিভিন্ন বিভাগের ছাত্ররা কি করছে? পাস করার পর কে কোথায় যাচ্ছে? এদের এবং আমাদের শিক্ষকদের গবেষণার খবর। শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা সাংস্কৃতিক খবরাখবর। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রেও একই কথা। বিশ্বের ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়েবসাইটে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয় সদ্য প্রকাশিত বিশ্বমানের জার্নালে প্রকাশিত আর্টিকেলে কোন আর্টিকেল প্রকাশিত হয়ে থাকলে সেই খবর। শিক্ষকরা কোলাবোরেশনে গবেষণা করে থাকলে সেই খবর। কোন শিক্ষক পিএইচডি করতে বা পোস্ট-ডক করতে  বিদেশে যাচ্ছে বা এইসব করে দেশে ফিরেছে, সেই খবর।

ভিসিদেরকে কেন এত ‘visible’ হতে হবে? একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যেমন হার্ভার্ড কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের কাছে তাদের ভিসির নাম জিজ্ঞেস করে দেখেনতো। প্রায় কেউ বলতে পারবে না। আর আমাদের দেশে প্রায় না বরং নিশ্চিত সবাই বলতে পারবে। যেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে সবাই চিনে সেটা আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ই না। আমাদেরকে এইটা মাথায় রেখে সংস্কার করতে হবে।