Image description

রাজু নূরুল

 

ঈদের জামাতের পর ঢাকায় দেখলাম সরকারি উদ্যোগে মিছিল বের হয়েছে। আনন্দময় ঈদ শোভাযাত্রা হয়েছে। সেখানে মুঘল আর সুলতানি আমলের ঈদকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ ভালো হলো নাকি জগাখিচুড়ি হলো, আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

একঅর্থে, এটা বেশ ভাল হয়েছে। আমাদের ঈদ খুব পানসে। শুধু ঈদ না, আমাদের উৎসবও খুব পানসে। পেট ভরে প্রচুর খাওয়া দাওয়া ও ঘুম ছাড়া আর কিছু নাই। ছেলেরা তা-ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে এদিকসেদিক ঘোরাঘুরি করতে পারে, মেয়েরা তাও পারে না। রান্নাঘরের চাপে দিশাহারা অবস্থা! সারা বছর তো রান্নাঘরে থাকা লাগেই, ঈদ আসলে আরেকটু বেশি থাকা লাগে। এই হল তফাৎ!

ঢাকার মিছিলের ছবি খুব ইন্টারেস্টিং লাগল। মিছিলকারীরা সেখানে আগেকার দিনের রাজা-বাদশাহদের বিশাল বিশাল ছবি নিয়ে হাজির হয়েছে। এর সাথে হাতিঘোড়া, পশু-পাখিতো ছিলই।

আমার এক ভাতিজা গাইবান্ধা থেকে ফোন দিয়ে বলল, চাচ্চু, তাইলে পয়েলা বৈশাখ কি দোষ করল? ওইখানে তো তবু মাইনষের ছবিটবি থাকে না, এইটা তো আরো কয়েক ডিগ্রী সরেস!

আমি মুচকি হেসে ভাতিজার কথা শুনছি, ভাবছি। আছি। ও কয়, আসল ঘটনা আর কিচ্ছু না, যত সমস্যা ওই 'মঙ্গল' নাম নিয়া। মঙ্গল হইলো হিন্দু!

ভাতিজার মগজের প্রশংসা না করে পারলাম না। সাবাশ ভাতিজা!

এর মধ্যে আসল ক্যাচাল লেগেছে নাসিরুদ্দীন হোজ্জাকে নিয়ে। বেচারা হোজ্জা কবে মরে ভূত হয়ে গেছে; কিন্তু ফারুকী অ্যান্ড গং তার মূর্তি নিয়ে হাজির হয়েছে মিছিলে। কিন্তু ক্যাচালটা লাগছে এই নিয়ে যে, এই নব্য হোজ্জার আবার গোঁফ নাই। অরিজিনাল হোজ্জার কিন্তু ব্যাপক তা দেওয়া প্যাঁচানো মোছ ছিল।

এদিকে, নব্য হোজ্জার দিকে ভাল করে তাকালে তাকে দেখতে জামায়েত আমিরের রদের মত লাগে। খচ্চরের উপর বসানোর কারণে কেউ তাকে 'আমিরে খচ্চর' বলে ডাকলেও দোষ দেয়া যাবে না। জামায়েত আমিরের আবার মোছ নাই। আবার দাঁড়ি কামিয়ে আবার তার দিকে তাকাইলে মনে হয় ক্ষুদ্র ঋণে নোবেল পাওয়া ইউসুফ সরকার। এই হলো শিল্পের শক্তি। একই ছবির দিকে তাকালে একবার ড. আবার ডা. বলে ভ্রম হয়! অথচ শিল্পীকে জিজ্ঞেস করেন, উনি বলবে এতো হোজ্জা!

বাঙালি আসলে ‍বুঝতে পারতেছে না, সে আসলে মুসলমান হবে নাকি বাঙালি হবে। আরেকদল এই দুইটার ফিউশন হতে চায়। কিন্তু এরা আবার সব হতে রাজি আছে, তবে সেটা সাতচল্লিশ পর্যন্ত হওয়া লাগবে! সাতচল্লিশ থেকে টুপ করে চব্বিশে চলে আসতে হবে, মাঝখানে আর কিচ্ছু নাই। খবরদার, একাত্তরের নাম মুখেও আনা যাবে না!

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা হোক, ঈদ উপলক্ষেও ঈদ শোভাযাত্রা হোক। সেটা হোক বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনুসারে। ফিউশন মার্কা জগাখিচুড়ির শোভাযাত্রা নিশ্চয়ই আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অংশ নয়।

লেখক: লেখক, অনুবাদক, গবেষক