ড. যোবায়ের আল মাহমুদ
২৪ এর 'বিপ্লবী সম্ভাবনাময়' গণঅভ্যুত্থানের বৈপ্লবিক কাজ হচ্ছে বাংলাদেশের কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রকাঠামোর বিলোপ সাধন করে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত তৈরি করা। এটা অবশ্যই একটা বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষা এবং তার প্রতি জনমত আছে শুধু না, জনগণ রক্ত দিয়েছে এজন্যই। জনগণের সেই বিপ্লবী আকাঙ্ক্ষাকে রাজনৈতিক রূপরেখা পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাওয়াই বিপ্লবী কাজ, তার জন্য দরকার হচ্ছে গণঅভ্যুত্থানের দ্বিতীয় ধাপ ত্বরান্বিত করা। এখানে বলে রাখা জরুরি, বিপ্লব সবসময় সমাজতান্ত্রিক বা ধর্মীয় হতে হবে এমন নয়; এটি উদার গণতান্ত্রিক বিপ্লবও হতে পারে। বাংলাদেশে বিপ্লবের বেশিরভাগ ধারণা এসেছে চীন বা রাশিয়া থেকে, এবং এদেশে বামপন্থীরাই সবসময় বিপ্লবের সাহিত্য নিয়ন্ত্রণ করেছেন। এর ফলে, ১৭৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব—যেটি ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লবেরও আগের ঘটনা—বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী মহলে তেমন আলোচিত বা স্বীকৃত নয়। ২০২৪ সালের বাংলাদেশের গণঅভ্যুত্থানটি ছিল ফরাসি এবং মার্কিন গণতান্ত্রিক বিপ্লবের ধারণাকে ধারণ করে গড়ে ওঠা একটি স্বতন্ত্র বাংলাদেশি গণতান্ত্রিক বিপ্লব, যার রয়েছে নিজস্ব কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য, গতিশীলতা এবং আকাঙ্ক্ষা। এই গণআন্দোলনটি ছিল একটি ফ্যাসিবাদী/কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে, যেখানে ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানি শাসকদের দ্বারা প্রবর্তিত এবং চর্চিত ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র কাঠামোর উত্তরাধিকার এবং গত ১০ বছরের সর্বগ্রাসী কর্তৃত্ববাদী শাসনের প্রভাব বিদ্যমান। কিন্তু প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ ইস্যুতে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা বলে রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে চলমান সংবিধানের ভিত্তিতেই দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধানের পথ খুঁজছেন তাতে মনে হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো দেশের ডীপ স্টেট, আঞ্চলিক পরাশক্তি ও গ্লোবাল পরাশক্তির সাথে আপোষে গিয়ে দেশের বিদ্যমান সংবিধান, রাষ্ট্র কাঠামো এবং সিস্টেম বজায় রেখে চলার রাজনীতি শুরু করেছে। “সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নামে প্রেসিডেন্ট অপসারণ করা যাবে না তাতে সাংবিধানিক শূন্যতা তৈরি হবে" এসব কথা বলে সংবিধানের বৈপ্লবিক পরিবর্তনকে ঠেকিয়ে দিয়ে পুরানা " সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র" অব্যাহত রাখার দিকেই দেশকে নিয়ে গেলে সঙ্কট সমাধান তো হবেই না, উল্টা আরও ঘনীভূত হবে।
বিষয়টা ব্যাখ্যা করা এই ক্ষুদ্র পরিসরে কঠিন তারপরও একটু আলাপ করা যাক। বাংলাদেশের সংবিধানে ব্যক্তির সার্বভৌমত্ব মানে গণসার্বভৌমত্ব নাই এর মানে এই সংবিধান আসলে সত্যিকারভাবে গণতান্ত্রিক নয়। বুর্জোয়া উদারনৈতিক গণতন্ত্রের মূল কথাই হচ্ছে রাষ্ট্র এবং সরকার ব্যক্তির স্বাধীনতা, অধিকার এবং মর্যাদা রক্ষার জন্যই সমস্ত প্রশাসনিক এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ঢেলে সাজাবে অর্থাৎ গণ-সার্বভৌমত্বই হবে মূল কথা। যেমন ফরাসি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের মূল ফোকাস হচ্ছে ব্যক্তির সার্বভৌমত্ব/গণসার্বভৌমত্ব ফলে সেখানে রাষ্ট্র-কাঠামো মানুষের মর্যাদা এবং অধিকারের রক্ষাকেই মূল প্রায়োরিটি দেয় এবং এই অধিকার বিরোধী কোন আইন পাস করা যায় না। অথচ ৭২ এর পর থেকেই বাংলাদেশে 'সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র' চালু আছে যেখানে সংসদকে বা রাষ্ট্রকে/ সরকারকেই সার্বভৌমত্ব দেয়া হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা/সরকারের স্থিতিশীলতা রক্ষাই এই সংবিধানের মূলশাঁস। তাই এই সংবিধানে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক সভা সমাবেশ করার স্বাধীনতাসহ অনেক মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি থাকলেও বাস্তবে যে ক্ষমতা কাঠামো প্রস্তাব করা হয়েছে তা ব্যক্তির মৌলিক অধিকারকে রক্ষার জন্য কোন সুরক্ষা তো রাখেইনি বরং সংসদকে সার্বভৌমত্ব দিয়ে এসব মৌলিক অধিকার দলনের জন্য সব আইন কানুন প্রবর্তনের সুযোগ রেখেছে। ফলে এই সংবিধানের বৈপ্লবিক পরিবর্তন করে এখানে নাগরিকের/জনগণের মৌলিক অধিকারের সুরক্ষাই হবে রাষ্ট্র- সরকার- রাজনৈতিক দলের মূল কাজ এরকম প্রস্তাবনা রাখতে হবে এবং তার ভিত্তিতেই দেশের রাষ্ট্র-কাঠামো এবং সরকার ও ক্ষমতা-কাঠামো নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে নতুন করে দাবি জানাচ্ছে যে জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের 'স্পিরিটের আলোকে' 'প্রক্লেমেশান অব রিপাবলিক' বা বাংলাদেশের দ্বিতীয় রিপাবলিকের ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে এবং নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে তার গুরুত্ব এখানেই যে গণ-সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠাই হবে এই 'প্রক্লেমেশান অব রিপাবলিক' এর মূল কথা এবং তাকে দেশের সংবিধানে রূপান্তরিত করতে হবে। এরকম বৈপ্লবিক সংস্কার বা নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে অবশ্যই নির্বাচিত সংবিধান সভার মাধ্যমে। কিন্তু বিএনপিসহ অনেক বুদ্ধিজীবী এখন দাবি করছেন এই সংবিধান সংস্কার করবে জাতীয় সংসদ। যেখানে সংবিধানের ভিত্তিতেই সংসদ গঠন হয় সেখানে সেই সংসদের হাতে সংবিধান রদবদলের সুযোগ রাখা সংসদকেই সার্বভৌম করে তুলে, জনগণকে নয়। কারণ আমরা দেখেছি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচিত হয়ে কিভাবে জনগণের মৌলিক অধিকার পরিপন্থী গণ-নিপীড়নমূলক আইনকানুন সংবিধানসম্মতভাবেই প্রণয়ন করে। ফলে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই অন্তর্বর্তী সময়েই সংবিধান সভা করে সংবিধানের গণতান্ত্রিক রূপান্তর না করলে নির্বাচিত দলীয়/জাতীয় সরকার তা করবে বলে আস্থা রাখা কঠিন।
গণঅভ্যুত্থানের মাত্র তিন মাস পর এভাবে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার যে রাজনীতি শুরু হয়েছে তার প্রেক্ষিতে অনেকেই মনে করছেন ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে হাইজ্যাক করার জন্য বাংলাদেশি কর্পোরেট অলিগার্কদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ডিপ স্টেট ও বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলো এখন বিদেশি শক্তির সাথে একজোট হয়েছে। এটি স্পষ্ট যে বর্তমানে এজেন্সি পলিটিক্সই নিয়ন্ত্রণের আসনে বসে রয়েছে এবং রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের গতিপথকে প্রভাবিত করছে। ডিপ স্টেট, রাজনৈতিক দলগুলো, এবং বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলো এই গণঅভ্যুত্থানকে কেবলমাত্র রেজিম চেঞ্জ মনে করছে এবং শুধুমাত্র ক্ষমতার হাতবদলেই আগ্রহী, যা প্রকৃত গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন বাংলাদেশ, যা জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রের কাঠামোর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে, তা বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরাশক্তি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ অলিগার্কদের স্বার্থের পরিপন্থী হবে বলেই তারা এর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। আর সেজন্যই ৯০ এর মত ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানকে হাইজ্যাক করার সব আয়োজন চলছে।
পুঁজিতান্ত্রিক গ্লোবাল অর্ডারে প্রান্তিক দুর্বল রাষ্ট্রের সত্যিকারের সার্বভৌমত্ব একদিকে যেমন গ্লোবাল এবং আঞ্চলিক পরাশক্তির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণের প্রতিবন্ধক অপরদিকে তা দেশিয় কর্পোরেট অলিগার্ক গোষ্ঠীর লুটপাটের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। একই সাথে জনগণের অংশগ্রহণমূলক রাষ্ট্র-কাঠামো বহুজাতিক কোম্পানির হাতে দেশের সেবা খাতসহ শিল্পখাতকে তুলে দেয়ার বিরোধিতা করে জাতীয় অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে পারে। ফলে দেশি বিদেশি কর্পোরেট কোম্পানির পূঁজির অবাধ প্রবাহ এবং লুণ্ঠন ও শোষণ ভিত্তিক অর্থনীতি চালু রাখার উপযোগী করে যে রাষ্ট্র-কাঠামো এবং প্রশাসনিক ও আইনি কাঠামো বাংলাদেশে চালু রয়েছে তার বৈপ্লবিক পরিবর্তন বাংলাদেশের ডীপ স্টেট এবং বিদেশি শক্তিগুলো এখন সমর্থন করছে না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো আসলে একই শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে বলে এই সিস্টেম অব্যাহত রাখার পক্ষে। প্রেসিডেন্ট এর অপসারণ না করে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার কথা বলে সংবিধানের গুনগত পরিবর্তনের বিপক্ষে তাদের এই অবস্থান নেয়াকে মূলত সাংবিধানিক যে রাষ্ট্রীয়-আইনি-প্রশাসনিক ক্ষমতা-কাঠামো দেশে চালু রয়েছে তার ভিত্তিতেই শাসনকাজ পরিচালনার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলের কনসেনসাস হিসেবে দেখা যেতে পারে। এতে করে দেশের ডীপ স্টেট যেমন নিজেদের লুটেরা মাফিয়া নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখতে পারবে এবং বিদেশি পরাশক্তির জিওপলিটিক্যাল স্বার্থও অক্ষুণ্ণ থাকবে। আবার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল তার নিজের গণতান্ত্রিক সংস্কার না করেই শাসনকাজ পরিচালনার নিশ্চয়তা পাবে। নিজ নিজ স্বার্থ সুরক্ষার জন্য ডীপ স্টেট, রাজনৈতিক দল এবং বিদেশি পরাশক্তির যে ঐক্যমত অথবা বোঝাপড়া দেশের বিদ্যমান কাঠামো রক্ষায় কাজ করে তাকেই তারা নাম দিয়েছে “সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা” । এই ধারাবাহিকতা রক্ষার রাজনীতি ৯০ এর গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যেমন দেখা গেছে এখন আবার একই রাজনীতি আমরা দেখতে পাচ্ছি। ফলে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের যে গণ-অভিপ্রায় মানে দেশের বিদ্যমান সিস্টেমের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে একটা সত্যিকারের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা তা আবারো হুমকির মুখে পড়েছে।
এখন দায়িত্ব এসে পড়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং দেশের সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর ওপর। তাদের রাজনৈতিক পরিপক্বতা প্রদর্শনের মাধ্যমে বর্তমান সংবিধান এবং রাষ্ট্রের কাঠামোকে গণতান্ত্রিকীকরণের কৌশল নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্র নেতাদের উচিত জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা যাতে মানুষ শুধুমাত্র নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার হাতবদলের দিকে মনোযোগ না দিয়ে অগণতান্ত্রিক এবং ‘ফ্যাসিবাদী’ কাঠামো উচ্ছেদ করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে। পাশাপাশি, শ্রমজীবী শ্রেণির সাথে সংহতি বাড়ানোও জরুরি। গণঅভ্যুত্থানের দ্বিতীয় ধাপের এই আন্দোলন ছাড়া আমাদের আর আশা নাই, এবং তা সফল না হলে আমরা আবার 'পার্লামেন্টারি স্বৈরতন্ত্র" বা ‘সাংবিধানিক ফ্যাসিবাদে’ বন্দী হয়ে যেতে পারি, যা নামমাত্র গণতন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত হবে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এখন দেশি বিদেশি এজেন্সি পলিটিক্সের মুখে বাংলাদেশের দ্বিতীয় রিপাবলিকের ঘোষণাপত্র (Proclamation of second republic) এবং গণতান্ত্রিক সংবিধান আর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র-প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের দাবি থেকে পিছিয়ে গেলে এই অভ্যুত্থান হাইজ্যাক হয়ে যাবে। ছাত্রসমাজ এবং দেশের সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শক্তি এখন কিভাবে নতুন করে সংঘটিত হতে পারে তার উপর নির্ভর করবে আমাদের রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী আকারে নিজেদের গঠন করে একটা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার ভবিষ্যৎ। তবে আবারো চলমান সংবিধান এবং শাসনতন্ত্র চালু রেখে দেশে লুটপাট- দুর্নীতি-জননিপীড়ন এর রাজনীতি চালু রাখার দিকেই চলে যাওয়ার বিপদ দেখা যাচ্ছে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এখন দরকার ছাত্র-শ্রমিক-কৃষকের- দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের একটা মোর্চা গঠন করে গণঅভ্যুত্থানের যে গণদাবী মানে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের জন্য নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান এবং প্রতিষ্ঠানসমূহের পুনর্গঠনের দাবিতে আন্দোলনের দ্বিতীয় ধাপ ত্বরান্বিত করা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে প্রথম সাড়া দেয় রিকশা শ্রমিকসহ ঢাকার খেটে খাওয়া শ্রমিকরা। আন্দোলনে শ্রমিকদের ব্যাপক অংশগ্রহণের কারণ ছিল তাদের অধিকার হরণ করা হয়েছিল এবং তারাই বেশি বৈষম্যের শিকার হয়েছিলেন। এই সরকার গঠনের পরও গার্মেন্টস শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে এবং তাদের ন্যায্য মজুরি বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করেন। এই ব্যাপারটা মাথায় রেখে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উচিত তাদের বিবিধ দফার সাথে শ্রমিকদের অধিকার সম্বলিত দাবিসমূহও যুক্ত করা। সারা দেশের সব শ্রমিকদের, দিনমজুরদের, রিকশাওয়ালাদের অধিকার পূরণের ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে ছাত্রদের। দ্বিতীয় রিপাবলিকের ঘোষণাপত্রে আলাদা করে শ্রমজীবীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার বাস্তবসম্মত কৌশল নিয়ে আলাদা ঘোষণা থাকতে হবে। সংবিধানেও তাদের অধিকার আদায়ের যথাযথ পদক্ষেপের অনুচ্ছেদ থাকতে হবে। আবার কৃষকদের অধিকারের ব্যাপারেও নতুন দফা যুক্ত করতে পারেন ছাত্ররা। নিওলিবারেল পলিসির কারণে কৃষকরা যে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং তাদের উৎপাদনের ন্যায্য মূল্য যে তারা পাচ্ছেন না তার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ রাষ্ট্র এবং প্রশাসন কিভাবে নিশ্চিত করবে তার রূপরেখা থাকতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে দেশের কৃষক-শ্রমিকদের অধিকারের আলাপ বাইরে রেখে যে পরিবর্তনই আসুক তা জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে পারবে না। গণবিপ্লবের ইতিহাস বলে কৃষক-শ্রমিকদের বাইরে রেখে কোন গণআন্দোলন সফল হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ছাত্রদের এই দ্বিতীয় ধাপের আন্দোলন গণভিত্তি পেতে হলে দেশের সিভিল সোসাইটি এবং সচেতন রাজনৈতিক গোষ্ঠীর পাশাপাশি শ্রমিক কৃষকদেরও সম্পৃক্ত করতে হবে। দেশের রাজনৈতিক সমীকরণে শ্রমিক- কৃষকদের ন্যায্য অধিকার রক্ষার বিষয়টা উপেক্ষিত থাকাই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক বৈষম্য। এ ব্যাপারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন উদ্যোগ নিলে গণঅভ্যুত্থানের দ্বিতীয় ধাপ তরান্বিত হবে সন্দেহ নেই।
লেখক: চিন্তক এবং সহযোগী অধ্যাপক, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন