একুশে বইমেলায় ভারতীয় স্টল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের। কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ দিবসের আলোচনায় অংশ নিতে ভারতে এসে ‘আনন্দবাজার’ পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষতকারে এমনটি জানালেন তিনি।
ঢাকায় চলছে একুশের বইমেলা। কলকাতা বইমেলায় প্রতি বছর বাংলাদেশের বইয়ের জন্য বিশেষ প্যাভিলিয়ন থাকে, একটি দিন থাকে শুধুই বাংলাদেশ নিয়ে। আর ঢাকার বইমেলায় ভারতীয় প্রকাশকদের ‘প্রবেশ নিষেধ’। বিষয়টি শুনে বিস্মিত আসাদুজ্জামানের অকপট স্বীকারোক্তি, “বলেন কী! সত্যিই জানি না।”
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “এত দিন হয়তো জায়গার অভাব ছিল। বাংলা একাডেমীর মাঠটা তো ছোট। এ বার থেকে মেলা হচ্ছে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে, দেখবেন এই নিষেধাজ্ঞা থাকবে না।”
হাইকমিশনের অফিসারের কাছে খোঁজ নিলেন, ভারত থেকে বই নিয়ে যেতে শুল্কের বাধা নেই তো কোনও? কর্মকর্তা জানালেন, নেই। মন্ত্রীর প্রশ্ন, “তা হলে? আপনাদের প্রকাশকেরা কি কোনও দিন বিষয়টা জানিয়েছিলো? হতে পারে উদ্যোগের অভাব।”
ঢাকায় ফিরে বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন আসাদুজ্জামন নূর। বললেন, “একুশে তো এখন আর শুধু বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের দিনে পড়ে নেই। একুশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে উন্নীত। আর সেই একুশের বইমেলার দরজা এ-বাংলার বাংলা-বইয়ের জন্য বন্ধ থাকবে? এ হয় না।”
নাটকে, গানে, বইয়ে, আদান-প্রদানে দুই বাংলার সম্পর্ক তিনি শক্ত করতে চান। আর কেউ বললে বলা যেত, নেহাতই কথার কথা। কিন্তু কথাটা তার ক্ষেত্রে খাটে না। এমনকী তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেও নয়। কারণ তিনি আসাদুজ্জামান নুর।
শুধু কলকাতা নয়, পশ্চিবঙ্গের বহু ছোট শহরেও ঢাকা থেকে নিজের দল নিয়ে এসে নাটক করে গিয়েছেন তিনি। যে সময়ে ছাদে বাড়তি অ্যান্টেনা লাগিয়ে ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন’দেখার প্রচলন শুরু। তখন থেকেই এ-বাংলার বসার ঘরে তাঁর নিত্য আনাগোনা।
কলকাতায় ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর বন্ধুমহল। মন্ত্রী তো হয়েছেন সম্প্রতি, কিন্তু তার বহু আগে থেকেই তিনি জানেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ কী ব্যগ্রতায় হুমায়ুন আহমেদের বই কেনেন। কিংবা বাংলাদেশের শিল্পীদের গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীতের কমপ্যাক্ট ডিস্ক। এ বাংলার মানুষ-জনের মনে এখনও সেই বাংলাদেশ টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটকগুলোর ভাল লাগার রেশ।
আসাদুজ্জামান নূর জানেন উত্তরবঙ্গের সেই সব মানুষের কষ্টের হদিশ, যারা যখন-তখন চলে যেতে চান মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে সীমান্তের ও পারে ফেলে আসা স্বজনের কাছে। পারেন না, কারণ ভিসা করাতে যেতে হয় বহু দূর কলকাতায়।
সেই আসাদুজ্জামান নুর এসেছেন কলকাতায়, তবে এ বার নতুন পরিচয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে। বুধবার কলকাতায় আনন্দবাজার পত্রিকাকে তিনি বলেন শিলিগুড়িতে বাংলাদেশের একটা ভিসা অফিস প্রয়োজন।
দিল্লির বাংলাদেশ দূতাবাসের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানালেন, “বিষয়টা বিবেচনায় আছে স্যার। তবে শিলিগুড়িতে নয়, উত্তর-পূর্বের প্রধান শহর গুয়াহাটিতে আমরা একটা ভিসা অফিস খোলার কথা ভাবছি।”
‘না গুয়াহাটি নয়, শিলিগুড়িতেই ওটা করা দরকার। শিলিগুড়ি উত্তর-পূর্ব ভারতের গেটওয়ে। ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়া পর্যটকদের সুবিধের বিষয়টাও তো দেখতে হবে। আমি উত্তরবঙ্গের নীলফামারির মানুষ, সেখানকার জনপ্রতিনিধিও। সুবিধে-অসুবিধেটা অনেক ভাল বুঝি,” দৃঢ় ঘোষণা নূরের।
সংস্কৃতিমন্ত্রীর প্রশ্ন, কলকাতার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে কেন বাংলাদেশের একটি স্থায়ী সংস্কৃতি কেন্দ্র থাকবে না? কলকাতায় থাকবে, দিল্লিতে থাকবে, থাকবে অন্য দেশের রাজধানীতেও। জানালেন, কাজের ক্ষেত্রে আপাতত সেটাই তার অগ্রাধিকার। সবে দায়িত্ব নিয়েছেন। চেষ্টা করবেন যত শীঘ্র সম্ভব সংস্কৃতি কেন্দ্রের বিষয়টির বাস্তবায়নে। আর সে ক্ষেত্রে কলকাতা আসবে সবার আগে।
দুই বাংলার চলচ্চিত্র শিল্পের মেলবন্ধনের যে চেষ্টা বাংলাদেশের তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু শুরু করেছেন, নতুন সংস্কৃতিমন্ত্রীও তার পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বললেন, এক সময়ে ভারতের ছবি, পাকিস্তানের ছবি, হলিউডের ছবি ঢাকার সিনেমা হলে চলত। তখন তো বাংলাদেশে তৈরি ছবিও সুপারহিট হয়েছে। তার পরে বিদেশি ছবির ওপর বিধিনিষেধ চেপেছে, আর ফল হয়েছে একটাই দর্শকের অভাবে ঢাকার চলচ্চিত্র শিল্পটাই উঠে যেতে বসেছে।
মন্ত্রী বলেন, যে সব প্রযোজক-পরিচালক এই নিষেধাজ্ঞা জারির পক্ষে, তাঁদের কাজের মান কুৎসিত, কিন্তু প্রভাব খুব বেশি। তবে তিনি নিশ্চিত, চলচ্চিত্র শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার মানুষের জীবিকার স্বার্থেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে সরকারকে।
শিল্পী আসাদুজ্জামান নুরের ভাষায়, “জগৎ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে কি কোনও শিল্প বাঁচতে পারে? আদান-প্রদানেই সমৃদ্ধি আসে, তা সে যে শিল্পই হোক।”
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন