Image description
সাহাবারা কি পরিমাণ দান করতেন?
সম্পদের একচ্ছত্র মালিকানা কেবল আল্লাহর। তিনি যাকে ইচ্ছা তা থেকে দান করেন। তাই এ সম্পদ উপার্জন ও ব্যয়ের ক্ষেত্রেও তাঁর বিধি-নিষেধ মেনে চলা আবশ্যক। কিয়ামত দিবসে যে পাঁচটি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কোনো আদম সন্তানের পা সামনে অগ্রসর হতে পারবে না, তার মধ্যে দু’টি প্রশ্নই ধন-সম্পদকে কেন্দ্র করে। জিজ্ঞাসা করা হবে- কোন পথে সম্পদ উপার্জন করেছ এবং কোন পথে তা ব্যয় করেছ? (বুখারি) সন্দেহ নেই ধন-সম্পদ নিজের আরাম-আয়েশ এবং পরিবারের ভরণ-পোষণের ক্ষেত্রে ব্যয় করার অনুমতি ইসলামে আছে এবং অনাগত সন্তানদের জন্য সঞ্চিত করে রাখাও পাপের কিছু নয়। বরং এতে উৎসাহিত করা হয়েছে। কিন্তু, পাপ ও অন্যায় হচ্ছে, সম্পদে গরীব ও দুঃখীদের, বঞ্চিত, অভাবী ও অনাহারীদের হক আদায় না করা। তাদের দুঃখ দূর করার প্রতি সচেষ্ট না হওয়া। অথচ আল্লাহ বলেন— وَالَّذِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ مَعْلُومٌ، لِلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ ‘এবং তাদের সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে। ভিক্ষুক এবং বঞ্চিত (অভাবী অথচ লজ্জায় কারো কাছে হাত পাতে না) সকলের হক রয়েছে।’ (সুরা মাআরিজ: ২৪-২৫) আজ আমাদের অবস্থা হলো, ১০-২০-৫০ টাকা দান করে অহংকার অহমিকায় লিপ্ত হয়ে যাই। মনে মনে ভাবতে থাকি- না জানি কত টাকা দান করে কত বড় দানবীর হয়ে গেছি। দুই চার হাজার টাকাও দান করতে খুব কষ্ট অনুভব করি। আমরা কি কখনো খোঁজ নিয়ে জানার চেষ্টা করেছি সাহাবীরা কেমন দান সাদাকা করতেন? ইবনে উমার রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘ইসলাম গ্রহণের সময় হযরত আবু বকর রাযিয়াল্লাহু আনহু’র নিকট ৪০ হাজার দিরহাম বা ৫৫৬০০০০ টাকা ছিল (দিরহামের আজকের বাজার মূল্য ১৩৯ টাকা হিসেবে)। আর হিজরতের সময় ৫ হাজারের বেশি ছিল না। বাকি সব দিরহাম তিনি ইসলামের সাহায্যে এবং মুসলমান গোলাম কিনে আযাদ করার পেছনে ব্যয় করেছেন।’ (ইবনে সাইদ সূত্রে তারিখুল খুলাফায় বর্ণিত) অর্থাৎ হিজরতের পূর্বে তিনি প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা ইসলামের জন্য ব্যয় করেন। সুবহানআল্লাহ! রুমা কূপ মদিনার সুপেয় পানি সরবরাহের সবচেয়ে বড় মাধ্যম ছিল। উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু তা ৩৫ হাজার দিরহামের বিনিময়ে অর্থাৎ ৪৮ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছিলেন। তালহা রাযিয়াল্লাহু আনহু উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে ৫০ হাজার দিরহাম অর্থাৎ প্রায় ৭০ লক্ষ টাকার কর্জ নিয়েছিলেন, যা পরে উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু মওকুফ করে দিয়েছিলেন। তাবুক যুদ্ধে উসমান রাযিয়াল্লাহু আনহু তার সম্পদের ৩ ভাগের ১ ভাগ দান করে দিয়েছিলেন। ৯৪০টি উট ও ৬০টি ঘোড়ার পাশাপাশি ১০ হাজার দিনার দান করেছিলেন তিনি (১ দিনার এর স্বর্ণের আজকের বাজার মূল্য ১৫৩৩১ টাকা)। ১০ হাজার দিনার অর্থাৎ ১৫ কোটি ৩৩ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। সবচেয়ে ধনী মুসলিম সাহাবী আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাযিয়াল্লাহু আনহু তাবুক যুদ্ধে ৮ হাজার দিনার দান করেন। অর্থাৎ ১২ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। তিনি তার একটি জমি ৪০ হাজার দিনারে অর্থাৎ প্রায় ৬১ কোটি টাকায় বিক্রয় করেন এবং পুরো অর্থ আল্লাহর রাস্তায় দান করে দেন। তিনি সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ছিলেন। এছাড়াও তিনি ৪০ হাজার দিরহাম অর্থাৎ ৫৬ লক্ষ টাকা, মুজাহিদদের জন্য ৫০০ ঘোড়া, ১৫০০ উট দান করেছিলেন। জীবিত বদরি সাহাবী ও আম্মাজানদের জন্য ৪০০ দিনার অর্থাৎ ৬২ লক্ষ করে হাদিয়া দিয়েছিলেন। এছাড়াও তিনি ২০০ আউকিয়া বা অক্কা দান করেছিলেন। ১ অক্কা = ১২৮.৩ গ্রাম স্বর্ণ। সে হিসাবে তিনি প্রায় ১০ কোটি টাকা আল্লাহর রাস্তায় দান করেছিলেন। এসব হলো ইতিহাসে পাওয়া সাহাবীদের বদান্যতার উদাহরণ আর তাদের গোপনে দান করা টাকার পরিমাণ কত ছিল তা আল্লাহই জানেন। এতো দানের কারণে কি তার সম্পদ কমে গিয়েছিল? মোটেও না। বরং বেড়েছিল পাহাড়ের সমান। আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাযিয়াল্লাহু আনহুর ইন্তেকালের সময় তার সম্পদের পরিমাণ এত বেশি ছিল যে আজকের যুগেও মানুষ অবাক হয়। তিনি ইন্তেকালের সময় ৩১০,৩০,০০,০০০ (৩১০ কোটি ৩০ লক্ষ) দিনার রেখে যান। এটার বর্তমান মূল্য হলো (৩১০,৩০,০০,০০০* ১৫৩৩১) = ৪৭,৫১,০০৩,৩০,০০,০০০ (অর্থাৎ ৪৭ লক্ষ ৫১ হাজার ৩ কোটি ৩০ লক্ষ) টাকা। ডলারের হিসাবে এটার মূল্য ৫০১ বিলিয়ান ডলার। ২০১৭ সালে বিল গেটসের মোট সম্পত্তি ছিল মাত্র ৮৬ বিলিয়ান ডলার। সাদাকা অনেক বড় এক আমল। যদিও আজ আমরা এই আমল তেমন করি না। আমাদের উচিত বেশি বেশি সাদাকার আমল করা। আসছে ফযিলতপূর্ণ আশারায়ে জিলহজ। আল্লাহ তা’আলা কালামুল্লাহ শরীফে যার শপথ করেছেন এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যার ফযিলতের ব্যাপারে বলেছেন— ‘যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনে নেক আমল করার মতো প্রিয় আল্লাহর নিকট আর কোনো আমল নেই।’ (বুখারি-৯৬৯) তাই এ সময়ে আরো বেশি করে সাদাকা করা উচিত। রাব্বুল আলামিন আমাদের তাওফিক দান করুন।