নতুন বছরে বিএনপির প্রধান প্রত্যাশা ‘নির্বাচন’
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিএনপির কতটা সংশ্লিষ্টতা ছিল তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা এখনো তুঙ্গে। আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসানে রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বারবার দ্রুততম সময়ে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানানো দলটিও বিএনপি।
৫ আগস্টের পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ অধিকাংশ নেতাকর্মীর নামে থাকা অসংখ্য মামলা নিষ্পত্তির পথে। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও এখন মুক্ত। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীরা হয় জেলে নতুবা দেশের বাইরে পলাতক। নির্বাচন হলে তাতে অংশ নিতে পারবে কি না কিংবা অংশ নেবে কি না নিশ্চিত নয়। বিএনপির মিত্র জামায়াতও সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করবে- এমনটি মনে করছেন না কেউ। সব মিলিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা দলটি বিএনপিই।
গত চার মাসে দলের নেতাকর্মীদের বক্তব্য, আচরণ বলছে অঘোষিতভাবে যেন তারাই ক্ষমতায়, বাকি শুধু আনুষ্ঠানিকতা। যদিও তারেক রহমান বারবার নেতাকর্মীদের আত্মতুষ্টিতে ভোগার বিষয়টি খুব পছন্দ করছেন না। ক্ষমতায় বসার আগেই যারা বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে সাংগঠনিক ব্যবস্থা। দলটির নেতারা বলছেন, নতুন বছরে দ্রুত নির্বাচন হবে, জনগণ তাদের পছন্দের জবাবদিহিতার সরকার নির্বাচন করবে, সাধারণ মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে।
নতুন বছরে বিএনপির প্রত্যাশা নিয়ে কথা হয় দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতার সঙ্গে। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা চাই বৈষম্যহীন একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। আমরা চাই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলবাজমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। আমরা চাই জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হবে। এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতি যখন করি লক্ষ্য তো থাকবেই। আমি নিজে আগেও দুবার পার্লামেন্ট ইলেকশন করেছি, পার্লামেন্টে যেতে চাই, মানুষের পক্ষে কথা বলতে চাই, দেশের জন্য কাজ করতে চাই।’
যে গণতান্ত্রিক লড়াই ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা রক্ত দিলাম, জীবন দিলাম, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ কোটি নেতাকর্মী নির্যাতিত হলো তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী যেন ভোটের সেই অধিকার আমরা তাড়াতাড়ি ফেরত পাই।- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি নতুন বছরে এদেশের মানুষ তাদের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নতুন বছরেই তাদের পছন্দের সরকার প্রতিষ্ঠিত করবে।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ‘রাজনীতি অবারিত থাকবে। জনগণ গণতন্ত্রের বাতাসে উদ্বেলিত হবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক যে রূপান্তর সেটা হবে। সংস্কারের পথে দেশ এগিয়ে যাবে। রাষ্ট্র সংস্কারে যে ৩১ দফা আমাদের তারেক রহমান দিয়েছেন তা বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে। একটি অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের রায়ে বিএনপি দায়িত্ব পেলে অবশ্যই জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেই কাঙ্ক্ষিত নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘যে গণতান্ত্রিক লড়াই ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা রক্ত দিলাম, জীবন দিলাম, আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ কোটি নেতাকর্মী নির্যাতিত হলো তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী যেন ভোটের সেই অধিকার আমরা তাড়াতাড়ি ফেরত পাই। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্য ও সাধারণ মানুষের জীবনে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যে আকাঙ্ক্ষা এবং জুলাই আগস্ট বিপ্লবের পরবর্তী যে ফসল সেটা যেন কোনোক্রমেই এই সরকার অবহেলা না করে মানুষের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে পূরণ করে এটাই আমার প্রত্যাশা।’
নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা তো একটাই। নতুন বছরে আমরা চাই একটা নতুন নির্বাচন। কারণ জনগণের মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করেছি এবং জনগণকে সুন্দর একটা বাংলাদেশ দেবো নতুন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘নতুন বছরে আশা করছি দেশে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা হবে। বিগত দিনে জনগণ যে ভোটের অধিকার হারিয়ে ফেলেছিল সে অধিকার ফিরে পাবে এবং বিদেশি রেমিট্যান্স বাড়বে। দেশে জিনিসপত্রের দাম কমে আসবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, ‘নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা তো একটাই। নতুন বছরে আমরা চাই একটা নতুন নির্বাচন। কারণ জনগণের মৌলিক অধিকার, গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করেছি এবং জনগণকে সুন্দর একটা বাংলাদেশ দেবো নতুন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই জবাবদিহিমূলক একটি সরকার। যে সরকারই আসুক না কেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, জনগণ ভোট দেবে। বেঁচে থাকার জন্য যে মৌলিক অধিকার রয়েছে সবকিছু দিয়ে বাংলাদেশ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে।’