দাবি করেছেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল গান-বাংলার চেয়ারম্যান কৌশিক হোসেন তাপস ও অভিনেত্রী শমী কায়সার।
বুধবার (৬ নভেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামানের আদালতে রিমান্ড শুনানিতে এ দাবি করেন তারা।
কৌশিক হোসেন তাপস বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের কোনও কাজে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমি গান, বাজনা এসব নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। আন্দোলনের সময় আমার প্রোফাইল পিকচার লাল করেছি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে থাকার কারণে অরুণা বিশ্বাসরা আমার উপর গরম জল ঢালার কথা বলেছে। এরপর বিচারক বললেন, পালিয়ে ছিলেন কেন? তাপস বললেন, আমি কখনোই পালিয়ে থাকিনি। প্রত্যেকদিন গান-বাংলায় অফিস করেছি। আমাকে গান-বাংলার অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়। আমার বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালতে শমী কায়সার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে বলা হয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সহায়তা করেছি। কিন্তু আমি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে ছিলাম। ১৮ তারিখ ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার পর আমি ইন্টারনেট চালু করার জন্য কথা বলেছি।
জিয়াউর রহমানকে কটূক্তি করার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কিছু বলিনি। ব্যক্তিগত আক্রমণ করিনি। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বলেছি, এতো মানুষ মারা গেছে।
এরপর বিচারক তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এরআগে, রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
শুনানিতে তিনি বলেন, তাপস একজন তবলাবাদক। ক্ষমতার অপব্যবহার করে গান-বাংলা চ্যানেল সৈয়দ শামসুদ্দিন আহমেদের মালিকানা থেকে ছিনিয়ে দখলে নেয়। ভাবতাম, ওই চ্যানেল চলে কীভাবে। বিজ্ঞাপন নাই। কয়েকজন বিদেশি মহিলা দোতরা বাজায় আর গান গায়। তার স্ত্রী বিউটিশিয়ান। শেখ হাসিনার বিউটিশিয়ানের কাজ করতো। সরকারি কনসার্টগুলো তাপস একতরফা নিয়ে নিতো। তাকে সাহায্য করতো আশরাফুল আলম খোকন। মাঝে মাঝে তাপস গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনাকে গান শোনাতো। এভাবে সরকারের কোটি কোটি আত্মসাৎ করেছেন।
ওমর ফারুক বলেন, ভারতীয় এক নায়িকা সানি লিওনের দেশে প্রবেশ নিষেধ ছিল। তাকে মেয়ের বিয়েতে বাংলাদেশে আনেন তাপস। তাপস অর্থ সহায়তাকারী, পরিকল্পনাকারী ও সক্রিয় অংশগ্রহণকারী ছিলেন।
এসময় বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা কাঠগড়ায় দাঁড়ানো তাপসের মুখের মাস্ক খুলতে বলেন। তখন বিচারক বলেন, কোর্টের কাজ কোর্ট করবে।
শমী কায়সারের বিষয়ে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে টেকানোর জন্য বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। মানুষের ভোট হরণ করার জন্য বিভিন্নভাবে নাটক তৈরি করতো। তার মা আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি ছিলেন। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের মাধ্যমে নাটক, সিনেমার মাধ্যমে তারা হাসিনাকে সহযোগিতা করেছেন। কোটাবিরোধী আন্দোলনের সময় শমী কায়সারের নেতৃত্বে বৈষম্যবিরোধীদের বিরোধিতা করেছেন। যেসব শিল্পীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন তাদের গরম পানি নিক্ষেপ করা হয়। এসবের নেতৃত্ব দিয়েছেন উনি। যে চুরি করে আর যারা সহযোগিতা করে উভয়ই সমান অপরাধী। হাসিনাকে খুশি করে সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে এরা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন।
তাপসের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। তিনি বলেন, তাপসের চ্যানেল ছিলো গান গাওয়ার। এটা দিয়ে জনমত গঠনের কিছু নেই। এটা হত্যাচেষ্টা মামলা। এখানে আমার মক্কেলের কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। ছাত্র আন্দোলনের পক্ষে ফেসবুকে তাপস প্রোফাইল লাল করেছিলেন। অরুণা বিশ্বাসরা তাপসের বিরুদ্ধে সাইজ করার কথা বলেছেন। মিডিয়াতে কম্পিটিশন আছে। সেজন্য তাপসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও ওঠে।
শমী কায়সারের আইনজীবী বলেন, স্বনামধন্য অভিনেত্রী তিনি। বুদ্ধিজীবী শহিদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে। এ মামলার সঙ্গে ওনার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। তার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন প্রার্থনা করছি।
এসময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন গান-বাংলার আগের মালিক দাবিকারী শামসুদ্দিন আহমেদ। তিনি আদালতকে বলেন, তাপস, আমানউল্লাহ খান ও চঞ্চল চৌধুরী বন্দুকের ভয় দেখিয়ে গুলশানে নিয়ে জোর করে সাইন করিয়ে গান-বাংলার মালিকানা লিখে নেয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন