জন্ম নিবন্ধন জটিলতাঃ ‘আমার মা-বাবা আছে কি না, জানি না’
নিজের বোধবুদ্ধি হওয়ার আগেই তিন বছর বয়সে মা-বাবা হারিয়ে ফেলে শুক্কুর আলী। তারপর ঢাকার কদমতলী এলাকার ফুটপাতের অন্ধকার, রেলস্টেশনের প্ল্যাটফরম ঘুরে তার জায়গা হয় পঞ্চগড়ের আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীতে। ছয় বছর ধরে অসহায় শিশুদের সঙ্গেই তার বেড়ে ওঠা। ওরাই এখন তার পরম আত্মীয়।
এখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে শুক্কুর। পৌষের রোদমাখা বিকেলে নিজের পরিচয় খুঁজে ফিরে সে। মনে হয়, ইস সবার মতো তারও যদি মা-বাবা, ভাই-বোন থাকত। অন্তত একটা পরিচয় হতো।
কিন্তু ভাগ্য তাকে সেই সুযোগ দেয়নি। পরিচয়হীন হওয়ায় এখনো তার ভাগ্যে মেলেনি জন্ম নিবন্ধন সনদ। শুধু শুক্কুর আলীই নয়, ভাগ্য যাদের সঙ্গে নির্মম রসিকতা করেছে আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর এমন ৫০-৬০ শিশু এখনো করাতে পারেনি তাদের জন্ম নিবন্ধন।
জানা যায়, মা-বাবার পরিচয় না থাকায় তাদের জন্ম নিবন্ধন করতে তৈরি হয়েছে জটিলতা।
জন্ম নিবন্ধন না থাকায় স্কুলে ভর্তি, ইউনিক আইডি তৈরি, রেজিস্ট্রেশন ও খেলাধুলায় অংশগ্রহণসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এসব অসহায় শিশুকে।
অনাথ শিশু শুক্কুর আলী বলেন, ‘আমার মা-বাবা কেউ আছে কি না, জানি না। পথে পথে ঘুরতাম পরে আহছানিয়া মিশন শিশু নগরীর সমাজকর্মী আমাকে এখানে নিয়ে আসেন। তাই আমার কোনো জন্ম-পরিচয় ও নিবন্ধন নেই।’
ওই শিশু নগরীর রাসেল রানা নামের আরেক শিশু বলেন, ‘জন্ম নিবন্ধন না থাকায় স্কুলে ভর্তি ইউনিক আইডি তৈরি, খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
পরিচয়হীন হিসেবেই জন্ম নিবন্ধন পেলে আমাদের জন্য খুব ভালো হতো।’
পঞ্চগড় আহছানিয়া মিশনের সমাজকর্মী ইউসুফ আলী বলেন, ‘আমাদের ৫৯টি শিশুর কোনো জন্ম নিবন্ধন নেই। জন্ম নিবন্ধন এখন শিশুদের জন্য খুব জরুরি। স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে সব কিছুতেই জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন। কিন্তু পরিচয়হীন শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করতে একটু জটিলতা হচ্ছে।’
পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, ‘আমরা শতভাগ জন্ম নিবন্ধনের জন্য কাজ শুরু করেছি। এরই মধ্যে জন্ম নিবন্ধনের দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে পঞ্চগড় জেলা। কোনো মানুষই জন্ম নিবন্ধন ছাড়া থাকবে না। পরিচয়হীন শিশুদেরও জন্ম নিবন্ধনের সুযোগ রয়েছে। তারা জন্ম নিবন্ধন আবেদনের সময় বাবা মায়ের স্থানে অপ্রাপ্য লিখে আবেদন করলে জন্ম নিবন্ধন পাবে। তবে এই বিষয়টি অনেকেই জানে না।’