সু-খবর, সু-খবর, সু-খবর...। প্রতিদিন মাইকের এমন উচ্চ আওয়াজে ঘুম ভাঙে লাকসাম পৌর এলাকার মানুষের। কখনো বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা ও নানা সুযোগ-সুবিধার সুখবর, তো কখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি, কোচিং, দোকান, হোটেল, বিরানি, শোরুম উদ্বোধন।
বিভিন্ন পণ্যের অফার, কম মূল্যে লাইট বিক্রি, পোলট্রি মুরগির দাম হ্রাস ও নতুন ধান, শাকসবজির বীজের প্রচার। সকাল-সন্ধ্যা মাইকের এমন উচ্চ আওয়াজে সুখবর শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ এই এলাকার মানুষ। প্রতিনিয়ত ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রচারের নামে শব্দ দূষণ করলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন।
এতে বিপাকে পড়েছেন এ এলাকার রোগী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষের শ্রবণের জন্য শব্দের ৪৫ ডেসিবেল হচ্ছে সহনীয় মাত্রা। তবে তা ৭০ ডেসিবেল অতিক্রম করলে ক্ষতিকর। পৌর শহরে প্রতিনিয়ত যে হারে মাইকিং করা হয়, তাতে শব্দের মাত্রা ৭০ ডেসিবেলের কাছাকাছি থাকে। যা শিশুদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
জানা গেছে, উপজেলা ও পৌর শহরের প্রায় ৪৮টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আসেন। রোগীদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য এসব চিকিৎসকের আসার কথা জানিয়ে মাইকিং করেন প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
এতে কেউ বিরক্ত হয়ে অনেকে কানে আঙুল দিয়ে পথ চলেন। প্রযুক্তির যুগে এখন আর দরকার পড়ে না ঘোষকের। ঘোষণাটি একবার রেকর্ড করে নিলেই ব্যাস। রিকশায় মাইক বেঁধে দিনভর চলতে থাকে রেকর্ড করা সেই ‘সু-খবর’র ঘোষণা। সঙ্গে উচ্চ আওয়াজের মিউজিক। ফলে মারাত্মকভাবে হচ্ছে শব্দ দূষণ। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নাজিয়া বিনতে আলম যুগান্তরকে বলেন, শব্দ দূষণের কারণে দুশ্চিন্তা, উগ্রতা, উচ্চ রক্তচাপ, টিন্নিটাস, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাতসহ নানা ক্ষতিকর ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। এছাড়াও অন্যান্য শারীরিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে স্মরণশক্তি হ্রাস, মানসিক অবসাদ হতে পারে। প্রতিনিয়ত শব্দদূষণে শিশুদের মানসিক বৃদ্ধি বিঘ্নিত হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাইকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তি বলেন, মাইকিংয়ের জন্য ক্লিনিক-মালিকরা তাদের দৈনিক ১ হাজার ৪০০ টাকা দেন। বিপরীতে সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত মাইকিং করেন তারা।
পৌর শহরে রেলগট এলাকার ব্যবসায়ী শংকর সাহ ও রাজিব দাস বলেন, প্রতিনিয়ত মাইকিংয়ের কারণে ব্যবসা পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটছে। শব্দ দূষণের প্রচলিত আইন থাকলেও মানছে না তারা। পৌরসভার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন পণ্য ও সেবার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মাইকিংয়ে নামে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান শব্দ দূষণ করছে। মাইকের যন্ত্রণাদায়ক শব্দের কারণে মুঠোফোনে কথা বলাসহ কাজকর্ম করা যায় না।
ইউএনও কাউছার হামিদ যুগান্তরকে বলেন, সব বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নোটিশ দিয়ে জানানো হবে। শব্দ দূষণের কারণে ভুক্তভোগী কোনো নাগরিক অভিযোগ করলে প্রচলিত আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন