Image description
বন্দি শাহেদ, সাবরিনা এবার যে বুদ্ধি আঁটছে?
নিজেকে চালাক ভাবেন না এমন লোকের সংখ্যা খুব কম। সমাজে চলতে হলে চালাক চতুর হওয়ার দরকারও আছে। তবে সমস্যাটা দাঁড়ায় অতি চালাক হওয়া। করোনাকালে এই অতি চালাকরা হয়েছেন ধরাশায়ী। কোন কৌশলই তাদের কাজে আসেনি। কেন? কারণ অতি লোভ। এই লোভই মানুষকে ধ্বংস করে। নিঃশেষ করে। অসম্মানিত করে। সমাজে হ্যস্তন্যস্ত করে। শাহেদ, সাবরিনা, পাপিয়ারা এর জলজ্যান্ত প্রমাণ। ওদের প্রভাব সমাজের সর্বত্র। উচু তলায় অবাধ যাতায়াত। প্রশ্ন হলো- শাহেদ, সাবরিনা, পাপিয়াদের যারা এ সুযোগ করে দিয়েছেন তারা কারা? এ নিয়ে আলোচনা, সমালোচনা ব্যাপক। যারা শাহেদদের শাহেদ বানান তারা সব সময়ই থাকেন অদৃশ্যে। এক্ষেত্রেও আড়ালে থেকে যাবেন এটা আন্দাজ করেই বলা যায়। শাহেদ, সাবরিনারা একের পর এক আকাম করে যাচ্ছিলেন। কাউকে পাত্তাই দেননি। দেশে আইন আছে এটা ভুলে বসেছিলেন। শাহেদের পাপের ফিরিস্তি দেখে এমন প্রমাণই মেলে। রাজধানীর বুকে আবাসিক হোটেল দখল করতে হলে যত বড় কলিজা লাগে সেটা ছিল শাহেদের। সবচেয়ে বড় কথা করোনাকালে নেগেটিভ পজেটিভ রিপোর্ট নিয়ে মরণ খেলায় নেমেছিল ওরা। মানুষের রক্ত চুষে নেয়ার ব্যবসা করতে গিয়েই পাপ বালেগ হয়। এটাই তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। আর সাবরিনা তো মানুষের হার্ট নিয়ে কারবার করতেন। নিজের হার্ট বড় না হলে এটা করা সম্ভব নয়। ওরা দেখিয়ে দিয়েছে ওরা সব পারে। ওই যে রাজ দরবারে আসা জেলের মতো। এক রাজা তার দরবারে বসা। এ সময় এক জেলে রাজার সাক্ষাৎ প্রার্থী হলেন। কিন্তু রাজ দরবারের পাহারাদাররা তাকে অনুমতি দিচ্ছেন না ভেতরে যেতে। জেলে পাহারাদারকে বললেন, দেখ আমি রাজার জন্য বড় একটি মাছ নিয়ে এসেছি। সেটি রাজার হাতেই দিতে চাই। তুমি রাজাকে গিয়ে খবরটা দাও। পাহারাদার রাজার কাছে গিয়ে খবর দিলেন। রাজা জেলেকে ডাকলেন। জেলে রাজ দরবারে হাজির হয়ে মাছটি রাজাকে উপহার দিলেন। রাজা মহাখুশি এত বড় মাছ দেখে। আর খুশি হয়ে জেলের হাতে ৫০০ টাকা উপহার দিয়ে বিদায় দিলেন। জেলে রাজ দরবার থেকে বের হওয়ার পর রানি বললেন, রাজা আপনি এই একটি মাছের জন্য ৫০০ টাকা দিয়ে দিলেন। এটা মোটেও ঠিক হয়নি। রাজা বললেন, তাহলে কি করা। রানি পরামর্শ দিলেন জেলেকে ডাকা হোক। জিজ্ঞেস করা হোক এটা পুরুষ মাছ না কি মেয়ে মাছ। পুরুষ বললে আমরা বলব আমাদের মেয়ে মাছের প্রয়োজন। আর মেয়ে বললে বলব আমাদের পুরুষ মাছের প্রয়োজন। আর এভাবে মাছটি ফেরত দিয়ে আমরা টাকা নিয়ে নেবো। সঙ্গে সঙ্গে ডাকা হলো জেলেকে। রাজ দরবারের প্রহরীরা জেলেকে ধরে আনল। এবার রাজা জেলেকে জিজ্ঞেস করল আচ্ছা জেলে মাছটি পুরুষ না মহিলা। জেলে ঝটপট উত্তর দিলো রাজা মশাই এ মাছটি পুরুষও না মেয়েও না। এটি হিজড়া। উত্তর শুনে রাজা খুশি হলেন। এবার রাজা আরও ৫০০ টাকা দিল জেলেকে। জেলে বেরিয়ে গেল রাজ দরবার থেকে। গেট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় দুটি পয়সা পড়ে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে জেলে পয়সাগুলো তুলে চুমু খেয়ে পকেটে রাখল। দূর থেকে রানি তা দেখে গেটের প্রহরীদের ডাকলেন। সব শুনে রাজাকে গিয়ে বললেন, জেলে এ কাজ করেছে। দুটি পয়সা পড়ে গেছে তাতে কি? তাকে এক হাজার টাকা দেয়া হয়েছে তাতেও জেলের পোষালো না। পড়ে যাওয়া দুটি পয়সা উঠিয়ে নিতে হবে? রাজার বাড়ির সামনে দিয়ে কত মানুষ যায় তাদের কেউ এ পয়সা দুটি পেলে কত উপকৃত হতো। রানি বললেন, জেলে সত্যিই লোভী। দুটি পয়সার লোভ সামলাতে পারেনি। তাকে এনে শাস্তি দেয়া হোক। পাশাপাশি তাকে দেয়া এক হাজার টাকা ফেরত নেয়া হোক। রাজা ফের ডাকলেন জেলেকে। এবার জেলেকে রাজা রাগান্বিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন মাটিতে পড়ে যাওয়া পয়সা তুললে কেন? আবার এতে চুমুও খেয়েছ। তোমার এতো লোভ কেন? জেলে বলল, রাজা মশাই আসলে লোভ নয়। দুটি পয়সা পড়ে গেছে ঠিকই। কিন্তু এ রাস্তা দিয়ে কত মানুষ যাবে আবার আসবে। তাদের পায়ের নিচে পয়সাগুলো পড়বে। আর পয়সায় আমার রাজা রানির ছবি আছে। এতে রাজা রানির অপমান হবে। আর এটা মনে করেই পয়সাগুলো তুলে রাজা রানিকে চুমু দিয়ে সম্মান জানিয়েছি। কথা শুনে রাজাতো অবাক। তিনি ঘোষণা করলেন এই জেলেকে আরো ৫০০ টাকা দেয়া হোক। আসলে রাজা এবং রানি ভেবেছিলেন তারাই চালাক। জেলে বেটাকে জব্দ করবে। কিন্তু রাজা ও রানি ভাবেননি জেলে হলেও তার বুদ্ধি আছে। শেষ কথা হলো ওই জেলের মতো সব জায়গায় বুদ্ধি খাটিয়ে পার পেয়েছে শাহেদ, সাবরিনারা। এবার কারাগারে বসে কি বুদ্ধি আঁটে এটাই দেখার বিষয়। তবে তাদের চরিত্র বলে দীর্ঘ প্রতারণায় তারা ক্লান্ত। এখন একটু রেস্ট পাচ্ছে। চিন্তা করার সময় পাচ্ছে। একদিন না একদিন বেরুবে তখন আধুনিক প্রতারণা নিয়ে হাজির হবে সমাজে। বাঙালি ভুলোমনা। তারা সব ভুলে যাবে। এ সুযোগটি কাজে লাগাবে।