
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় পলাতকদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহানকে নিয়োগ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৬ সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে আসামিপক্ষ প্রথমে পলাতকদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগের আবেদন করে। পরে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্ল্যা আল মাহমুদ এ বিষয়ে শুনানি করেন।
পরবর্তীতে আপিল বিভাগ আলোচিত এ মামলায় পলাতক মাওলানা তাজউদ্দিন আহমেদ ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এম শাহজাহানকে নিয়োগ দেন।
এর আগে একই দিন সকালে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৬ সদস্যের আপিল বেঞ্চে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে প্রথম শুনানি করেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় ২৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। ওই ঘটনায় মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দু’টি মামলা হয়। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সিআইডি এ মামলার তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিলে বিচার শুরু হয়।
তবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ মামলায় অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৩০ জনকে যুক্ত করা হয়।
দীর্ঘ বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন আলোচিত এ মামলার রায় দেন। ওই রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও সাবেক শিক্ষা উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজি’র সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জল, এনএসআই-এর সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম ও হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ।
বিচারিক আদালতের রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন ও ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়। সেই রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ও মাওলানা সাব্বির আহমেদ।
এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অন্যরা হলেন- আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই ও রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।
অন্যদিকে বিচারিক আদালতের রায়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহিদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগ্নে অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাইফুল ইসলাম ডিউক, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই-এর অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল এটিএম আমিন, ডিএমপি’র সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডি’র সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ ও সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে ২ বছর করে কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এই মামলার আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে ৩ বছর করে কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৬ মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।
বিচারিক আদালতে এই রায়ের দেড় মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্সসহ মামলার নথি হাইকোর্টে আসে। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর থেকে ডেথ রেফারেন্স এবং আসামিদের আপিল ও জেল আপিল শুনানি শুরু হয়। বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এর শুনানি চলছিল।
তবে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর হাইকোর্ট বেঞ্চ পুনর্গঠন হলে বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি হয়। শুনানি শেষে গত ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট এই মামলার সব আসামিকে খালাস দিয়ে রায় দেন।
পরে সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ২১ এপ্রিল এ মামলায় লিভ গ্রহণ করে আপিলের অনুমতি দেন আপিল বিভাগ।