কুমিল্লায় যৌথ বাহিনীর হাতে আটকের পর নির্যাতনে নিহত যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলামের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) মেজর জেনারেল আবুল হাসনাত মোহাম্মদ তারিক। গতকাল সোমবার রাতে তাঁরা জিওসির দপ্তরে যান।
গতকাল রাত ৮টা থেকে প্রায় ১১টা পর্যন্ত কুমিল্লা সেনানিবাসে জিওসির দপ্তরে তৌহিদুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা ছিলেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন তৌহিদুলের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ, স্ত্রী ইয়াসমিন নাহার, দুই ভাগনি মাহবুবা উদ্দিন ও সানজিদা আক্তার। এ সময় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ওই ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দেওয়া হয়। তৌহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সেনা ক্যাম্পে যাঁরা মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান পরিবারের সদস্যরা।
নিহত তৌহিদুলের ভাই সাদেকুর রহমান বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসারদের সঙ্গে দেখা করে ঘটনার বিস্তারিত জানাতে চেয়েছিলাম। পরে তাঁরা আমাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। আমরা ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেছি। বলেছি, আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’
তৌহিদুলের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ আজ মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, “আমরা ঘটনার আগে ও পরের সবকিছু খুলে বলেছি। তিনি (জিওসি) আমাদের সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। এরপর তিনি আমাদের বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীর যাঁরা এ ঘটনায় জড়িত, তাঁদের বিচার সেনাবাহিনীর কোর্টে হবে। আর বাইরের যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিচার স্বাভাবিক আদালতে হবে।’ সেনাবাহিনী বিচার পেতে সর্বোচ্চ সহায়তা করবে।’”
আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ‘ঘটনার পর সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ ও বিচার পেতে জিওসিসহ সেনাবাহিনীর আশ্বাসে আমরা সন্তুষ্ট। আমরা বিশ্বাস করি, যাঁরা এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত, তাঁদের বিচার হবে। যাঁরা আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন, তাঁদেরও বিচার হতে হবে। হত্যার ঘটনায় আমরা থানায় একটি মামলা দায়েরের প্রস্তুতি শেষ করেছি। মামলাটি আজই দাখিল করা হতে পারে।’
নিহত তৌহিদুল ইসলাম (৪০) কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের ইটাল্লা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন। তাঁর স্ত্রী ও চার মেয়ে আছে। তিনি কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গত শুক্রবার তৌহিদুলের বাবা মোখলেছুর রহমানের কুলখানি অনুষ্ঠান ছিল। ওই আয়োজন চলাকালে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে তৌহিদুলকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যান সেনাবাহিনীর সদস্যরা। শুক্রবার দুপুরে তাঁরা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখেন তৌহিদুলের নিথর দেহ পড়ে আছে। তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানা সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তৌহিদুলকে হস্তান্তরের কথা বলা হয়। তখন তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।