Image description

দেশজুড়ে মানব পাচারের ফাঁদ পেতে শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন সাবেক এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী। তার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৫৪৮ কোটি টাকারও বেশি সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। তার জনশক্তি রপ্তানি বাণিজ্য সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতেন জিনাত রিজওয়ানা নামে এক নারী। তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নিকটাত্মীয় পরিচয় দিতেন। এই নারী যুক্তরাষ্ট্রে নিজাম হাজারীর অন্তত ২০০ কোটি টাকা পাচারে সহায়তা করেছেন বলে জানা গেছে। দুবাই ও কানাডাতেও টাকা পাচার করেছেন নিজাম হাজারী। বেশির ভাগই জনশক্তি রপ্তানির সিন্ডিকেট গড়ে কামিয়েছেন।

গত ২৭ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়া এক অভিযোগ থেকে এসব জানা গেছে। ওই অভিযোগের সূত্র ধরে এরই মধ্যে সংস্থাটি অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে।

অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্টরা জানান, ফেনী শহরের মাস্টারপাড়ায় বিরাট এলাকাজুড়ে একটি বাগানবাড়ি তৈরি করেন নিজাম হাজারী। এটি নির্মাণে খরচ হয় কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা। এই বাগানবাড়ি ছাড়াও ফেনী সদরের বালিগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় নিজাম হাজারী নির্মাণ করেন আরও পাঁচটি বাড়ি। ফেনী শহরে নিজেই নির্মাণ করেন বহুতল ভবন। নিজের ও স্ত্রীর নামে চট্টগ্রামে করেছেন দুটি লাইটারেজ জাহাজ। নিজাম হাজারী যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, অস্টিন-হিউস্টন সিটিতে রিজওয়ানার মাধ্যমে একাধিক বাড়ি ও আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছেন।  নিজাম হাজারীর ৮২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫৪৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে ১৮ কোটি ৭২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংস্থাটি।  দুদক সূত্র জানায়, জিনাত রিজওয়ানা সাবেক এমপি নিজাম হাজারীর প্রভাব খাটিয়ে সারা দেশে গড়ে তোলেন ভয়ংকর প্রতারণার ফাঁদ। এই ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে বিদেশগামী থেকে শুরু করে বিভিন্ন ট্রাভেলস এজেন্সি। সরকার পরিবর্তনের পর থেকে নিজের অফিস বন্ধ করে দিয়েছেন রিজওয়ানা। এ কারণে পাওনা টাকা আদায়ে তার সঙ্গে কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছেন বিদেশগামী প্রতারণার শিকার ব্যক্তিরা।

জানা যায়, গত বছরের ১৪ নভেম্বর ৯ কোটি ২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ফেনী সদর থানায় মামলা করেন এক ভুক্তভোগী। মামলায় জিনাত রিজওয়ানা ছাড়াও নিজাম উদ্দিন হাজারী, হাজারীর খালাতো ভাই আবদুল আওয়াল সবুজ, জাতীয় পার্টির (জাপা) সাবেক এমপি আহসান আদেলুর রহমানসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। জিনাতের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে বর্তমানে ৪৬টি মামলা চলমান। এমনকি অনেক মামলায় ইতোমধ্যে তিনি গোপনে জামিনও নিয়েছেন। আবার অনেক মামলায় আদালত জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।  জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ৫ হাজার টাকা বেতনে জিএমজি এয়ারলাইনসে চাকরি করতেন জিনাত রিজওয়ানা। এরপর তিনি দুটি সিএনজি ফিলিং স্টেশনের মালিক, ঢাকার পূর্বাচলে ১০ কাঠার প্লট, হবিগঞ্জের মাধবপুরে তিন হাজার বিঘার ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্লট ও আমেরিকায় কিনেছেন একাধিক বাড়ি।  দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, সব অভিযোগই যাচাইবাছাই করে আইন ও বিধিমোতাবেক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়।