Image description

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ফেব্রুয়ারি জুড়ে হরতাল–অবরোধসহ লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। হাজার হাজার শহীদের রক্তের দাগ না শুকাতেই খুনিদের নতুন করে আস্ফালনে বিস্ময় ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ছাত্র-জনতা। মানবতা বিরোধী অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির মুখোমুখি করতে না পারার ব্যর্থতাই ফ্যাসিস্টদের হঠকারিতা দেখানোর সুযোগ করে দিয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দলমত নির্বিশেষে সবার কমন শত্রু জনগণকে শত্রু বানিয়ে দেশ শাসন করা আওয়ামী লীগ ও গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা। কিন্তু অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র সমন্বয়ক ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সম্প্রতি ‘শত্রু শত্রু খেলা’ ও নিজেদের মধ্যে বিরোধ সার্বভৌমত্ব বিরোধী এই ভারত পলাতক গোষ্ঠীটিকে ষড়যন্ত্রে উৎসাহ জোগাচ্ছে। এই সুযোগ নিয়ে দিল্লির আশ্রয় নেয়া ভারতের সেবাদাসী হাসিনা অন্তর্বর্তী সরকার হটানোর আন্দোলনের হুঙ্কার দিচ্ছে।

দিল্লির খুঁটির জোরে পলাতক আওয়ামী লীগের আন্দোলনের এই হুমকিতে ক্ষোভে ফুঁসছে সাধারণ জনতা। এনিয়ে দৈনিক ইনকিলাবের এক ভিডিও প্রতিবেদনে স্পষ্টত ফুটে উঠেছে, জণগণের মাঝে আওয়ামী গণহত্যাকারীদের আস্ফালন নিয়ে কতটা ক্ষোভ রয়েছে। জুলাই বিপ্লবকে বেহাত করতে মাঠে নামলেই খুনিরা যে সাধারণ জনগণের ব্যাপক রোষানলে পড়বে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

একদিকে পলাতক আওয়ামী লীগের আন্দোলনের হুমকিতে যেমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে এই রিমোট কর্মসূচি নিয়ে নেটদুনিয়ায় হাস্যরসেরও সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেককে আওয়ামী লীগের সাথে সমান্তরালভাবে মাসব্যাপী 'লীগ পিটাও' কর্মসূচির ডাক দিতে দেখা গেছে।

নেটিজেনরা বলছেন, কয়েক হাজার মানুষের রক্ত ঝরানোর পরও দলটির নেতাকর্মীদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা দেখা যায়নি। বরং আগের চেয়েও আরো ভয়ঙ্কর ও বিধ্বংসী রূপে ফিরে আসার হুঙ্কার দিচ্ছে।‌ গেল ছয় মাসে নানা ছদ্মবেশে কূটচাল ও ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়ে এবার স্বরূপেই দেশজুড়ে নৃশংসতা চালানোর পরিকল্পনা করছে। ২৪ এর ছাত্র-জনতার খুনিদের এই আস্ফালন থামাতে সিরিয়ার আসাদ অনুগতদের ন্যায় দ্রুত ফাঁসিতে ঝুলানোর দাবি তুলেছেন অনেকে।

গত প্রায় ১৬ বছর গুমখুন, লুটপাট, আয়নাঘর, নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণহত্যায় বাংলাদেশের মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলা আওয়ামী লীগের বিদেশ পলাতক ও আত্মগোপনে থাকা নেতারা গত ২৯ জানুয়ারি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে লিফলেট বিতরণ, প্রতিবাদ-বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, অবরোধ ও হরতালের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।’

যদিও জনগণের রোষানল থেকে বাঁচতে আত্মগোপন থাকা অবস্থায় এই কর্মসূচি দেওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই এই কর্মসূচিকে 'রিমোট হরতাল', 'ওয়াইফাই হরতাল' আখ্যা দিয়ে ট্রল করছেন। অ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিদেশ পলাতক নেতাদের এই‌ হাস্যকর, কাণ্ডজ্ঞানহীন ও হঠকারী কর্মসূচিতে দেশে আত্মগোপনে থাকা কর্মীদের বিপদে পড়া ছাড়া কোনও ফল আসবে না বলেই মনে করেন নেটাগরিকরা।

 

 

 

এদিকে 'ইউনূস হটাও' লিফলেট বিতরণের সময় বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে আটক হওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা গেছে। এছাড়া সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করতেও দেখা গেছে।

 

 

ফেসবুকে একটি আইডিতে একটি ভিডিও শেয়ার করে লেখা হয়, উত্তরা ১৪ নাম্বার সেক্টরে আওয়ামী লীগের 'ইউনূস হটাও' লিফলেট বিতরণ করছিলো। হাতেনাতে ধরা পড়লো জনতার হাতে। আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসব্যাপী চলবে 'লীগ পিটাও' কর্মসূচি!

 

 

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি নিয়ে আখতারুজ্জামান আজাদ লিখেছেন, আওয়ামী লীগের ডাকা ১৮ ফেব্রুয়ারির হরতাল সমর্থন করব, হরতালের পক্ষে জনমত তৈরি করব, এমনকি সশরীর রাস্তায় নেমে পিকেটিংয়ে অংশ নেব— সেরেফ এক শর্তে। শর্তটা হলো— শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রাদওয়ান মুজিব ববি, ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশে উপস্থিত থাকতে হবে এবং জয় ও ববিকে হরতালের মিছিলের অগ্রভাগে থাকতে হবে, পুতুল ও টিউলিপ থাকলে আরো ভালো (আবুল হাসানাৎ আবদুল্লাহ্‌, শেখ সেলিম, শেখ হেলাল, শেখ তাপস বা শামিম ওসমান থাকলেও চলবে)। উল্লিখিত বারো-তেরোজনের মধ্যে যেকোনো একজনও যদি ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশে ফেরেন, কথা দিচ্ছি— আওয়ামী লিগের ডাকা এই হরতালে নিজে হেলমেট পরে পিকেটিং করতে নামব, প্রয়োজনে পেট্রোল বোমা বানানো শিখব, বানিয়ে আওয়ামী লিগের অপছন্দের লোকজনের বাসা-বাড়িতে ছুড়ে মারব।

 

 

এই শর্ত পূরণ করতে না-পারলে আওয়ামী লিগকে পরামর্শ দেব নেশা কম করতে। সাংগঠনিকভাবে নেশাগ্রস্ত না-হলে একটা রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঝাড়ে-বংশে বিদেশে পলাতক থেকে দেশে সাধারণ কর্মীদেরকে রাস্তায় নামিয়ে বিপদগ্রস্ত করে এ-রকম ‘ওয়াইফাই হরতাল’ ডাকতে পারে না। আওয়ামী লিগের নেশা কাটুক। নেশা কেটে গেলে হরতালও কেটে যাবে।

 

 

 

সুলতান মোহাম্মদ জাকারিয়া লিখেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার পরামর্শ তো শুনেন নাই, নেন, এখন তাদের রাজনৈতিক অধিকার দেন। খুনী বাহিনীকে আটকাবেন কেমনে? কোন আইনে? দেশে যেহেতু জরুরি অবস্থা জারি নেই, এবং তারা যেহেতু নিষিদ্ধ কোন সংগঠন নয়, তাইলে কী দিয়ে আটকাবেন? শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের অধিকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন-স্বীকৃত (Article 21, ICCPR; Article 8(1), ICESCR)। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ধরবে। দিনরাত সমালোচনা করবে। সামলাতে পারবেন?

 

 

বর্তমান সরকার গঠনের পরপরই ৮ আগস্ট ২০২৪ সালে বর্তমান সরকারকে আহ্বান করেছিলাম (পোস্টের লিংক কমেন্টে) যে, এই ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের পর দলটিকে নিষিদ্ধ করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। নিষিদ্ধ না করলে তারা তাদের রাজনৈতিক অধিকার চর্চা করবে এবং আপনি সে অধিকার না দিয়ে পারবেন না। নিষিদ্ধ করতে না পারলে, নিদেনপক্ষে বিচার সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। নইলে পরে পস্তাবেন।

 

 

হাজার-হাজার মানুষের আত্মত্যাগের তাজা স্মৃতির ওপর প্রায় বিনা প্রশ্নে ও বিনা বাধায় যে কাজটি করতে পারতেন, এখন কি ওত সহজে পারবেন? সহজে না পারলেও পারবেন। তবে জল অনেক ঘোলা করে। ..কয়েক হাজার তরুণের রক্ত ঝরানোর পরও যে দলের নেতা-নেত্রী, কর্মীদের বিন্দুমাত্র অনুশোচনা দেখা যায়নি, তাদের নিষিদ্ধের আলাপে কারা বাগড়া দিয়েছিলো? তাদের ধরেন। তাদেরকে বলেন এখন সামলাতে। সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়...।

 

 

উল্লেখ্য, সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পর দুই মাসেরও কম সময়ে নতুন শাসকগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) দ্রুত বিচার শেষ করে গত সপ্তাহে ৩৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছেন। যাদের প্রায় সবাই ক্ষমতাচ্যুত বাশার আল-আসাদ সরকারের কর্মকর্তা ছিলেন। এছাড়া আসাদের রাজনৈতিক দল বাথ পার্টিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছে দেশটির বর্তমান প্রশাসন। সেই সাথে সিরিয়ার সংবিধানও বাতিল করা হয়েছে।বিলুপ্ত করা হয়েছে সিরিয়ার সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীসহ ছোট-বড় সকল সশস্ত্র গোষ্ঠী। বাশার আল-আসাদের উৎখাতের আগে ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সিরিয়া শাসন করেছিল বাথ পার্টি।