ট্রেন এলে সংকট কাটে, ট্রেন না এলে সংকট বাড়ে। ট্রেন নির্ভরতায় রয়েছে সিলেটে জ্বালানি সরবরাহ। বিকল্প ছিল নদীপথ। কিন্তু সেই পথ বন্ধ। সিলেটে রয়েছে তেলের খনি। এক সময় সিলেট থেকে উৎপাদিত তেল দিয়ে চাহিদা মেটানো সম্ভব হতো। কিন্তু এখন এই তেল চট্টগ্রাম ঘুরে আসে সিলেটে। এতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে সিলেট। গত এক সপ্তাহ ধরে সিলেটে জ্বালানি তেলের সংকট চলছে। জ্বালানিবাহী ট্রেন সিলেটে না আসায় এ সংকট দেখা দিয়েছে।
তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, তেলবাহী একটি ট্রেন সিলেটে রওয়ানা দিয়েছে। এটি এলে প্রাথমিকভাবে সংকট কেটে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সিলেটে জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রায় ১০ লাখ লিটার। এই চাহিদা পূরণে প্রতি সপ্তাহে জ্বালানি তেলের ওয়াগনবাহী দু’টি ট্রেন সিলেটে আসে। পরে বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা, যমুনার মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের কাছে তেল পৌঁছানো হয়। কিন্তু গত ২৪শে জানুয়ারি সর্বশেষ ৪ লাখ লিটার জ্বালানি তেল নিয়ে সিলেটে এসেছিল ট্রেন। এরপর আর আসেনি। এ কারণে গত তিনদিন ধরে সিলেটে জ্বালানি তেলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। সিলেটে জ্বালানি তেলের বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ১১৪টি পেট্রোল পাম্প। এসব পাম্পে তেল বিক্রি হয়। বিশেষ করে যানবাহন চলাচলে এসব তেল ব্যবহার করা হয়। পাম্প মালিকরা জানান, গত এক সপ্তাহের মধ্যে সিলেটে জ্বালানি তেলবাহী ট্রেন আসেনি। বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেননি। এ কারণে পাম্প মালিকরা বাধ্য হয়ে নিজেদের উদ্যোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জ ডিপো থেকে জ্বালানি তেল সংগ্রহ করে এনে চাহিদা পূরণের চেষ্টা করেন। এতে অবশ্য ট্যাঙ্কলরির সাপোর্ট দিয়েছে বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান। তবে বিকল্প পথে জ্বালানি তেল নিয়ে আসার কারণে পাম্প মালিকদের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। তারা জানান, বিকল্প পথে জ্বালানি সংগ্রহ করতে হলে খরচ বেশি পড়ে। শ্রমিকও বেশি লাগে।
বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ওনার্স এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুবায়ের আহমদ চৌধুরী গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, জ্বালানি তেল সংকটের কারণে সিলেটের মানুষের বারবারই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আমরা শত চেষ্টা করেও চাহিদা পূরণ করতে পারি না। এজন্য কেবলমাত্র রেলপথের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। রেলপথ নির্ভরতা কমিয়ে নৌপথ ব্যবহার করলে খরচ কম পড়তো। একইসঙ্গে জ্বালানি তেল সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকতো। তিনি বলেন, এখন আমরা সড়ক পথে তেল এনে সিলেটের মানুষের চাহিদা পূরণ করতে পারছি। সেটি কেবল পেট্রোল পাম্প মালিকরা সংকট কিছুটা দূর করতে পারছেন। কিন্তু বোরো মৌসুমে সেচের জন্য জ্বালানি তেল প্রয়োজন। সেই তেল পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার নুরুল ইসলাম জানান, প্রায় সময় ট্রেনের ইঞ্জিন সংকট থাকে। এ কারণে সময়মতো ট্রেন আসতে পারেন না। আগামীতে যাতে যথাসময়ে জ্বালানিবাহী ট্রেন সিলেটে আসতে পারে সেজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। এদিকে, সিলেটের জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ সিলেট থেকে উৎপাদিত তেল দিয়ে করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, অতীতে চট্টগ্রাম থেকে তেল আসার অপেক্ষা করতো হতো না। সিলেটের কৈলাশটিলা গ্যাস ও তেলক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত তেল দিয়ে অনেকাংশে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হতো। কিন্তু গত চার বছর আগে সিলেট থেকে উৎপাদিত তেল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। সিলেটের তেলই চট্টগ্রাম থেকে ঘুরে সিলেটে আসে। এটা দুঃখজনক বলে জানান তারা। পাম্প মালিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব জানান, সিলেটে উৎপাদিত তেল সিলেটে রাখতে পারলে আমাদের সংকটের স্থায়ী সমাধান হবে। অন্যথায় রেলপথে ভোগান্তি বাড়বে। নৌপথ ব্যবহার করলে দুর্ভোগ কম হতে পারে বলে অভিমত দেন তিনি।
