প্রবাসী বাংলাদেশিদের এনআইডি সেবা দিলেও ভোটাধিকার দেওয়ার বিষয়টি বেশ জটিল বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে ইসির কমিটি ও উপ-কমিটি পর্যায়ে আলোচনার প্রেক্ষিতে ‘অনলাইন ভোটিং’ বিষয়ে পরীক্ষামূলক উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে অংশীজনদের সব পক্ষের মতামত নেওয়ার বিষয় রয়েছে এবং এ ধরনের পদ্ধতি চালু নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে মনে করে ইসি।
নির্বাচন ভবনে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) এএমএম নাসির উদ্দিন কমিশনের তৃতীয় নির্বাচন সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ১১টি নির্ধারিত আলোচ্যসূচির বাইরে এনআইডি সেবা, প্রবাসীদের অনলাইন ভোটাধিকার ও সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে কমিশন সভায়।
নির্বাচন ভবনে কমিশন সভা শেষে সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানান নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটিং পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কমিটি ও উপ-কমিটি পর্যায়ে আলোচনার পরে আমরা দেখতে পাচ্ছি, তিনটি সম্ভাব্য পদ্ধতি আমাদের সামনে আছে।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রথমটি হলো পোস্টাল ব্যালট; যদিও ওটা খুব একটা কার্যকরী নয়। দ্বিতীয়টা হচ্ছে-প্রক্সি ভোটিং। এই বিধান বিভিন্ন দেশে আছে। আর তৃতীয় অপশন হচ্ছে ডিজিটাল বা অনলাইনে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা। কিন্তু অনলাইনের এই ভোটের ব্যবস্থাটি খুব সহজ নয়।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধির সাথে এ ব্যাপারে আলাপ হয়েছে। তারাও জানিয়েছে অনেক দেশ ইন্ট্রোডিউচ করে ব্যাকট্র্যাক করেছে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা প্রথম দুটাকে ম্যাচিউর করব। পাশাপাশি তিন নম্বর অপশন (অনলাইন ভোটিং) নিয়ে ফিচার ডেভেলপ করব এবং এটার একটা একটা পাইলটিং করব, দেখবো যে ফিজিবল কিনা। সকল পক্ষ সম্মত হওয়ার ব্যাপার আছে। কখন ইন্ট্রোডিউচ করতে পারব জানি না, প্রসেসটা ইনিশিয়েট করতে চাচ্ছি।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ আরও বলেন, বিভিন্ন দেশে দূতাবাসের মাধ্যমে আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার নিবন্ধন ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে আজকে আলোচনা করেছি; এটাকে আরো কীভাবে সহজীকরণ করা যায়। আমরা অনেক ধরনের ডকুমেন্ট চেয়ে থাকি। তবে পাসপোর্ট ও জন্ম নিবন্ধনের ওপর ভিত্তি করে বাকিগুলোকে ঐচ্ছিক করে করা যায় কিনা সে বিষয়ে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রবাসে বিদেশি নাগরিকদের ভোটার হয়ে যাওয়ার বিষয়টি রয়েছে, তা আরও গবেষণা করা হবে।
বৈঠকে দেশি-বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা ২০২৩, ও সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, এটা সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছে পর্যালোচনার জন্য। পর্যবেক্ষকরা সাধারণত ৫ বছর মেয়াদী নিবন্ধিত হয়ে থাকেন। আমাদের এই মুহূর্তে নির্বাচনটা যেহেতু পাঁচ বছর মেয়াদী না; তাই এটাকে একটু রিভিউ করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন পর্যবেক্ষক সংস্থা নিয়ে বিতর্ক আছে। তাই আমরা এটাকে নতুনভাবে পর্যালোচনা করতে চাচ্ছি। একইভাবে সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা নিয়েও একইভাবে কমিটিতে পাঠানো হয়েছে পর্যালোচনার জন্য।
এ নির্বাচন কমিশনার জানান, নির্বাচন কমিশনে যে ডেটা সেন্টার রয়েছে, কিন্তু ডিজাস্টার রিকভারি সাইট (ডিআরএস) নেই। এটা জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন। কীভাবে করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমরা একটা যৌথ কমিটি করে দিয়েছি তারা দ্রুত এ বিষয়ে সুপারিশ দেবে ডিআরএস স্থাপনের বিষয়ে।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, এনআইডির যে ব্লাঙ্ক কার্ড সরবরাহ আটকে ছিল বেশ কিছুদিন যাবত ধরে। তিন কোটি কার্ড প্রকিউর করার জন্য সেনাবাহিনীর সাথে চুক্তি হয়। কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সেনাবাহিনী দিতে পারছে না বলে জানানো হয়। এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। আগের কমিশনের এটা নিয়ে একটা ওপেন টেন্ডারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেনাবাহিনী পরে ১৭২ টাকা করে দিতে রাজি হয়। ৪০৬ কোটি টাকায় যতগুলো কার্ড হয় সেগুলো তাদের কাছ থেকে নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, এনআইডি কারেকশন সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বিভিন্ন ধরনের সমস্যা আমাদের কাছে আসছে। যার কিছু কিছু মানবিক এবং কিছু কিছু মনে হয়েছে আইনগতভাবে যৌক্তিক। আমরা একটা কমিটি ফরম করেছি। তারা এটাকে রিভিউ করবে এবং সমগ্র বাংলাদেশ থেকে যত ধরনের সমস্যা আমরা পাচ্ছি সংশোধনের জন্য, তার সবগুলো রিভিউ করে দেখা কীভাবে এটাকে সহজ করা যায়। আর যেগুলো আইনগতভাবে সম্ভব না সেগুলো কীভাবে নাকচ করে দেওয়া যায়।
আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচন কমিশনের জাতীয় সার্ভার থেকে সেবা নিয়ে থাকে ১৮২টি প্রতিষ্ঠান। তারে ক্ষেত্রে নিরাপত্তা জোরদারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনার আলোকে আমাদের মনে হয়েছে আমাদের নিরাপত্তা ফিচারগুলো জোরদার করতে হবে। এটা সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।