Image description

আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ‘গুম’-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে মুক্তির আবেদন নিয়ে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে জানিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে জানানো হয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস এর ‘গুম’-সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই রিপোর্টে আমাকে যারা গুন্ডাদের মতো গায়ের জোরে বেআইনি ও অবৈধভাবে অপহরণ করে বেআইনি ও অবৈধভাবে আটক রেখেছিল তাদের মধ্য হতে ‘একজন সেনা কর্মকর্তা’র বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু আযমী একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন, তাই শেখ হাসিনার কাছে তিনি মুক্তি দেওয়ার আবেদন জানাতে থাকেন। কিন্তু প্রতিবারই তার আবেদন নাকচ করে হাসিনা’। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার ‘আমি আবেদন করেছিলাম’ মর্মে বক্তব্যটি মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রথম কথা হলো, আবেদন জানাতে হলে সেনা কর্মকর্তা কেন, যে কোনো ব্যক্তিই তো আবেদন জানাতে পারেন। আবেদন জানানোর জন্য সেনা কর্মকর্তা হতে হবে এ ধরনের কোনো বিধান নেই। তাই, এখানে সেনা কর্মকর্তা দেখে আবেদন করার বক্তব্যটি হাস্যকর।

দ্বিতীয়ত, আট বছরের বন্দিজীবনে আমি কখনো হাসিনা বা অন্য কারও কাছে মুক্তির জন্য কোনো ধরনের কোনো আবেদন করিনি। এটা সকলেই জানেন, আমাকে ডিজিএফআই অপহরণ করে ঢাকা সেনানিবাসের পশ্চিম প্রান্তে, কচুক্ষেতে অবস্থিত ডিজিএফআই কমপ্লেক্স এর ভিতরে তথাকথিত আয়নাঘর এ দীর্ঘ আট বছর প্রাকৃতিক আলো-বাতাসহীন ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বন্দি করে রেখে মানবেতর জীবনযাপনে বাধ্য করে সীমাহীন মানসিক নির্যাতন করেছে।

সুতরাং, যদি কোনো সেনা কর্মকর্তা ‘আমি আবেদন করেছিলাম’ মর্মে বক্তব্য দিয়ে থাকেন, তাহলে তিনি ডিজিএফআই’র অফিসারই হবেন। আমি বন্দি থাকাকালীন ডিজিএফআই এর ৫ জন ডিজি (যাদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে) এবং ডিজিএফআই এর যেই শাখা আমাকে অপহরণ করে বন্দি করে রেখেছিল সেই শাখার ৫ জন ডাইরেক্টর ছিলেন। আমি যদি মুক্তির জন্য তার কাছে আবেদন করে থাকি তাহলে এই ১০ জনের মধ্য হতে দুই তা তার অধিক অফিসারের মাধ্যমেই তা হাসিনার নিকট পাঠানোর কথা। আমি এই ১০ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, আমি আবেদন করেছি মর্মে যেই দাবি করা হয়েছে সেই ধরনের কোনো দলিল বা প্রমাণ আপনাদের নিকট থেকে থাকলে তার মূল কপি জনসম্মুখে প্রকাশ করে আপনাদের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করুন। আমি জানি আপনারা তা পারবেন না, কারণ আমি কোনো আবেদনই করিনি এবং এই দাবি শতভাগ মিথ্যা ও নির্লজ্জ মিথ্যাচারের এক নমুনা। এছাড়া, যিনি এ দাবি করেছেন, তিনিও যেহেতু ডিজিএফআই এর কর্মকর্তা, তাই তিনিসহ যেসব কর্মকর্তা আমিসহ আরও যেসব নিরপরাধ ব্যক্তিদের গুম করা, বিভিন্ন মেয়াদে অবৈধভাবে বন্দি রাখা এবং বন্দিদের ওপর নির্যাতন করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন, তারা সকলেই শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। তাদের সকলের বিরুদ্ধে চরম দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি।

আযমী আরও জানান, আবেদন করা তো দূরের কথা, বরং আমি তাদের পক্ষ হতে মুচলেকা দিয়ে মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। বন্দী থাকাকালীন বিগত ২৩শে মে ২০২১ তারিখ বিকেলে সেখানকার এক কর্মকর্তা আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি দেশে থাকব না, রাজনীতি করব না, নিজের পরিবার নিয়ে বিদেশ চলে যাবো’ এই মর্মে একটি মুচলেকা দিলে তারা আমাকে মুক্তি দিতে পারে। আমি সাথে সাথে সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছি, ‘আমি স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমি রাজনীতি করব কী করব না, দেশে থাকবো কি থাকব না সেটা আমার সিদ্ধান্ত। আমি মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পেতে চাই না’। সেই কর্মকর্তা কয়েকবার বললেও আমি আমার বক্তব্যে অটল থাকি। আমি ডিজিএফআই এর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার এ ধরনের নির্লজ্জ মিথ্যাচারের তীব্র নিন্দা জানাই।

ভবিষ্যতে এ ধরনের মিথ্যাচার না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী।