পরিবারের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে ‘সন্ত্রাসীদের’ গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষে কামনা করে কক্সবাজারের এক সংখ্যালঘু পরিবার সংবাদ সম্মেলন করেছে। সংবাদ সম্মেলন থেকে প্রশাসনের কাছে তাদের পরিবারের নিরাপত্তা দাবি করা হয়।আজ কক্সবাজার শহরের এক হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিবারটি এ দাবি করেন।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কক্সবাজার শহরের হাসপাতাল সড়কের বঙ্গপাহাড় এলাকার সোনারাম ধরের তিন ছেলে প্রনব ধর, রতন ধর ও তপন ধর। ২০০৯ সালে সোনারাম ধরের ছোট ছেলে তপন ধর রহস্যজনকভাবে মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুর পর সম্পদ বন্টন নিয়ে বিরোধ গত এক যুগ ধরে থামছে না। দুই ভাই প্রনব ধর ও রতন ধরের মাঝে বিরোধ এখন ব্যাপক আকার ধারন করেছে।সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, তপন ধরের মৃত্যুর পর তার স্ত্রীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। হিন্দু ধর্মতে ওই অবস্থায় স্ত্রী মৃত স্বামীর কোনো সম্পদ না পেলেও রতন ধর জালিয়াতী করে তপন ধরের স্ত্রীকে ওয়ারিশ বানিয়ে ঝিলংজার ৪ গন্ডা জমি রেজেষ্ট্রি নিয়ে নেয়।
একইভাবে ফায়ার সার্ভিস রোডের কাসেম প্লাজার ১ নম্বর নিউমুক্তা জুয়েলার্স -এর ২য় শাখা তপন ধরের দোকান ছিল। সেই দোকান, সেখানে থাকা ১৫০ ভরি স্বর্ণ ও বাধাবন্ধকসহ আরও ২০ লাখ টাকা রতন ধর জোর করে নিয়ে নেয়। ওই স্বর্ণের দোকানটিও বিক্রি করে দেয়।সংবাদ সম্মেলনে প্রনব ধর ও তার স্ত্রী রত্নাধর নিরাপত্বাহীনতার কথা জানিয়ে ‘সন্ত্রাসীদের’ গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এ সময় তারা নিজেদের নিরাপত্তার কথা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা এবং স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, তপন ধরের রহস্যজনক মৃত্যুর পেছনে রতন ধরের ভূমিকা রয়েছে। ২০১৫ সালে সোনারাম দল মৃত্যুবরণ করলে তার দুই সন্তান প্রনব ধর ও রতন ধরের মাঝে বাবার সম্পদ বন্টন নিয়ে বিরোধ বাড়তে থাকে।একপ্রর্যায়ে ২০১১ সালে রতন ধর -এর বড় ভাই প্রনব ধরকে উল্টো মারধর করে জেলে পাঠায়। এরপর থেকে দুই পক্ষের মাঝে বিরোধ তুঙ্গে উঠে। ২০১২ সালে অ্যাড. তপুর চেম্বারে বিরোধ নিস্পত্তির সিদ্ধান্ত হলেও শেষ পর্য়ন্ত তা আর হয়নি।
গত ১১ জানুয়ারি ২০২৫ রতন ধরের সঙ্গে সাগর, নুরুল আলম, হিমেল ধর, রাখেশ হরিজন, বাবুল জলদাশ ও বিপ্লব জলদাশসহ আসামিরা প্রনব ধর ও তার স্ত্রী রত্না ধরসহ পরিবারের লোকজনকে বাড়ি ঘর ছেড়ে দেওয়ার জন্য নানানভাবে হুমকি দিয়ে আসছে।১১ জানুয়ারি এনিয়ে অ্যাড. গোলাম ফারুক কায়ছার -এর কাছে নাশিল করলে সন্ত্রাসীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়। উল্লেখিত ৭/৮ জন সন্ত্রাসী প্রনব ধরের বাড়ির দরজা ভেঙে, প্রনব ধর ও তার স্ত্রী রত্না ধর ও ছেলে-মেয়েকে মারধর করে। ঘরের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। সঙ্গে ঘরের সিসি ক্যামরা ও মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।গত ২৭ জানুয়ারি সাগরের নেতৃত্বে উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা আবারও হুমকি দিয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে দিতে শাসিয়ে যান। এ বিষয়ে প্রনব ধর সদর থানায় একটি অভিযোগ করেন।অভিযোগে জানানো হয়, প্রনব ধর (৪৭) পিতা- মৃত সোনারাম ধর, সাং- বঙ্গপাহাড়, হাসপাতাল রোড, কক্সবাজার পৌরসভা, থানা- কক্সবাজার সদর, জেলা-কক্সবাজার একজন আইন মান্যকারী লোক।থানায় হাজির হয়ে আসামিগণ একদলবদ্ধ সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু, প্রতারক, ডাকাত ও লাঠিয়াল প্রকৃতির সন্ত্রাসী লোক তাদেরকে ঘর বাড়ি থেকে উচ্ছেদের পাঁয়তারা করছে। আসামিগণ দেশের প্রচলিত আইন কানুন কিছুই মানে না।তার বসত বাড়িতে গত ১২ জানুয়ারি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নাম উল্লেখিত আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা আসামিরা লোহার রড, কিরিচ, দা, লোহা কাটার মেশিন, কাটা বন্দুক, কুড়াল ও হাতুড়ি ইত্যাদি অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অনধিকার প্রবেশ করে।
তার বসত বাড়ির গেইট বন্ধ থাকায় আসামিগণ কাটার মেশিন দিয়ে লোহার গেইট কাটিয়া তার বসত বাড়িতে প্রবেশ করে।এ সময় হাতুড়ি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তার মাথায় সজোরে বারি মারলে ঠেকাতে গেলে মাথায় না লেগে বাম হাতে লেগে বাম হাত ভেঙে যায়। তাকে রক্ষা করার জন্য তার স্ত্রী রত্না ধর এগিয়ে আসলে, আসামিরা লোহার রড দিয়ে মারধর করেন।প্রনব ধর আরও বলেন, চিৎকারে তার মেয়ে অর্পণা ধর এগিয়ে আসিলে, লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে।অজ্ঞাতনামা আসামিগণ বাড়ির ৩টি সিসি ক্যামরা ভেঙে ঘরের আসবাবপত্র লুট করে নিয়া যায়।তিনি আরও বলেন, এসব ঘটনায় তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এ সময় তারা প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।