Image description
 

রাজশাহীর অন্য সংসদীয় আসনগুলোর মতো রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনেও আগামী নির্বাচনের জোর হাওয়া বইছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটিতে বিএনপির সর্বাধিক আটজন মনোনয়নপ্রত্যাশী মাঠে নেমেছেন। বিএনপির এসব সম্ভাব্য প্রার্থীর প্রত্যেকের একসময় দলের বিভিন্ন পর্যায়ে পদ-পদবি ছিল। ২০২১ সালে রাজশাহী জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা হলে তারা পদহীন হয়ে পড়েন। তবে ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর সম্ভাব্য এসব প্রার্থী তৃণমূলে ছোটাছুটি শুরু করেছেন। নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে এলাকায় নিজেদের অবস্থানকে পোক্ত করার চেষ্টা করছেন। মূলত আগামী নির্বাচনকে ঘিরেই রাজশাহী-৬ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী এসব নেতার দলীয় ও সাংগঠনিক তৎপরতা বেড়েছে।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য একজন প্রার্থীকে সামনে রেখে দলটির নেতাকর্মীরা এ আসনে ব্যাপক সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় সভা-সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন।

এ আসনে আছেন জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য একজন প্রার্থী। ইসলামী আন্দোলনের একজন প্রার্থীও রাজশাহী-৬ আসনে গণযোগাযোগ শুরু করেছেন। তবে গত সাড়ে ১৫ বছর নিরঙ্কুশ দাপটে থাকা আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে এখনো প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।

দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসনটিতে বিএনপির আলোচিত সম্ভাব্য প্রার্থী হচ্ছেন-রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ। চারঘাট-বাঘা বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে, সারা দেশে বিএনপির যেসব নেতাকর্মী বিগত সরকারের সময়ে সর্বাধিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, বিএনপি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ তাদের অন্যতম। হামলা-মামলায় চাঁদ ব্যাপক নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। দেশের ১২ জেলায় তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি ও সন্ত্রাস দমন আইনে ৮৫টি মামলা হয়। এসব মামলায় তাকে দিনের পর দিন জেলে কাটাতে হয়েছে।

 

নেতাকর্মীরা আরও বলেন, শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও রাজশাহী-৬ আসনের সাবেক সংসদ-সদস্য শাহরিয়ার আলম সাড়ে ১৫ বছর বিএনপি নেতা চাঁদকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে দেননি। হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে তাকে বারবার জেলে ঢুকানো হয়েছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে চাঁদকে মনোনয়ন দিলেও শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন আইনি জটিলতা তৈরি করে তাকে প্রচার-প্রচারণা চালাতে দেওয়া হয়নি। চাঁদ ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত দুই দফায় ৯ বছর চারঘাট উপজেলা পরিষদে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া ছিলেন চারঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি। এ উপজেলার শলুয়া গ্রামে তার বাড়ি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবু সাঈদ চাঁদ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে চারঘাট-বাঘা এলাকায় ব্যাপক দলীয় ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। এ দুই উপজেলায় বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের সংগঠিত করতে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড এলাকায় গিয়ে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদিতে অতিথি হয়ে এলাকাবাসীর সমর্থন চাইছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফার সমর্থনে প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।

আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা চাঁদ বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে আমি সব হারিয়েছি। সারা দেশে আমার বিরুদ্ধে ৮৫টি মামলা হয়েছে। জেল-জুলুম, নির্যাতন করেও আমাকে দমাতে পারেনি স্বৈরাচারী সরকার। আমি জেলে থাকায় বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন আমার গর্ভধারিণী মা ও স্ত্রী। আমি জেলা বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পর নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়েছে। চারঘাট-বাঘায় বিএনপি নেতাকর্মীরা শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলেছেন। দল আমাকে প্রার্থী করলে রেকর্ড পরিমাণ ভোটে বিজয়ী হব।

অন্যদিকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় বিএনপির আরও সাত নেতা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এলাকায় সক্রিয় হচ্ছেন। তাদের অন্যতম জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন। তার দাবি, তিনি নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। কারারুদ্ধ হন একাধিকবার। ছিলেন সিটি কলেজের জিএস। ২০২৪ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও সক্রিয় থেকেছেন। তিনি বাঘার সন্তান ও ত্যাগী নেতা হিসাবে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন।

রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বজলুর রহমানও এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। তিনি আগামী নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানিয়েছেন। জানা যায়, ২০১৮ সালে বজলুর রহমান এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন এবং অপেক্ষমাণ তালিকায় ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্তে আর নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি। বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান মানিকও আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে তার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। এ লক্ষ্যে এলাকার দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। এলাকার বিভিন্ন দলীয় ও সামাজিক কর্মসূচিতে মাঝেমধ্যে অংশ নিচ্ছেন। মানিকের বাড়ি বাঘায়।

রাজশাহী-৬ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় নেতাকর্মী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য দেবাশীষ রায় মধু। এর আগে একাধিকবার তিনি এ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক সদস্য রমেশ দত্তও রাজশাহীর এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে তার অনুসারীদের সূত্রে জানা গেছে। রাজশাহী জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল চারঘাট-বাঘা এলাকায় গণসংযোগ শুরু করেছেন। উজ্জ্বল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলেরও আহ্বায়ক ছিলেন। তিনি জানান, তিনি এ আসনে দলের মনোনয়ন চাইবেন। এ লক্ষ্যে দীর্ঘদিন মাঠে কাজ করছেন। উজ্জ্বল আরও বলেন, শত প্রতিকূল পরিবেশেও সব সময় নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম ও আছি। আমি চারঘাটের সন্তান। আমার প্রতি এলাকার নেতাকর্মীদের বিপুল সমর্থন আছে। তারা আমাকে ভালোবাসেন। এছাড়া রাজশাহী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মাসুদুর রাহাস সজনও মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে নেমেছেন।

অন্যদিকে রাজশাহী-৬ আসনে জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম প্রার্থী জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নাজমুল হক। জানা যায়, জামায়াত দলীয়ভাবে তাকে এ আসনে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অধ্যক্ষ নাজমুল হকের বাড়ি চারঘাট উপজেলার হলিদাগাছি গ্রামে। তবে আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসাবে মাঠে আছেন বাঘা উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা জিন্নাত আলীও। জামায়াতের এ দুই প্রার্থী রাজশাহী-৬ নির্বাচনি এলাকায় বিভিন্ন দলীয়, ধর্মীয় ও সামাজিক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।

এছাড়া রাজশাহী-৬ আসনে ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে মো. সুরুজ্জামান ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শামসুদ্দিন রিন্টু নির্বাচনি এলাকার দুই উপজেলায় বিভিন্ন দলীয় ও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। তারা এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেওয়ার চেষ্টা করছেন। উল্লেখ্য, চারঘাট ও বাঘা উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৬ আসনে ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৪০ হাজার ৫২৭ জন।