Image description

রাজস্ব আয়ের সবচেয়ে বড় খাত মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। ব্যবসায়ী-কর্মকর্তার যোগসাজশ, ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বেশির ভাগ ভ্যাটই আদায় হয় না বলে এটি প্রায় ‘ওপেন সিক্রেট’ বিষয়। কেন্দ্র থেকে প্রান্ত, ছোট থেকে বড়—প্রায় সব প্রতিষ্ঠানই কমবেশি ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে থাকে। বিভিন্ন সময়ে ভ্যাট শাখা, বেসরকারি সংস্থা টিআইবিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানই বিচ্ছিন্নভাবে ভ্যাট নিয়ে জরিপ ও গবেষণা করেছে।

 
এসব জরিপের তথ্য বলছে, কমবেশি ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট দেয় না। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের আওতায় সাড়ে তিন কোটি ব্যবসায়ী তালিকাভুক্ত রয়েছে। অথচ সরকারের খাতায় ভ্যাটের জন্য নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান মাত্র সাড়ে পাঁচ লাখ। তাদেরও সবাই রিটার্ন দেয় না।
 
ডিজিটাইজেশনের অভাবে ভ্যাট ফাঁকির অবারিত সুযোগ। এমন বাস্তবতায় ভ্যাট কর্তৃপক্ষ তাদের ভ্যাটের আওতায় না এনে বছরের পর বছর ভ্যাটের হার বাড়িয়ে চলছে। সম্প্রতি অর্থবছরের মাঝামাঝিতে এসে এমনভাবে ভ্যাট বাড়িয়েছে যে তাতে সব মহল থেকে সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এনবিআরের তথ্য-উপাত্ত, বিভিন্ন জরিপের তথ্য পর্যালোচনা এবং ব্যবসায়ী-কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে ভ্যাটের এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
 

 

দেশের অর্থনীতি এখন কঠিন সংকটময় পরিস্থিতি পার করছে। জিনিসপত্রের লাগামহীন দামে ভোক্তার নাভিশ্বাস চলছে। নতুন করে বিনিয়োগ নেই। পুরনো ব্যবসারও প্রসার থমকে আছে। উচ্চ সুদের হারের প্রভাবে কেউই বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না।

 
ডলারের উচ্চ দরে আমদানি পণ্যের খরচ বেড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির দুর্বলতায় আস্থাহীনতাও কাজ করছে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে। বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁরা কোনো রকমে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন। এর প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আয়ে। অর্থবছরের ছয় মাসেই রাজস্ব ঘাটতি ছাড়িয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকা। ব্যবসা-বাণিজ্যের মন্দার কারণে যেখানে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি, সেখানে নতুন নতুন ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় না এনে আকস্মিক ভ্যাট বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। একে ব্যবসায়ীরা অনেকটা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসিবে অভিহিত করেছেন। তাঁরা জানান, দেশে কোটি কোটি ভ্যাট দেওয়ার উপযোগী ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে অল্প করে ভ্যাট আদায় করলেও রাজস্বের ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। বরং উদ্বৃত্ত হওয়ার কথা। সেদিকে যায়নি এনবিআর। বরং ভ্যাট বাড়িয়ে দিয়ে সহজে রাজস্ব আদায় করার পথে হেঁটেছে। অথচ ঘোষণার পরই প্রতিবাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। চাপের মুখে সরকার ছয়টি পণ্যের ভ্যাট কমিয়েছে। কিন্তু তাতেও প্রতিবাদ থামছে না ব্যবসায়ীদের। তাঁরা মনে করছেন, অটোমেশন করে বেশি প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট আদায়ের পথে যাওয়া উচিত সংস্থাটির। না হলে ব্যবসার মন্দা সময়ে যারা নিয়মিত ভ্যাট দেয় তাদের লোকসান হবে। ভোক্তার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হবে। আর সরকারও কাঙ্ক্ষিত ভ্যাট পাবে না।

 

জানা যায়, ২০২১ সালের মে মাসে এনবিআরের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও সাভারের ২৫টি মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে। এসব মার্কেটের ১৫ হাজার ৪৮২টি প্রতিষ্ঠানের ওপর জরিপ করা হয়। তাতে দেখা যায়, ১২ হাজার ৮৭১টি প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট দেয় না। অর্থাৎ ৮৮ শতাংশ ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট ফাঁকি দেয়। অর্থাৎ রাজস্ব আয়ে ভ্যাট সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হলেও তাদের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত ভ্যাট আদায় করতে পারছে না এনবিআরের ভ্যাট শাখা।

এদিকে ভ্যাট আদায়ে সম্ভাব্য ফাঁকিবাজ প্রতিষ্ঠান ধরতে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অটোমেশন পদ্ধতি চালুর কথা থাকলেও তা চালু না করে ম্যানুয়াল পদ্ধতিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে ফাঁকির ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। আবার রাজস্ব আদায় কমছে। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে ভ্যাট আদায়ে ৬৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আদায় হয়েছে ৫৫ হাজার ১৭৭ কোটি। দেশের ভ্যাট আদায়ের সম্ভাবনার তুলনায় লক্ষ্যমাত্রা কম হলেও শেষ পর্যন্ত এটিও আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন আবার অটোমেশনের আওতায় নিরীক্ষার কথা বলে সেটি চালু না করেই ম্যানুয়াল পদ্ধতি বাতিল করায় ভ্যাট আদায় আরো কমবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ম্যানুয়াল পদ্ধতির সুযোগে ভ্যাট আদায়ের সঙ্গে জড়িত কিছু অসৎ কর্মকর্তা বেশির ভাগ সময়ই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে কিংবা ঘুষ-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সরকারের খাতায় কম ভ্যাট জমা করে। এতে ব্যবসায়ীদেরও লাভ হয়, আবার আদায়কারীদেরও পকেট ভারী হয়। এ ছাড়া ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের না করে তারা তালিকাভুক্তদেরই বেশি বেশি ভ্যাট ধরে। নতুন করে ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় না আনতে পারার কারণেও ভ্যাট আদায় বাড়ছে না।

এফবিসিসিআই সূত্রে জানা যায়, তাদের কাছে নিবন্ধিত ব্যবসায়ী রয়েছেন প্রায় সাড়ে তিন কোটি। এসব ব্যবসায়ীর প্রায় সবারই কোনো না কোনো ছোট কিংবা বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ তাদের বেশির ভাগই ভ্যাট দেয় না। আর এনবিআরের ভ্যাট শাখাও তাদের খুঁজে বের করেনি। সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৪ সালের সর্বশেষ হিসাবে দেশে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক কোটি ১৮ লাখ। তাদেরও বড় অংশ ভ্যাটের তালিকার বাইরে।

এনবিআরের ভ্যাট শাখার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার জানা মতে, গত ছয় মাসে এনবিআরের ভ্যাট শাখা খুব বড় কোনো অভিযান পরিচালনা করেনি। যদি সারা দেশে সম্ভাব্য ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করতে কোনো অভিযান পরিচালনা করা যেত, তাহলে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান পাওয়া যেত।

এনবিআর সূত্রে আরো জানা যায়, এনবিআরের ভ্যাট শাখা নতুন ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান খোঁজার বদলে প্রজ্ঞাপন জারি করে সহজে ভ্যাট আদায়ে বেশি মনোযোগী। সম্প্রতি এনবিআরের ভ্যাট শাখা শতাধিক পণ্যের ওপর বাড়তি ভ্যাট আরোপ করে। সাধারণত বাজেটের সময় ভ্যাট বাড়ানো বা কমানোর নীতিমালা জারি করা হয়। আকস্মিক ভ্যাট আরোপ করা হলে বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয় এবং বিনিয়োগ কৌশল বদলে যায়। সম্প্রতি বাড়তি ভ্যাট আরোপের ফলে বাজারে রীতিমতো নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। সর্বস্তরের ব্যবসায়ী মহলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। ছোটবড় সব উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী গ্রুপ একাট্টা হয়ে যেকোনো মূল্যে ভ্যাটের হার আগের স্তরে বহাল রাখার ব্যাপারে দাবি জানিয়ে আসছে। সম্প্রতি ছয়টি পণ্যের ভ্যাট আগের স্তরে ফিরিয়ে নেওয়া হলেও বেশির ভাগই অপরিবর্তিত। এতে ব্যবসায়ীরা মাঠে নেমেছেন এবং প্রতিদিনই আন্দোলন ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন। সবারই দাবি উঠেছে ভ্যাটের হার না বাড়িয়ে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর।

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরি বাবু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এনবিআর সব সময় শর্টকাট পদ্ধতিতে চলার চেষ্টা করে। এই শর্টকাট অনেক দিন ধরে চলছে। দূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে কাজ করলে দেশে ভ্যাট আদায় হতো। দেশে সাড়ে চার থেকে পাঁচ কোটি ব্যবসায়ী আছে। এর মধ্যে যারা ভ্যাট দেয়, যারা দেয় না এবং যারা নগণ্য পরিমাণে ভ্যাট দেয় এ জন্য মূলত দায়ী ভ্যাট কর্মকর্তারা। তাঁরা কম ভ্যাট দিতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করেন। তাহলে তাঁর লাভ।’

বিগত দেড় দশকের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘গত ১৫-১৬ বছরে রাজস্ব কর্মকর্তারা অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। একজন ধরা খেয়েছে, তাকে দেখলেই সারা দেশের রাজস্ব কর্মকর্তাদের চিত্র পাবেন। সে জন্য সরকারকে অটোমেশনে যেতে হবে। নগদে লেনদেন হলেই সেখানে দুর্নীতি হয়। প্রতিটি উপজেলায় ভ্যাট অফিস আছে। তবে সরকার যে টাকা ভ্যাট পাচ্ছে তা খুবই নগণ্য। উন্নত দেশের কাছ থেকে শিখে অটোমেশন করতে হবে। যে মার্কেটে ভ্যাট মেশিন বসাতে হবে, সেখানকার সব দোকানেই বসাতে হবে। আদমশুমারির মতো করে করশুমারি করতে হবে। এই কাজে সেনাবাহিনীকে যুক্ত করতে হবে। ছাত্ররা দোকানে দোকানে গিয়ে তালিকা করবে কারা ভ্যাটের উপযুক্ত, কারা দেয় আর কারা দেয় না।’

এনবিআরের তথ্য বলছে, একদিকে সংস্থাটি নতুন ভ্যাটদাতা খুঁজে বের করতে পারছে না, অন্যদিকে যারা দেয়, তাদের কাছ থেকেও ঠিকমতো আদায় করতে পারছে না। তাদের অনেকেরই বিপুল অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে ভ্যাট চাওয়া হলে তারা মামলা করে তা আটকে দিচ্ছে। এ রকম হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মামলায় আটকা ভ্যাটের ৩১ হাজার কোটি টাকা। হাইকোর্টের মামলায় জড়িত ভ্যাটের পরিমাণ ২৮ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা। আপিল বিভাগের ১৫৮টি মামলায় এনবিআরের তিন হাজার ২৭৪ কোটি টাকা আটকে আছে। দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যাট এলটিইউর আওতায় ভ্যাট দেয়। এ রকম ১০৯টি প্রতিষ্ঠানের কাছেই আটকা ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে টোব্যাকো কম্পানিতে আড়াই হাজার কোটি টাকা, মোবাইল অপারেটর কম্পানিতে এক হাজার ৭৫ কোটি টাকা, ফার্মাসিউটিক্যালসে ১৪০ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ৫০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বকেয়া পড়ে আছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পেট্রোবাংলার কাছেই ২০ হাজার কোটি টাকা। পেট্রোবাংলা ঠিকই ভ্যাটের টাকা উৎস আদায় করেছে। এই টাকা সংস্থাটি নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা করে রাখলেও ভ্যাটের তহবিলে জমা দিচ্ছে না। এর ফলেই এ বিপুল অঙ্কের ভ্যাট বকেয়া পড়ে রয়েছে। অথচ টাকার অভাবে বাজেট বাস্তবায়ন ঠিকমতো হয় না। তখন আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কাছ থেকে স্বার্থবিরোধী শর্ত মেনে ঋণে টাকা নিতে হচ্ছে। যার ফলে জনগণের ওপর করের বোঝা চাপছে। শুধু যে সরকারি প্রতিষ্ঠানই ভ্যাট বাকি রাখছে, তা-ই নয়; বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও অহরহ ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে এবং বকেয়া রাখছে। সাম্প্রতিক আলোচিত ব্যাবসায়িক গ্রুপ এস আলম গ্রুপেরও বড় অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকি ধরা পড়েছে। এই গ্রুপটিই সরকারকে ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে সাত হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মোট ভ্যাট ফাঁকি প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা।

বাংলালিংকের চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দেশে করের আওতা বাড়ানো উচিত। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের কর বাড়িয়ে দেওয়ার চেয়ে এনবিআরের দেখা উচিত কিভাবে আওতা বাড়ানো যায়। কর বাড়ালেই খরচ বেড়ে যায়। এর ফলে ভোক্তাদের ওপর চাপ পড়ে। তাই করজাল বাড়ানোর ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে হবে।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. তৌফিকুল ইসলাম খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রথমেই ভ্যাট আদায় প্রক্রিয়ার ফাঁকি রোধ করতে হবে। এখানে কী অগ্রগতি হয়েছে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য আসা উচিত। আওতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ফাঁকি প্রক্রিয়াটা যুক্ত আছে। এ ছাড়া প্রত্যক্ষ করের ওপর বেশি জোর দিতে হবে। পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে ভোক্তারা অনেক ক্ষেত্রেই ভ্যাট দিচ্ছেন, কিন্তু সেটা সরকারের কাছে পৌঁছাচ্ছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে।’

ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই নিয়ে কোনো কথা বলতে গেলেই হয়রানির শিকার হতে হবে। এমনকি অটোমেশন নিয়ে বলতে গেলেও হয়রানি হতে হয়। কাস্টমসকে কোনো কথা বলে লাভ হবে না। তারা তাদের কথাই বুঝবে।’

তিনি বলেন, ‘আগে দেশ থেকে টাকা চলে গেছে। বাড়িঘর করেছে। এবার অন্য কিছু করবে। দেশে যত ভালো ভালো শিল্পপ্রতিষ্ঠান দেখছেন, তাদের অত্যাচারে সবাই চলে যাবে। আগামী দিনে দেশে ছেলেমেয়ে বিদেশ থেকে টাকা এনে দেশে বিনিয়োগ করতে আসবে না। রাত শেষ হলেই পলিসি পরিবর্তন হয়ে যায়। জাহাজ শিল্পের জন্য সব ধরনের ট্যাক্স ফ্রি করা হয়েছিল। এখন সব মাল আনার পর বলা হচ্ছে কিছুই ফ্রি না।’

সিমেন্ট আমদানিতে অসংগতি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সিমেন্টে ক্লিংকার আমদানি করি ৪০ ডলারে। কিন্তু কাস্টমস একটা ছুতা ধরে ৬০ ডলারে ট্যাক্স করে। এরপর ৬০ ডলারের ওপর উৎস ভ্যাট নিচ্ছে। এআইটি নিয়ে নিল ১৪০ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে ৭৩ কোটি টাকা ট্যাক্স এলেও বাকি টাকা ফেরত দেয় না।’