Image description
 

বাংলাদেশে থাকা অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিদেশিদের বৈধতা অর্জনের জন্য বেঁধে দেওয়া সময় আগামীকাল ৩১ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। তবে যারা এই সময়ের মধ্যে বৈধ হবেন না, তাদের গ্রেপ্তারসহ শাস্তির আওতায় আনা হবে। জানা গেছে, সরকারের কাছে ১ লাখ ২০ হাজার বিদেশি নাগরিকের তথ্য রয়েছে। বিদেশি এসব নাগরিকের অনেকে নানা অপরাধের সঙ্গে জড়াচ্ছেন বলে        জানা গেছে।

এদিকে গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন-সংক্রান্ত আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, নির্ধারিত সময়ের বেশি কেউ দেশে অবস্থান করলে তাকে জরিমানা দিতে হবে। এই জরিমানা আগের থেকে পাঁচগুণ বাড়ানো হয়েছে। দিনপ্রতি ২০০ টাকার স্থলে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা যেত। সেই আইন উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন প্রতিদিন হিসাব করে জরিমানা দিতে হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত যে নিজ দেশে ফিরতে চায়, সে ফিরতে পারবে। এরপরও যদি কেউ থেকে যায় তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

সূত্র জানায়, ১৬৯টি দেশের ৫০ হাজারের বেশি মানুষ অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, যাদের পাসপোর্ট ও ভিসার মেয়াদ অনেক আগেই উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের প্রায় ২৪ হাজার এবং চীনের ৮ হাজার নাগরিক অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। আর পাকিস্তানের নাগরিক রয়েছেন প্রায় ২ হাজার। কানাডা, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, রাশিয়ার মতো উন্নত দেশের কিছু নাগরিকও অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। অবৈধভাবে অবস্থান করছেন নাইজেরিয়া, ক্যামেরুন, মালি, কঙ্গো, তানজানিয়া, ঘানা, গিনি, উগান্ডা, ইথিওপিয়া, অ্যাঙ্গোলা, পেরু, আলজেরিয়া, চীন, ইউক্রেন ও থাইল্যান্ডের নাগরিকরাও। বিদেশি এসব     নাগরিক ভ্রমণ, ব্যবসা, শিক্ষার্থী, খেলোয়াড় এবং অন অ্যারাইভাল বা পোর্ট এন্ট্রি ভিসায় এই দেশে প্রবেশ করেছেন।

অবৈধ অবস্থানকারীদের একটা বড় অংশ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে তথ্য আছে। আইনি দুর্বলতা ও বিদেশি নাগরিকদের সমন্বিত কোনো তথ্যভান্ডার না থাকায় বিনা বাধায় বাংলাদেশে অবস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন তারা। তবে দেশে বর্তমানে কতজন বিদেশি নাগরিক বৈধ ও অবৈধভাবে অবস্থান করছেন তার হালনাগাদ সঠিক কোনো তথ্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই।

এদিকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থান করা আফ্রিকা মহাদেশের কয়েকটি দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিরিয়াস ক্রাইম ইউনিটকে সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান শেখ বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, ডেটলাইন ধরে কোনো বিশেষ নির্দেশনা নেই। তবে অবৈধ যে কোনো বিষয়কে সামনে রেখে আমরা অভিযান জোরদার করছি।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিদেশিদের বিষয়ে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) কাজ করে। বিমান, নৌ ও স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন হয়ে যেসব বিদেশি বাংলাদেশে আসেন সেই হিসাব তাদের কাছে রয়েছে।

পুলিশ জানায়, বিদেশিদের তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজারের মতো বিদেশি নাগরিকের তথ্য রয়েছে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও ৫০ হাজারের বেশি বিদেশি অবৈধ হয়ে গেছেন।  

জানা গেছে, দেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশিদের অনেকেই মাদক ব্যবসা, উপহারের নামে প্রতারণা, হেরোইন, ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতি, বিভিন্ন দেশের জাল মুদ্রার কারবার, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, সোনা চোরাচালান, অনলাইনে ক্যাসিনো, মানব পাচারসহ সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্রের সঙ্গে জড়িত। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে কর ফাঁকি দিয়ে উপার্জিত অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে নিজের দেশে পাচার করে নিয়ে যান। তবে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক বিদেশি কর্মী কাজ করেন দেশের পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা, হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অনেক বিদেশি কর্মরত। কাজের অনুমতি না থাকলেও বিজনেস ভিসায় এসে অনেকে বেআইনিভাবে দেশের বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি নেন। 

এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে বৈধতা অর্জনের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।