Image description
 

কারাগারে থেকেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাতের চক্রান্ত করছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ বিভিন্ন মন্ত্রী। আদালতে এসে সরকারের বিরুদ্ধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বার্তানুসারে সবাইকে ‘প্রস্তুত’ থাকতে নির্দেশনা দেন সালমান এফ রহমান। অন্যদিকে কারাগার থেকে টিস্যু পেপারে লিখে আইনজীবীর মাধ্যমে ‘গোপন বার্তা’ দেন পলক।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকেন্দ্রিক হত্যা ও হত্যাচেষ্টার বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখাতে সোমবার সকালে সালমান এফ রহমান, জুনাইদ আহমেদ পলকসহ ১০ জনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। বাকিরা হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, দেশটিভির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আরিফ হাসান, সাংবাদিক ফারজানা রূপা, শাকিল আহমেদ ও পল্লবী থানার ১৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মালেক।

এদিন সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট থেকে ১০টা ২২ মিনিট পর্যন্ত ধাপে ধাপে আদালতের হাজতখানা থেকে এই ১০ আসামিকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামানের এজলাসে তোলা হয়। কাঠগড়ায় আসামাত্রই আসামিদের আইনজীবীরা তাদের কাছে চলে আসেন। তখনও বিচারক এজলাসে এসে শুনানি শুরু করেননি।এই সুযোগে সালমান এফ রহমানের কাছে তার আইনজীবী গোলাম মোনতাজা ও মুকুলসহ আরও কয়েকজন হাজির হন। মোনতাজাকে কাছে ডেকে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের কী খবর? এরা কী করতেছে? সরকার ৪০ হাজার শ্রমিকের চাকরি খেয়েছে। ১০ হাজার শ্রমিক মাঠে নামলেই তো হয়। আমি চাইছিলাম কোম্পানিটা চালানো হোক। এখন দেশের যে অবস্থা।’এ সময় সালমান এফ রহমান আইনজীবীদের কাছে দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। তখন তাকে আইনজীবীরা জানান, ‘গতকাল ইবতেদায়ি শিক্ষকদের মারধর করা হয়েছে। রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়েছে। শুনেছি ২ জন মারাও গেছে স্যার।’ এ সময় সালমান এফ রহমান মুচকি হেসে বলেন, ‘নেত্রী (শেখ হাসিনা) কী বার্তা দিয়েছেন।’ এ সময় আইনজীবীরা কোনো উত্তর না দিলেও তিনি পুনরায় বলেন, ‘নেত্রীর বার্তা অনুযায়ী সবাইকে রেডি থাকতে বলেন।’ এ সময় বিভিন্ন আইনজীবী, সাংবাদিক, পুলিশ, বিচারপ্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। তখনো বিচারক এজলাসে না থাকায় শুনানি শুরু হয়নি।

এ সময় একজন সাংবাদিক সালমান এফ রহমানের কাছে কারাগারে কেমন আছেন বলে জানতে চান। জবাবে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকরা যে লেখে- আমাকে হটপটে খাবার দেয়। এসব মিথ্যা। ঠিক সময়ে খাবার দেয় না। রাতের খাবার বিকাল ৪টায় দেয়। এছাড়া কুরআন শরিফ দেয় না। জায়নামাজও দেয় না। ফোনে পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেয় না অনেক আগে থেকেই। আমি ফ্লোরে ঘুমাই।’সে সময় সেখানে উপস্থিত এক আইনজীবী আল ইমরান (মুকুল) যুগান্তরকে বলেন, ‘উনি বলছিলেন বেক্সিমকোর ৪০ হাজার শ্রমিকের কাজ বন্ধ। বিভিন্ন ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দিচ্ছে। তিনি বলছিলেন, আমার কোম্পানি বন্ধ করলে আমি করব, সরকার কেন করবে। এসব নিয়ে বিভিন্ন কথা বলছিলেন।’ নেত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রস্তুত থাকার বিষয়ে কী বার্তা দিচ্ছিলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ সময় আমি ছিলাম না।’টিস্যু পেপারে পলকের বার্তা : শুনানি শুরু হওয়ার আগে জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছে ছুটে যান তার আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি ও তরিকুল ইসলাম। এ সময় কুশল বিনিময়ের সময় কৌশলে আইনজীবী তরিকুল ইসলামের হাতে লেখা একটি টিস্যু পেপার গুঁজে দেন। এ সময় বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশ সদস্যরা বলেন, টিস্যু পেপার বা কাগজে কোনো বার্তা দেওয়া নিষেধ। তখন এই আইনজীবী টিস্যু পেপারটি লুকিয়ে ফেলেন। 

পরে জানতে চাইলে টিস্যু পেপার দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন আইনজীবী তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘টিস্যু পেপার দেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা ওকালতনামায় পলকের স্বাক্ষরিত নিয়েছি শুধু।’এছাড়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পলক তার আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। এ সময় তার আইনজীবীরাও দেশের পরিস্থিতি যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা কলেজের মারামারির ঘটনা তুলে ধরেন। এরপর আইনজীবীদের সঙ্গে পলকের চলে নানা কথোপকথন। তিনি আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখিকে বলেন, কারাগার থেকে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। অন্যদের কথা বলতে দিলেও নিরাপত্তার অজুহাতে তাকে দেওয়া হচ্ছে না। তাকে যেন যে কোনো শর্তে কথা বলতে দেওয়া হয় এজন্য আইনজীবীকে আদালতে বলতে বলেন তিনি। এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী যুগান্তরকে বলেন, এর আগে দীপু মনিকে টিস্যু পেপারে চিঠি লেখার ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন পুলিশের বিষয়ে তদন্তও করা হচ্ছে। আজ (সোমবার) পলকের টিস্যু পেপার দেওয়ার ঘটনা জানি না। আইনজীবীরা আসামিদের ওকালতনামায় স্বাক্ষর করতে গেলে অনেক কথাই বলে। এগুলো তো ঠেকানো যায় না। আসামি-আইনজীবীরা সবাই তো রাজনীতিক। তবে আদালতে এসব চিঠি বা রাজনৈতিক বার্তা আদান-প্রদান উচিত নয়।’

এদিকে হাসানুল হক ইনু ও রাশেদ খান মেননকে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। এ সময় মেননকে তার এক আইনজীবী জানান, ‘গতকাল হাইকোর্টে আপনার চারটা মামলায় জামিন চাওয়া হয়েছে। কিন্তু সবগুলো রিজেক্ট করা হয়েছে।’ এরপর মেনন আইনজীবীকে বলেন, ‘আপনারা হাইকোর্টে গেছেন কেন?’ এরপর মেনন আরও বলেন, ‘আমার তো ১৭-১৮টা মামলা হয়ে গেছে মনে হয়। তখন আইনজীবীরা মেননকে জানান, ২১টা মামলা স্যার। তখনই মেননের ঘাড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে থাকা হাসানুল হক ইনু রসিকতা করে বলেন, আমার তো ৪০টা পার হয়েছে। আমার নামে ৮০টা না হলে হয় নাকি। পরক্ষণে মেনন আইনজীবীদের বলেন, ‘পত্রিকায় তো আমাদের কোনো খবর দেখি না।’ তখন এক আইনজীবী উত্তরে বলেন, ‘সব কন্ট্রোল করা হচ্ছে স্যার।’

স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে চাইলেন রূপা : এদিকে স্বামী-সন্তান নিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে চান বলে আদালতে আকুতি জানিয়েছেন একাত্তর টিভির প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রূপা। মিরপুর থানার এক হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদনের শুনানিতে আদালতকে এসব কথা বলেন তিনি। এদিন সাংবাদিক দম্পতির গ্রেফতার দেখানোর শুনানি শুরু হলে ফারজানা রূপা আদালতের কাছে কথা বলার অনুমতি চান। এ সময় বিচারক তাকে আইনের ভেতরে থেকে কথা বলার অনুমতি দেন। অনুমতি পেয়ে রূপা কাঠগড়ার সামনের দিকে এসে বলেন, ‘আমার ছোট্ট শিশু সন্তান আছে। আমি আর আমার স্বামী দুজনই কারাগারে। ৬ মাস হয়ে গেছে। আমাকে জামিন দিন। আমরা স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে চাই।’ শুনানি শেষে আদালত রূপা ও শাকিলের আবেদন নামঞ্জুর করে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন।এদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি পেয়েছে পুলিশ।