Image description

বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেছেন, সত্যিকার অর্থে ৫ তারিখের (আগস্ট) পর সারাদেশেই হামলা হয়েছে, সেই হামলাটা ছিল টোটালিই পলিটিক্যাল। বিশ্ববিখ্যাত ক্রিকেটার মাশরাফির বাড়ি পুড়েছে। কারণটা কি তারা পলিটিক্যাল একটি দলের সাথে যুক্ত ছিল ফ্যাসিবাদের সাথে।

‘‘এই ফ্যাসিবাদের সাথে কিছু হিন্দু নেতাও জড়িত ছিল। স্বাভাবিকভাবে তাদের বাড়িতেও হামলা হয়েছে, তাদের বাড়িতে কিছু পুড়েছে, অনেক ক্ষতি হয়েছে। আবার কিছু নিরীহ হিন্দু বাড়িতে হামলা হয়েছে যেগুলো হয়েছে জমিজামা নিয়ে বিরোধ এলাকায় একে অপরের সাথে শত্রুতার জেরে’’ বলেন তিনি।

সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাবের সহাকারী সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশকে দেয়া একান্ত সাক্ষাতকারে গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক এসব কথা বলেন। সাক্ষাতকারে তিনি আরও বলেন, আমরা দেখলাম ভৈরবে ইসকন মন্দিরে হামলা হয়েছে এবং ভিডিও ফুটেজে দেখে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। বাস্তবিক অর্থে এই সময়ে সরকার অত্যন্ত সচেতন।

বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব বলেন, ৫ তারিখের ঘটনার পরে বাংলাদেশের পুলিশ নাই কোনো কিছু নাই। সমস্ত প্রশাসন নাই। সেই অবস্থায় ৬ তারিখ সকালে আমি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গিয়ে দেখলাম মাদরাসার ছাত্ররা রাত জেগে মন্দির পাহারা দিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনের ছেলেরা কিছু বিএনপির নেতারা এক দুইদিন না দীর্ঘদিন ধরে পাহারা দিয়েছে।
‘‘আমাদের নিজেদের মন্দিরে গিয়েও একঘণ্টা বসে থেকে আর থাকতে ভালো লাগে না। কিন্তু আমরা দেখেছি রাতের পর রাত দিনের পর দিন তারা এই মন্দিরগুলো পাহারা দিয়েছে। সেজন্য বাংলাদেশের হিন্দু সমাজ মাদরাসার ছাত্র ও আলেম সমাজের প্রতি কৃতজ্ঞ’’।সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিয়ে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অতীত ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে গোবিন্দ চন্দ্র বলেন, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী মতিউর রহমান রেন্টু বলেছেন, ১৯৯২ সালে ভারতের বাবরী মসজিদকে ঘিরে যখন এই ঘটনা ঘটছিল তখন শেখ হাসিনা তাকে ডেকে নিয়ে বলেছে, সারাদেশে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা লাগিয়ে দাও। উনি একটু বার্গেনিং করেছিলেন।

‘‘তিনি বলেছেন, এরপর আমি ৫ লাখ টাকা নিয়ে প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিববাড়ি মন্দির, ঢাকেশ্বরী মন্দির, পাশেই রামকৃষ্ণ মিশনসহ ঢাকার প্রত্যেকটি মন্দিরে নিজে থেকে টাকা দিয়ে সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ দিয়ে আগুন ধরিয়েছি। সারা বাংলাদেশে আগুন ধরিয়েছি। কিন্তু দায় পড়েছে এদেশের আলেম সমাজের ঘাড়ে’’ বলেন গোবিন্দ চন্দ্র।বিগত অ্যাওয়ামী ফ্যাস্টিস্ট আমলে আলেম সমাজকে মৌলবাদী বানানোর জন্য যা যা করার তাই করা হয়েছে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, গত ১৫ বছরে দেখেছি নাসিরনগর, অভয়নগর, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, খুলনার শেয়ালী, রংপুরের পীরগঞ্জ-ঠাঁকুরপাড়া- সমস্ত বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে হামলা যারা করেছে, এর পেছনে ইন্ধনদাতা অর্থদাতা সহ সমস্ত কিছু করেছে আওয়ামী লীগ। আর দায় পড়েছে আলেম সমাজের ওপর।‘‘যে কারণে আলেমসমাজ মনে করেছে, আবারও তো আমাদের ওপর দায় পড়বে। তারাও সচেতন ছিল। একই সঙ্গে আমরা তাদের কাছ থেকে এই সার্ভিস পেয়ে নিজেদেরকে ধন্য মনে করি। আমরা তাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ’’।

বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ উল্লেখ করে বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব বলেন, ছোটবেলাতে আমাদের দাঁতমাজা শিখেয়েছে মুসলিমরা। আমরা তাদেরকে ডেকেছি চাচী, কাকী, জেঠী আমাদের মত করে। আবার মুসলিমরাও বৌদী, কাকা, জেঠা, দাদা বলেই সম্বোধন করে। বাংলাদেশের হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে হাজার বছরের সম্প্রীতি আছে। সামগ্রীকভাবে এই দেশের হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। এযাবতকালের মধ্যে যা কিছু ঘটেছে তার প্রত্যেকটি রাজনৈতিক ইন্ধন।

 

https://www.youtube.com/watch?v=-vcvIBtX8do