Image description

বিরল রাষ্ট্রীয় সম্মান ও মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়ে স্বামী শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। স্বজনদের সঙ্গে নিয়ে মরহুমের ছেলে তারেক রহমান মাকে কবরে শায়িত করেন। রাষ্ট্রীয় সম্মানের অংশ হিসেবে সশস্ত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি। দাফনের আগে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা, মানিক মিয়া এভিনিউ ও আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে হয় বেগম জিয়ার ঐতিহাসিক জানাজা। এতে লাখ লাখ  মানুষ অংশ নেন। শোক আর শ্রদ্ধায় আপসহীন এই নেত্রীকে শেষ বিদায় জানান কোটি মানুষ। 

বিপুল মানুষের অংশগ্রহণে জানাজার পর সংসদ ভবন থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় পতাকায় মোড়া লাশবাহী গাড়িতে করে খালেদা জিয়ার মরদেহ জিয়া উদ্যানে নেয়া হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার কিছু পর বিশেষ একটি বাহনে করে মরদেহ বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও তার স্বামী জিয়াউর রহমানের সমাধির কাছে নেয়া হয়। সমাধির কাছাকাছি নেয়ার পর খালেদা জিয়ার মরদেহবাহী কফিন কাঁধে নিয়ে যান সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা। দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর জানাজা এবং দাফন কার্যে অংশ নেয়া সবার প্রতি তারেক রহমানকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে দেখা যায়। এর আগে সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানে তারেক রহমানের বাসায় নেয়া হয় খালেদা জিয়ার মরদেহ। সেখানে পরিবারের সদস্যরা শেষবারের মতো বিদায় জানান তাকে। সেখান থেকে কড়া নিরাপত্তা ও বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা কনভয় করে জাতীয় পতাকামোড়া লাশবাহী গাড়ি নিয়ে যান সংসদ ভবন এলাকায়। 

এভারকেয়ার হাসপাতালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়াকে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার। তার নিরাপত্তার স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) দেয়া হয়। ওই সময় থেকেই খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন এসএসএফ।  এ ছাড়া হাসপাতালে ছিল কঠোর নিরাপত্তা।

দাফনের প্রক্রিয়া চলার সময় তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, ছোট ভাই আরাফাত রহমানের স্ত্রী শর্মিলা রহমান, তার বড় মেয়ে জাহিয়া রহমান, ছোট মেয়ে জাফিরা রহমানসহ পরিবারের সদস্যরাসহ বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। দাফনের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও ব্যবস্থাপনায়। বেগম খালেদা জিয়াকে দাফনের পর প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে সম্মান জানানো হয়। এরপর তার সমাধিতে ফুল দিয়ে তিন বাহিনীর পক্ষ থেকে বাহিনী প্রধানরা এবং বিএনপি’র পক্ষ থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।  
বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা ও শেষ বিদায়ে অংশ নিতে গতকাল সকাল থেকেই ঢল নামে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের। সারা দেশের নানাপ্রাপ্ত থেকে ছুটে আসে লাখ লাখ মানুুষ। দুপুর গড়াতে না গড়াতেই মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে জানাজার ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়ে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। বেলা ৩টা ২ মিনিটে খালেদা জিয়ার জানাজা শুরু হয়। বেলা ৩টা বেজে ৫ মিনিটে জানাজা সম্পন্ন হয়।

এই মানিক মিয়া এভিনিউতেই ১৯৮১ সালের ২রা জুন খালেদা জিয়ার স্বামী তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক জানাজা হয়েছিল। পরে তাকে সমাহিত করা হয় চন্দ্রিমা উদ্যানে, যার বর্তমান নাম জিয়া উদ্যান। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমান ছিলেন ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার এবং জেড ফোর্সের অধিনায়ক। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য স্বাধীনতার পর তাকে বীর-উত্তম খেতাবে ভূষিত করা হয়। পরে নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে তিনি ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছান। তিনি রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্টগ্রামে একটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে শহীদ হন।
জিয়ার মৃত্যুর পর বিএনপি’র হাল ধরেন তার স্ত্রী খালেদা জিয়া, তখন তিনি নিতান্তই একজন গৃহবধূ। তিনি ১৯৮৪ সালের আগস্টে দলের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন, আমৃত্যু তিনি সে দায়িত্বে ছিলেন।