কালকে আব্বাকে দুষ্টামি করে জিজ্ঞেস করছিলাম, আব্বা তোমার ম্যাডামের জানাজায় যাবে না? বাসায় আম্মাসহ আমরা আব্বার সাথে মজা করতাম জিয়ার সৈনিক বলে, কারণ আব্বা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় বগুড়া ক্যান্টমেন্টে চাকুরিরত ছিলেন, জিয়াউর রহমানকে তিনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন, তার আদর্শিক মতাদর্শ নিয়ে অনেক কথা বলতেন আব্বা, মেনেও চলতেন তা।
আমাকে অবাক করে আমার সত্তুরোর্ধ বাবা বলেন, হ্যাঁ যাব। আমি বললাম, এ মানুষের মধ্যে যাবে কি ভাবে? বাবা বললেন, ‘আপোষহীন নেত্রীর জানাজা। ওখানে যেতেই হবে। মানিকমিয়া এভিনিউ পাঁচ-সাত কিলোমিটার, ওটা আমি হেটেই চলে যাব।
আমরা যখন সৌদি কলোনিতে থাকতাম, খালেদা জিয়া তখন প্রধানমন্ত্রী। মাঝেমধ্যেই কোচিংয়ে যাওয়ার সময় খালেদা জিয়াকে দেখতে পেতাম, উনি উনার মইনুল রোডের বাসা থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। অবাক করার বিষয়, প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন কিন্তু রাস্তা দিয়ে তার প্রোটোকলবিষয়ক কারণে সাধারণ জনগণকে সরিয়ে দিতে দেখি নাই! ফুটপাতের পাশে দিয়েই হালকা গতিতে গাড়ি যাচ্ছে, গাড়ির গ্লাস নামানো, আমি দেখছি উনি হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছেন। উনি যে দেখতে কি সুন্দর ছিলেন মাশাল্লাহ, হালকা রঙের শাড়ির সাথে মুক্তার গহনা, মুখে একটা স্মিত হাসি।
এবারে তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসার পর সবচেয়ে ভাল যে কাজটি করতে দেখেছি তা হল তিনি কোন অভিযোগ করেননি। কোন দলের বিরুদ্ধে কোন বক্তব্য দেননি। আজকে যখন নজরুল ইসলাম খান ঘোষণা করলেন, এখন পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখবেন মরহুমা খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান, তারেক রহমান বক্তব্য শুরু করলেন, ‘আসসালামুআলাইকুম, আমি মরহুমা খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান। আমার মা যদি কারো কাছ থেকে কোন ঋণ নিয়ে থাকেন তাহলে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন, আমি পরিশোধের ব্যবস্থা করব। আমার মায়ের কথায় এবং আচরণে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে তার পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আপনারা আল্লাহর ওয়াস্তে উনাকে ক্ষমা করে দিবেন। উনার জন্য দোয়া করবেন। আসসালামু আলাইকুম।’
দ্যাটস ইট। ৫০-৬০ সেকেন্ডের মধ্যে বক্তব্য শেষ। ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী না, কোন বিশেষণ না, কিচ্ছু না। মনে হল অতি সাধারণ একজন মানুষের জানাজা হচ্ছে। প্রায় কোটি মানুষ উপস্থিত। কারো সামনে কোন ইমোশনাল ড্রামা করলেন না, নিজেকে ভিক্টিম হিসেবে তুলে ধরার কোন চেষ্টাই করলেন না। আপনারা লাস্ট এক বছর তারেক রহমানের কথাগুলো জাস্ট নোটিশ কইরেন। কোন ব্ল্যাবার নাই, নন-সেন্স স্টেটমেন্ট নাই। সিম্পলি টু দ্যা পয়েন্ট। তারেক রহমানের মা বেগম খালেদা জিয়া পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ রেখে কথা বলার যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন, তারেক রহমান উনার রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। নিজে সেটা প্র্যাকটিস করছেন। কাজটা সহজ না, কিন্তু উনি নিজে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। উনার জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম বক্তৃতাতেও সেই প্র্যাকটিস থেকে সরলেন না।