Image description
 

বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জানাজায় জনসমুদ্রের মধ্যে ছিলেন গাইবান্ধা থেকে আসা তাসলিমা বেগম। তাঁকে পাওয়া গেল ইন্দিরা রোড এলাকায়। জানতে চাইলে বললেন, ‘ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) ভালোবাসার টানেই জানাজায় আসছি। এলাকায় থাকতে পারি নাই।’

তাসলিমা একা আসেননি। তাঁর সঙ্গে গাইবান্ধা থেকে এসেছিলেন আরও তিন নারী। তবে দুজন ভিড়ের মধ্যে দল ছাড়া হয়ে যান।

খালেদা জিয়ার জানাজায় তাসলিমাদের মতো অনেক নারী এসেছিলেন। তাঁরা যাতে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ পরিবেশে জানাজায় অংশ নিতে পারেন, সে জন্য জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা ছিল বলে জানানো হয়েছিল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে। তবে অনেক নারী জনতার ভিড়ে শেষ পর্যন্ত জানাজায় নারীদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত যেতেই পারেননি। এ নিয়ে এই নারীদের আফসোসও ছিল না।

গাইবান্ধা থেকে আসা তাসলিমা ও খোদেজা বেগম জানালেন, তাঁরা সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার মাঠের এক পাশে ছিলেন।

খালেদা জিয়ার জানাজা শেষে আজ বুধবার তাঁর মরদেহ জিয়া উদ্যানে তাঁর স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হয়। তাঁর জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই সংসদ ভবন এলাকায় দলে দলে ভিড় করতে শুরু করে মানুষ। দুপুর নাগাদ ভিড় এত বেড়ে যায় যে মানুষ আর জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা ও মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এলাকায় যেতে পারেনি। আশপাশের বহুদূর পর্যন্ত এলাকার সড়ক, অলিগলি, মেট্রোস্টেশন, বাড়ির ছাদ—যে যেখানে জায়গা পেয়েছেন, দাঁড়িয়ে জানাজায় অংশ নিয়েছেন।

নারীদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয় ছিলেন খালেদা জিয়া। ভোটের সমীকরণও বলছে, নারীদের বিপুল ভোটই তাঁকে তিনবার প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে।
—শাহীনুর নার্গিস, জানাজায় অংশ নেওয়া নারী

গাজীপুরের কালীগঞ্জ থেকে এসেছিলেন খোরশেদ আলম ও জান্নাতুল উপমা দম্পতি। এত দূর থেকে এসেছেন, এটুকু বলতেই জান্নাতুল উপমা বললেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর জানাজায় আসব না?’

মানুষের ভিড় এত বেশি ছিল যে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ ছিল না। চলাচলের জায়গা করে দেওয়ার অনুরোধ আসছিল। কেউ কেউ বলছিলেন, ভেতরের দিকে না যেতে। কারণ, মানুষের চাপ অনেক বেশি।

 

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শাহীনুর নার্গিসও জানাজায় নারীদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরাই মনে হয় শেষ প্রজন্ম, যাঁরা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সরাসরি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।’ তিনি বলেন, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে বিপুল জনপ্রিয় ছিলেন খালেদা জিয়া। ভোটের সমীকরণও বলছে, নারীদের বিপুল ভোটই তাঁকে তিনবার প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে।

শাহীনুর নার্গিস বলেন, খালেদা জিয়া দেশের মানুষকে ঐক্যের পতাকাতলে নিয়ে আসতে পেরেছিলেন। এ কারণেই মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁর জানাজায় এসেছে।

খালেদা জিয়ার জানাজায় নারীদের অংশগ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা নির্দিষ্ট স্থানে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ ও বিশিষ্ট নারীরা অংশ নেন।
খালেদা জিয়ার জানাজায় নারীদের অংশগ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা নির্দিষ্ট স্থানে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ ও বিশিষ্ট নারীরা অংশ নেন।ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, খালেদা জিয়ার জানাজায় নারীদের অংশগ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা নির্দিষ্ট স্থানে খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, উপদেষ্টা পরিষদ ও বিশিষ্ট নারীরা অংশ নেন। জানাজায় অংশ নেওয়া নারীদের মধ্যে ছিলেন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও মেয়ে জাইমা রহমান, আরেক ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান ও তাঁর মেয়ে জাহিয়া রহমান ও জাফিয়া রহমান। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ অন্যরা জানাজায় অংশ নেন।

মালিবাগ থেকে ছেলে হুজাইফাকে নিয়ে এসেছিলেন আতিকুর রহমান
মালিবাগ থেকে ছেলে হুজাইফাকে নিয়ে এসেছিলেন আতিকুর রহমানছবি: প্রথম আলো

শুধু নারীরা নন, অনেকে সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নিতে এসেছিলেন। মালিবাগের নিউ রং রাজ দোকানের মালিক মো. আতিকুর রহমান ছয় বছর বয়সী ছেলে হুজাইফাকে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেন, ছেলে সকাল থেকেই পায়জামা পাঞ্জাবি পরে তৈরি। তিনি ছেলেকে নিয়ে প্রথমে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর কাছে যান। তবে ভিড়ে ছেলের বেশি কষ্ট হবে, সে চিন্তায় সেখান থেকে চলে আসেন।

ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের কাছে কথা হয় আতিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছেলে আসতে চেয়েছে, তাই তাকে নিয়ে এলাম। ছেলে ছোট হলেও এ স্মৃতি তার থাকবে।