Image description
 

তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং পাঁচবারের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ফেনীর মেয়ে খালেদা জিয়া। ফুলগাজী উপজেলায় দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামে মজুমদার বাড়িতে তার জন্ম। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায়ও নিয়মিত পৈতৃক বাড়িতে আসতেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন। যদিও সর্বশেষ ২০০৮ সালের পর আর আসা হয়নি বেগম জিয়ার।

 

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনী ও প্রটোকল থাকায় তার কাছে যাওয়া একজন প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকজনের জন্য স্বপ্নের মত ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়া ছিলেন সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম যে সময়টুকু তিনি বাড়িতে অবস্থান করতেন বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী এসএসএফ, পুলিশসহ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীসহ নানা নিরাপত্তা বাহিনী ঘিরে রাখতেন খালেদা জিয়ার বাড়ি ও বাড়ির আশপাশ। কিন্তু তাতে কি তিনি নিরাপত্তা বেষ্টনীর দায়িত্ব নিয়োজিতদের সরিয়ে তার প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকজনকে কাছে ডেকে নিয়ে কথা বলতেন। শারীরিক পারিবারিক অবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয় খোঁজখবর নিতেন। এলাকার সমস্যা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কথা বলতেন।

 

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আর ইহলোকে নেই। তবে তার পৈতৃক বাড়ির লোকজনকে তার স্মৃতির ধারণ করে বেঁচে থাকতে হবে মন খুলে এলাকার সমস্যা সমাধানের জন্য বলতে পারবেন না বেগম জিয়াকে এমনটাই বলছেন দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দারা।

 

খালেদা জিয়ার পৈতৃক বাড়ির সামনের দক্ষিণ শ্রীপুর জামে মসজিদের সাবেক খতিব ও ইস্কান্দারিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক মো. জামাল উদ্দিন খন্দকার বলেন, ‘খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় বাড়িতে আসার পর নিরাপত্তা বেষ্টনী কারণে কেউ কাছে ঘেষতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে তিনি নিরাপত্তা বেষ্টনী সদস্যদেরকে সড়িয়ে তার গ্রামের লোকজনকে কাছে ডেকে নিয়ে যান। এরপর হেঁটে হেঁটে প্রত্যেক জনের কাছে গিয়ে তাদের সাথে কথা বলেছেন এবং এলাকার বিষয় খোঁজখবর নেন। খালেদা জিয়া এলাকার মুরুব্বিদেরকে সালাম দিয়ে কথা বলেছেন এবং শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন।’

প্রতিবেশী মনোআরা আক্তার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া যখন বাড়িতে আসতেন তখন নিরাপত্তা খুবই কঠোর ছিল দূর থেকে উঁকি মেরে তাকে দেখার চেষ্টা করতাম। এরপর তিনি প্রতিবেশী ও গ্রামের লোকজনকে কাছে ডেকে নিয়ে উঠানে বসিয়ে সামনাসামনি কথা বলতেন। বিষয়টি অনেক বড় বড় নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বড় বড় কর্মকর্তারা তাকিয়ে থাকতেন।’

 

ফুলগাজী উপজেলা যুবদলের যুগ্ন আহবায়ক ইসমাইল ভূইয়া টিপু তার প্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে তাঁর পৈতৃক বাড়িতে ছুটে যান। সেখানে টিপু  কান্নায় ভেঙে পড়েন। টিপু বলেন, আমার মমতাময়ী মা খালেদা জিয়া বন্যার সময় একবার বাড়িতে এসেছিলেন কিন্তু আমি এস.এস এফ এবং পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে  বাড়িতে ঢুকতে পারছিলামনা। বিষয়টি বেগম জিয়া দূর থেকে দেখতে পান এরপর নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য দিয়ে আমাকে কাছে ডেকে নিয়ে যান। আমি দীর্ঘ  ৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে কথা বলেছিলাম। তিনি আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন এটি সারা জীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে।

এই বাড়িতে খালেদা জিয়ার অসংখ্য স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। ঘরের ভেতরে বসার চেয়ার, বিশ্রাম নেওয়ার ছোট্ট খাঁট, খাবারের টেবিল— সবকিছুতেই যেন লেগে আছে তিনবারের প্রধানমন্ত্রীর হাতের ছোঁয়া।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্র জানায়, ২০০৮ সালেও ফেনীর ফুলগাজীতে বাবার বাড়িতে এসে দাদা সালামত আলী মজুমদারের কবর জিয়ারত করে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেন খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে আজ সেই বাড়িতেই নেমে এসেছে রাজ্যের নীরবতা। শোকে মুহ্যমান বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা।

বেগম জিয়ার চাচাতো ভাই শামীম হোসেন মজুমদার বলেন, ‌‘বাড়িতে এলে তিনি বড়দেরকে যেমন শ্রদ্ধা করতেন, তেমনি ছোটদেরকে অনেক বেশি আদর করতেন। তাকে হারিয়ে দেশ জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সে ক্ষতি কখনো পোষাবে না।’

নিজ পৈতৃক নিবাসে জনসাধারণের জন্য বেগম জিয়া নির্মাণ করেছেন মাদরাসা, মসজিদ-স্কুল-কলেজসহ বহু স্থাপনা। বেগম জিয়ার মৃত্যুতে ফুলগাজীসহ ফেনী জেলাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

খালেদা জিয়ার পারিবারিক নাম খালেদা খানম পুতুল। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট দিনাজপুরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার দাদা সালামত আলী, নানা জলপাইগুড়ির তোয়াবুর রহমান। বাবা ইস্কান্দার মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়ায় তার জন্ম। আদি পৈতৃক নিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ি।

খালেদা জিয়া পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে ভর্তি হন। এরপর দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। একই বছর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এরপর থেকে তিনি খালেদা জিয়া বা বেগম খালেদা জিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি স্বামীর সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানে বসবাস শুরুর আগে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াশোনা করেন।

১৯৬০ সালের আগস্টে যখন জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিয়ে হয়, তখন জিয়াউর রহমান ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা হিসেবে তখন দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন

খালেদা জিয়া ফেনী-১ আসন থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। তার পৈতৃক বাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এই আসন থেকে খালেদা জিয়ার পক্ষে সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল।