হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক—উভয়ই গুরুতর স্বাস্থ্যগত অবস্থা, যা ধমনীতে (রক্তনালিতে) বাধা সৃষ্টি হলে ঘটে। হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে হৃদপিণ্ডে, আর স্ট্রোকের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ কমে যায়। দ্রুত চিকিৎসা না করলে উভয় অবস্থাই আক্রান্ত অঙ্গের স্থায়ী ক্ষতি ঘটাতে পারে এবং জীবন-হুমকির কারণ হতে পারে।
হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের পার্থক্য
হার্ট অ্যাটাক হৃদপিণ্ডকে প্রভাবিত করে, আর স্ট্রোক মস্তিষ্ককে।
হার্ট অ্যাটাকে করোনারি ধমনীর ব্লকেজের কারণে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত হৃদপিণ্ডের পেশীতে পৌঁছাতে বাধা দেয়। এতে হৃদপিণ্ডের পেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তা কার্যকরভাবে রক্ত পাম্প করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। স্ট্রোক ঘটে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হলে। ইস্কেমিক স্ট্রোকে রক্ত জমাট বাঁধে এবং ধমনী ব্লক হয়; হেমোরেজিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে রক্তপাত হয়।
দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
হার্ট অ্যাটাক দ্রুত চিকিৎসা না হলে হৃদপিণ্ডের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে, পেশী দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং হৃদযন্ত্রের ব্যর্থতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া অ্যারিথমিয়া (অনিয়মিত হৃদস্পন্দন) হতে পারে, যা হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের কারণ হতে পারে।
স্ট্রোকের ফলে হঠাৎ পক্ষাঘাত বা দুর্বলতা দেখা দিতে পারে, প্রায়ই শরীরের একপাশে। হাঁটাচলা, দৈনন্দিন কাজ বা কথা বলা কঠিন হয়ে যায়।
কিছু ক্ষেত্রে স্মৃতি, সমস্যা সমাধান এবং চিন্তাভাবনায় দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা দেখা দিতে পারে।
রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা
হার্ট অ্যাটাক: ইলেক্ট্রোকার্ডিওগ্রাম, ট্রান্সথোরাসিক ইকোকার্ডিওগ্রাম, বুকের এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষা, করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাফি, স্ট্রেস টেস্ট।
স্ট্রোক: কম্পিউটেড টোমোগ্রাফি স্ক্যান, ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং, রক্ত পরীক্ষা।
উভয়ের মিল
হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকির কারণ অনেকটাই একই—উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল, ধূমপান, ডায়াবেটিস, স্থূলতা এবং পারিবারিক ইতিহাস। জীবনযাত্রার অভ্যাস যেমন সীমিত শারীরিক কার্যকলাপ, বেশি চর্বিযুক্ত খাবার বা অতিরিক্ত অ্যালকোহলও ঝুঁকি বাড়ায়।
প্রতিরোধ কৌশল
১। পুষ্টিকর খাবার খান: ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য, চর্বিহীন প্রোটিন।
২। নিয়মিত ব্যায়াম করুন, যা হৃদপিণ্ড ও রক্তনালী সুস্থ রাখে।
৩। ধূমপান ত্যাগ।
৪। চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন: ধ্যান, শিথিলকরণ ও সামাজিক সমর্থনের মাধ্যমে।
৫। উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক যেকোনো মুহূর্তে জীবন-হুমকির কারণ হতে পারে। বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, অস্বাভাবিক ক্লান্তি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সঠিক রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ এবং স্নায়ু বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে করানো উচিত। দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে ফলাফল এবং পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা অনেক বৃদ্ধি পায়।
সূত্র: হেলথ