মানুষের জীবনের শেষ অধ্যায়টি নীরব, গভীর ও অত্যন্ত অর্থবহ। যখন প্রিয়জনকে কবরের নীরবতায় সোপর্দ করা হয়, তখন চোখের জল থামে না, হৃদয় ভার হয়ে আসে। ঠিক সেই মুহূর্তে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন কিছু সংক্ষিপ্ত কিন্তু অর্থপূর্ণ দোয়া— যেন বিদায়ের এই ক্ষণটিও আল্লাহর স্মরণ ও সুন্নাহর আলোয় ভরে ওঠে।
লাশ কবরে রাখার সময় এ দোয়াটি পড়ার দিকনির্দেশনা এসেছে হাদিসে—
بِسْمِ اللَّهِ وَعَلَى سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ
উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা সুন্নাতি রাসুলিল্লাহ।’
অর্থ: ‘আল্লাহর নামে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহর ওপর (মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখলাম)।’
হাদিসের আরেকটি সহিহ বর্ণনায় দোয়াটি এভাবে এসেছে—
بِسْمِ اللَّهِ وَعَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللَّهِ
উচ্চারণ: ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসুলিল্লাহ।’
অর্থ: ‘আল্লাহর নামে, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মিল্লাত বা ধর্মের ওপর (মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখলাম)।’
হাদিসের দলিল
হজরত ইবনু ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত—
كان النبي ﷺ إذا وضع الميت في القبر قال: بِسْمِ اللَّهِ وَعَلَى سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ
অর্থ: ‘নবী (সা.) যখন মৃতকে কবরে রাখতেন, তখন বলতেন— ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা সুন্নাতি রাসুলিল্লাহ।’ (আবু দাউদ ৩২১৩, তিরমিজি ১০৪৬)
হাদিসে উল্লেখিত— ‘সুন্নাহ’ ও ‘মিল্লাহ’— উভয়টির অর্থ প্রায় একই; দুটিই সহিহ ও আমলযোগ্য।
মনে রাখতে হবে, মৃতব্যক্তিকে দাফনের পর তার জন্য ক্ষমা ও স্থিরতার দোয়া করা সুন্নাহ। নবীজি (সা.) দাফন শেষ করে কবরের পাশে দাঁড়িয়ে বলতেন—
‘তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তার জন্য দৃঢ়তা প্রার্থনা করো।’ (আবু দাউদ ৩২২১)
কবরের সামনে দাঁড়িয়ে পড়া সেই অল্প কয়েকটি দোয়া শুধু শব্দ নয়— এগুলো আমাদের ইমানের সাক্ষ্য। আজ যে মাটি অন্যকে বুকে নিচ্ছে, কাল তা আমাদেরও ডাকবে। তাই প্রিয় নবী (সা.)–এর শেখানো সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে আমরা যেন বিদায়ের মুহূর্তটিকেও আল্লাহর রহমতের আশায় ভরিয়ে দিই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে উত্তম শেষ দান করুন, ইমানের সঙ্গে মৃত্যু দান করুন এবং কবরকে শান্তির বাগান বানান। আমিন।