Image description

এলাকার পুত্রবধূ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবরে শোকে ভেঙে পড়েছেন বগুড়ার নেতা-কর্মীরা। শোকের ছায়া নেমে এসেছে সেখানকার সর্বস্তরের মানুষের মাঝে।

আজ মঙ্গলবার সকালে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বগুড়া জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে ছুটে আসেন। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে সপ্তাহব্যাপী শোক পালনের অংশ হিসেবে কালো ব্যাজ ধারণ, দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন, মসজিদে মসজিদে ও এতিমখানায় কোরআন তিলাওয়াত, বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।

একই চিত্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পৈতৃক ভিটা বগুড়ার গাবতলীতেও। বিএনপির চেয়ারপারসনের মৃত্যুতে সেখানেও শোকে মুহ্যমান নেতা-কর্মীরা। সকাল থেকে নেতা-কর্মীরা গাবতলী উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে ভিড় করছেন। শোকাহত লোকজন ভিড় করছেন জিয়াউর রহমানের পৈতৃক বাড়ি গাবতলী উপজেলার বাগবাড়ী গ্রামের জিয়াবাড়িতে।

খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর শুনে সকালে জিয়াবাড়িতে ছুটে আসা নশিপুর গ্রামের কৃষক তবিবর রহমান বলেন, ‘খালেদা জিয়া হামাকেরে ব্যাটার বউ (ছেলের স্ত্রী)। প্রধানমন্ত্রী হয়েও তাই হামাগরক আপন করে আগলে রাখচিল। হামাকেরে ব্যাটার বউ ম্যালা জেল-জুলুম নির্যাতনের শিকার হচে। কিন্তু করো কাচে আপোস করেনি। ব্যাটার বউ চলে গেল, হামাগরক এখন কে দেকপি? কে হামাকেরে খোঁজ লিবি?’

দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সবগুলো জাতীয় নির্বাচনে বগুড়া-৬ (সদর) আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন খালেদা জিয়া। বগুড়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় এবং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেও এখানকার দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে তাঁর নিবিড় সম্পর্ক ছিল। তিনি স্থানীয়দের কাছে বগুড়ার ‘পুত্রবধূ’ হিসেবে পরিচিত।

দলের চেয়ারপারসনের মৃত্যুর খবর পেয়ে সকালে বগুড়া শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে জড়ো হন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার, সাবেক সহসভাপতি ফজলুল বারী তালুকদার, শহর বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক চৌধুরীসহ অনেক নেতা-কর্মীকে অশ্রুসিক্ত দেখা যায়। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ ছাড়াও মসজিদে মসজিদে কোরআন খতম এবং দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

বগুড়ার গাবতলী ও শাজাহানপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া-৭ আসন। এবারের নির্বাচনে খালেদা জিয়া এ আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন। তাঁর পক্ষে গতকাল সোমবার দুপুরে বগুড়ার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমানের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়।

গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোরশেদ মিল্টন বলেন, ‘খালেদা জিয়া শুধু আমাদের অভিভাবক ছিলেন না, গাবতলী তথা বগুড়ার পুত্রবধূ ছিলেন। ছিলেন সর্বস্তরের মানুষের আত্মার আত্মীয়। দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই নেত্রীর মৃত্যুতে বগুড়াবাসী এতিম হয়ে গেল। তাঁর নেতৃত্ব, ত্যাগ ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’

১৯৯১ সালে বগুড়া থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন খালেদা জিয়া। পরে আরও দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো বগুড়ার দুটি সংসদীয় আসন থেকে প্রার্থী হন তিনি। ওই নির্বাচন থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি বগুড়া থেকে যতগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, প্রতিবারই জিতেছেন।