ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে অবস্থিত বেগম খালেদা জিয়ার বাবার বাড়ি এখন শোকস্তব্ধ। তার স্মৃতি ধারণ করা সেই বাড়ির প্রতিটি কোণে রয়েছে তার ছোঁয়া- প্রকৃতির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা নিম গাছটি, ঘরের ভেতরে বিশ্রামের জন্য রাখা ছোট্ট খাটটি, খাবারের টেবিল এবং অন্যান্য আসবাবপত্র সবই ছিল তার হাতে সাজানো। তবে আজ সেখানে নেই বেগম খালেদা জিয়া। তার মৃত্যুতে বাড়িতে নেমে এসেছে এক অদ্ভুত নীরবতা এবং শোকের ছায়া।
শেষবার ২০০৮ সালে খালেদা জিয়া এই বাড়িতে এসে দাদা সালামত আলী মজুমদারের কবর জিয়ারত করে ফেনী-১ আসনে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছিলেন। কিন্তু আজ তার মৃত্যুতে সেই বাড়িতে, যে বাড়ি একসময় জীবন্ত ছিল তার হাসি-আলাপ, সেখানে এখন কেবল শোকের ছায়া। পরিবারবর্গের সদস্যরা শোকে মুহ্যমান, কান্নায় ভেঙে পড়েছে পুরো পরিবেশ।
বেগম খালেদা জিয়ার চাচাতো ভাই শামীম হোসেন মজুমদার বলেন, ‘বেগম জিয়া বাড়িতে আসলে বড়দের প্রতি যেমন গভীর শ্রদ্ধা দেখাতেন, তেমনি ছোটদের প্রতি ছিল অনেক ভালোবাসা ও আদর।’
চাচাতো ভাই জাহিদ হোসেন মজুমদার বলেন, ‘আমরা একটি অমূল্য রত্নকে হারালাম। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম চাবিকাঠি। তার মৃত্যুর পর দেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কখনোই পূরণ হবে না।’
পরিবারের সদস্যরা জানান, বেগম খালেদা জিয়া খুব পছন্দ করতেন বাড়ির পাশের দীঘির মাছ। ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর, হেলিকপ্টারে ফেনীতে আসার সময় তিনি একটি বিশেষভাবে দিঘির মাছ নিয়ে ঢাকায় ফিরেছিলেন।
গ্রামের বাসিন্দা রায়হান কাদের বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া শুধু আমাদের গর্ব ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলাদেশের বাতিঘর। তার মৃত্যুতে পুরো ফুলগাজীসহ ফেনী জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।’
বেগম খালেদা জিয়া তার পৈতৃক নিবাসে অনেক সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। মাদ্রাসা, মসজিদ, স্কুল ও কলেজ নির্মাণ করে এলাকার উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে ফুলগাজী ও ফেনী জেলার প্রতিটি প্রান্তে এক অদ্ভুত নীরবতা ও শোক ছড়িয়ে পড়েছে।
এছাড়া, বেগম খালেদা জিয়া ফেনী-১ আসন থেকে চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার মৃত্যু দেশের জন্য এক বিশাল শূন্যতা তৈরি করেছে, যা পূরণ করা অসম্ভব।