Image description
হাদি হত্যার বিচার দাবি

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরীফ ওসমান হাদির হত্যার বিচারের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে অবস্থান 
কর্মসূচি পালন করে ইনকিলাব মঞ্চ। তারা উপদেষ্টাদের শাহবাগে এসে হাদি হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তারের অগ্রগতি সম্পর্কে জানানোর দাবি করেন। একইসঙ্গে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে সংগঠনের নেতাকর্মী, সাধারণ শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতা। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে এসে অবস্থান কর্মসূচিতে রূপ নেয়। সারারাত শাহবাগে কাটানোর পর শনিবার দিনভর আন্দোলন জারি থাকে, ফলে পুরো সময় শাহবাগে যান চলাচল বন্ধ থাকে।

এদিন সকালে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান হাদির কবর জিয়ারত করতে এলে আন্দোলনকারীরা সাময়িকভাবে শাহবাগ ত্যাগ করে আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে অবস্থান নেন। তারেক রহমান চলে যাওয়ার পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের নেতাকর্মীরা পুনরায় মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। একই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ নিয়ে কোনো অতিরিক্ত জটিলতা তৈরি হয়নি।

অবরোধ চলাকালে শাহবাগ চত্ব্বর স্লোগান ও দেশাত্মবোধক গানে মুখরিত হয়ে ওঠে। আন্দোলনকারীরা ‘আপস না বিপ্লব, বিপ্লব বিপ্লব’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাবো’, ‘শাহবাগ না ইনসাফ, ইনসাফ ইনসাফ’, ‘এই দেশ আমার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, হাদি হত্যার বিচার চাই, দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ ইত্যাদি স্লোগান দিয়ে মুখরিত করেন শাহবাগ চত্ব্বর।
এ সময় ইনকিলাব মঞ্চের সদস্য সচিব আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবার উল্লেখ করেন যে জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়েই তিনি ক্ষমতায় এসেছেন। তিনি নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠাসহ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন বলেও উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের জনগণ তাকে ভালোবাসে দাবি করে আবদুল্লাহ আল জাবের বলেন, খুনের পেছনে কারা জড়িত, তা যদি আপনি আমাদের জানান, আমরা আপনাকে পাহারা দেবো।

স্বরাষ্ট্র ও আইন উপদেষ্টার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যদি মনে করেন আর এক মাস ক্ষমতায় আছেন এরপর ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাবেন। তাহলে আমরা বলতে চাই, কোনো উপদেষ্টাকে সেইফ এক্সিট আমরা দেবো না। কোনোভাবেই আপনারা বিদেশে পালাতে পারবেন না। এই রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করলে জনগণ এ বাংলার জমিনে আপনাদের বিচারের ব্যবস্থা করবে। তিনি দৃঢ়ভাবে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো উপদেষ্টা জনগণের সামনে এসে জবাব দেয়নি। আজকে শাহবাগে আছি, আগামীকালও যে শাহবাগে থাকবো- এটা কে বলেছে? আগামীকাল আমরা যমুনা, সংসদ ভবনে গিয়ে বসবো। ৫ই আগস্ট আপনাদের শিক্ষা হয়নি, এখন আপনাদের শিক্ষা নেয়ার পালা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, এই যে উপদেষ্টা পরিষদ রয়েছে এর মধ্যে কয়জন জুলাইতে নিহত হয়েছে? জুলাই অভ্যুত্থানে কার কী ভূমিকা ছিল? বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ইনসাফের  জন্য হাদি ভাই নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, গত ১২ই ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় চলন্ত রিকশায় গুলিবিদ্ধ হন ওসমান হাদি। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে ওইদিন রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৫ই ডিসেম্বর সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হয়। ওইখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ই ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ২০শে ডিসেম্বর লাখো মানুষের অংশগ্রহণে জানাজার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সমাধির পাশে তাকে দাফন করা হয়।