গতকাল শুক্রবার ফরিদপুর জিলা স্কুলে সংগীতশিল্পী জেমসের কনসার্টে হামলাকে ‘তৌহিদি জনতা’র তাণ্ডব বলে প্রচার করছে ভারতীয় মিডিয়া। ভারতের বাংলা সংবাদমাধ্যম এই সময় শিরোনাম করেছে- ‘তৌহিদি জনতা’র তাণ্ডবে ভেস্তে গেল রক গায়ক জেমসের কনসার্ট, ইটের ঘায়ে জখম কমপক্ষে ২০। সংবাদে বলা হয়, ‘‘শুক্রবার ‘তৌহিদি জনতা’ অর্থাৎ কট্টর ইসলামপন্থীদের হামলার নিশানায় রকস্টার জেমস ও তাঁর ব্যান্ডের অনুষ্ঠান। যার জেরে বাতিল হয়ে যায় কনসার্ট।’’
কলকাতার আরেক সংবাদ মাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশে রক তারকা জেমসের কনসার্টে ইটবৃষ্টি কট্টরপন্থীদের! পণ্ড অনুষ্ঠান, আহত বহু’। সংবাদে কথিক এক যুবকের ভাষ্যে লিখেছে, ‘‘আয়োজকরা যাই বলুন, ভিডিও আপলোড করে এক বাংলাদেশি যুবকের দাবি, যারা হামলা চালিয়েছিল তারা চায় না বাংলাদেশে কোনও সঙ্গীতানুষ্ঠান হোক। হামলাকারীরা আদপে জামাত সমর্থক বলে দাবি করেছেন অনেকেই।’’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম Zee news তাদের এক ভিডিও প্রতিবেদনে হামলাকে তৌহিদি জনতার হামলা বলে উল্লেখ করেছে। লাইভ প্রতিবেদনে মৌমিতা চক্রবর্তী নামের ওই প্রতিনিধি বলেন, ‘‘এবার তৌহিদি জনতাকে ক্ষুব্ধ করেছে জেমসের গান। জেমসের কনসার্টে গিয়ে তারা চড়াও হয়েছে। এবং তাণ্ডব চালানো হচ্ছে এই মুহূর্তে।’’
প্রতিবেদনগুলো দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে (আর্কাইভ)।
প্রকৃতপক্ষে, এই হামলার সাথে ‘ইসলামপন্থী’ কিংবা ‘তৌহিদি জনতা’ সংশ্লিষ্ট থাকার কোন প্রমাণ পায়নি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ।
ঘটনার পর প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত দর্শকের চাপে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে, পুনর্মিলনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি শুধু নিবন্ধিত প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল। অনিবন্ধিত কয়েক হাজার বহিরাগত দর্শক সংগীতশিল্পী জেমসের কথা শুনে চলে আসেন। ভেতরে ঢুকতে না দেওয়ায় তাঁরা পাশের মুজিব সড়কে অবস্থান নেন। পরে আয়োজক কমিটির পক্ষে বাইরে দুটি প্রজেক্টর লাগিয়ে দেওয়া হয়। তবে এতেও সন্তুষ্ট না হয়ে রাত সাড়ে নয়টার দিকে বহিরাগতরা দেয়াল বেয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। এতে বাধা দেওয়ায় স্কুল প্রাঙ্গণের দর্শক ও মঞ্চের দিকে একের পর এক ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন।’’
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘’জেমস আসার খবর শুনে স্কুলের সামনে ২০ থেকে ২৫ হাজার মানুষ জড়ো হয়ে যান। এত লোককে স্কুলের ভেতরের প্রাঙ্গণে জায়গা দেওয়া অসম্ভব ছিল। বহিরাগতদের ঢুকতে না দেওয়ায় হালকা বিশৃঙ্খলা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শেষ পর্যন্ত পুরো পরিবেশনা বাতিল করা হয়।’’
এক্সেও ইসলামপন্থী ও জিহাদিদের হামলা বলে প্রচার
ভারতীয় সাংবাদিক দীপ হালদার তার এক্স একাউন্টে লিখেছেন, ‘‘ফরিদপুরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রকস্টার জেমসের কনসার্টে ইসলামপন্থী মবের হামলা। জেমস বলিউডেও গান গেয়েছেন। এই উগ্র গোষ্ঠী বাংলাদেশে কোনো ধরনের সংগীত অনুষ্ঠান বা সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন হতে দিতে চায় না। জেমস কোনোভাবে সেখান থেকে পালিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন (অনূদিত)।’’
দেখুন এখানে।
দীপ হালদার ছাড়াও আওয়ামীপন্থী এক্টিভিস্ট ও ভারতীয় একাধিক এক্স একাউন্ট থেকে এই হামলার সাথে ইসলামপন্থী ও জিহাদিরা জড়িত দাবিতে প্রচারণা চলছে।
এমন কয়েকটি এক্স পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
সুতরাং ফরিদপুরে জেমসের কনসার্টে হামলার সাথে ‘ইসলামপন্থীদের’ হাত আছে দাবিতে প্রচারিত দাবিটি অসত্য।